মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি মন্ত্রী, ভাষা সৈনিক এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ এর ১৮ তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ এর উদ্যোগে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আলোচনা সভা এবং ইতিহাস থেকে জানা যায় সাবেক মন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, প্রয়াত নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ। সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় ২০০৫ সালের ২৭ শে এপ্রিল ঢাকায় বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দেশের বিশিষ্ট এই রাজনীতিবিদ।
দীর্ঘ দুর্ভোগ, জেল, জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতনের হুলিয়া মাথায় নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অসাম্প্রদায়িক চেতনার আজীবন রাজনীতি করে গেছেন আব্দুস সামাদ আজাদ। হাওরাঞ্চলের মাটি ও মানুষের নেতা এই রাজনীতিবিদ সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার ভূরাখালি গ্রামে ১৯২২ সালের ১৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেছেন।
আন্দোলনের পথ বেয়ে আসে মহান মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অসামান্য সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় দেন আবদুস সামাদ আজাদ। প্রথমে তিনি মুজিবনগর সরকারের রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও ভ্রাম্যমাণ রাষ্ট্রদূত হিসেবে দেশে দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেন। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন।
১৯৭৩ সালের ৭ই মার্চ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে আবদুস সামাদ আজাদ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দুটি আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে পট পরিবর্তন হলে ষড়যন্ত্রীদের হাতে গ্রেপ্তার হন আবদুস সামাদ আজাদ। ভাগ্য ভালো থাকায় বেঁচে গিয়েছিলেন নইলে ৩রা নভেম্বর জেল হত্যা দিবসে ৪ জনকে নয় স্মরণ করতে হতো জাতীয় ৫ নেতাকে। প্রাণে বেঁচে গেলেও ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত কারার অন্ধকারেই থাকতে হয় আবদুস সামাদ আজাদকে।
ভাষা আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের পর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও মাঠে ছিলেন শুরু থেকেই। এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে সুনামগঞ্জ ৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই সময় তিনি জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন । ওই সময় আবার তিনি পান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব। সাফল্যের সঙ্গে তিনি তার সে দায়িত্ব পালন করেন।
২০০১ সালের পরবর্তী নির্বাচনেও তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায়ই ২০০৫ সালের ২৭শে এপ্রিল ঢাকায় বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আবদুস সামাদ।
জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ এর ১৮ তম মৃত্যু বার্ষিকীতে বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল )উপলক্ষে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ এর উদ্যোগে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে এ উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ব সাধারণ সম্পাদক নোমান বখত পলিন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি রেজাউল করিম শামীম, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শংকর চন্দ্র দাস, আওয়ামীলীগ নেতা এডভোকেট চান মিয়া, এডভোকেট পীর মতিউর রহমান, এডভোকেট নজরুল ইসলাম সহ অন্যান নেতৃবৃন্দ।
বক্তারা বলেন আব্দুস সামাজ আজাদের জীবন এবং সংগ্রাম থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে, তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।