ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মচকে যাওয়া অর্থব্যবস্থা থেকে কি ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব?

আনোয়ার সজীব, লেখক ও কলামিস্ট

একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের অন্যতম সূচক হলো সে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সুশৃঙ্খল ও পরিকল্পিত উপায়ে না হলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আর অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার। উন্নত আর্থসামাজিক অবকাঠামোর পিছনে যেমন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন, তেমনি স্থিতিশীল রাজনীতির জন্যেও প্রয়োজন একটি সুবিন্যস্ত অর্থনৈতিক অবকাঠামো। যে সকল দেশের অর্থনীতির ভিত্তি যত বেশি মজবুত, তাদের রাজনৈতিক চর্চাও ততোটা নান্দনিক। তবে কোনো দেশ-ই একদিনে উন্নত অর্থনীতির তকমা গায়ে লাগাতে পারে নি। যেমন, ১৯৪৯ এর পূর্বে চীনের অর্থনীতি যে খুব শক্তিশালী ছিলো, তা বলা যায় না। কিন্তু মাও সে তুং এর ‘গণপ্রজাতন্ত্রী চীন’ প্রতিষ্ঠার পর থেকে হুহু করে পাল্টে যেতে থাকে চীনের অর্থনীতি। এর পিছনে যে কারণ টা লক্ষনীয়, সেটা আমাদের দেশের ক্ষেত্রে নেই বললেই চলে। চলুন তাহলে দেখা যাক-

 

এক, দল নয় বরং দেশপ্রেম: গণচীন এর মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয় দেশপ্রেম। ফলে তারা দেশের জন্য যেকোনো কিছু বিসর্জন দিতে প্রস্তুত, দল তাদের কাছে মুখ্য বিষয় নয়। তারা দেশকে সাজাতে জাতিগত হানাহানি বাদ দিতে সক্ষম হয়েছে, কিন্তু আমরা পারিনি! ‘আমাদের কাছে দেশের চাইতে দল বড়, আর দলের চাইতে আমি বড়’ – এই নীতিতে ই আমরা ধাবিত হই প্রতিনিয়ত।

দুই, স্বজাতিবোধ ও রাজনৈতিক সচেতনতা: শুধু চীন নয়, বরং উন্নত সকল দেশেই স্বজাতের প্রতি একটা বিশেষ টান কাজ করে, যেটা আমাদের ক্ষেত্রে নেই বললেই চলে। হয়তো বলবেন যে, অনেক আছে ; কিন্তু আমি বলবো সেটা আবেগ কিন্তু স্বজাতিবোধ নয়। আমি মরলে আপনি আমার লাশটা কাঁধে নিয়ে যাবেন, এটা নিছক আবেগ ছাড়া কিছু ই নয়। বরং আমাকে যেকোনো স্বার্থের বিনিময়ে খুন করতে রাজি না হওয়া টা-ই হলো স্বজাতিবোধ। অর্থাৎ অন্যের প্ররোচনায় পড়ে সামান্য স্বার্থের বিনিময়ে অন্য জাতিকে প্রশ্রয় দেওয়া টা-ই হলো বিশ্বাসঘাতকতা, যা কেবল আমাদের মধ্যে ই প্রবল। তাই আমরা অনেক পিছিয়ে পড়ার কাতারেই রয়ে গেছি।

>>>  সয়াবিন তেলের দাম আবার বাড়ল,হয়েছে ১৯৯ টাকা

তিন, প্রচুর কর্ম করার মানসিকতা: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন-

“ভদ্র মোরা, শান্ত বড়ো, পোষ মানা এ প্রাণ,
বোতাম-আঁটা জামার নিচে শান্তিতে শয়ান।”

এখানে রবীন্দ্রনাথ আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যেটা সুনিপুণ ভাবে তুলে ধরেছেন। আমরা একদিনের খাবার জোগাড় করতে পারলেই খেল খতম! কে ধারে কর্মের ধার? কিন্তু একবেলা কাজ করে যদি একদিনের আহার জোটানো যায়, তবে দু’বেলা কাজ করে কী দু’দিনের আহার জোগাড় হবে না? বাকি বেলা কাজ করে কি পরের দিনের খোরাকি টা জমিয়ে রাখা সম্ভব নয়? তা কেন ভাই!  আমরা তো বাঙালি, অতি বড়ো মাপের জাতি। আমরা যদি দিনের শেষ ভাগটায়ও কাজ করি তাহলে মোড়ের/বাজারের চায়ের দোকানগুলো গরম করবে কারা? আর ওখানে বসেই সারা বিশ্বের রাজনীতি উদ্ধার করবে কারা? আর সেখান থেকেই তৈরি হয় যতোসব ঝুট-ঝামেলার নিকৃষ্ট উদাহরণ, যা কেবল আমরাই চর্চা করতে ভালোবসি।

চার, বুঝি কেবল অর্থের মূল্য, সময়ের নয়: আমরা কেবল অর্থের মূল্যটা-ই দিতে জানি, কিন্তু তা অপেক্ষা যে সময়ের মূল্য আরও বেশি তা আমরা একদম ই বুঝতে চাই না। যেমন, আমাদের দেশে মিছিল করানোর জন্য দু’শ টাকা আর একশ টাকার এক প্যাকেট বিরিয়ানি দিলেই সারাদিনের কামলা পাওয়া সম্ভব। কিন্তু ঐ ব্যক্তি ই যদি ততোটুক সময় উৎপাদনের পিছনে ব্যয় করতো তাহলে সে কমপক্ষে ৬০০-৭০০ টাকা উপার্জন করতে পারতো, আর সাথে সাথে দেশের ও উৎপাদন বৃদ্ধি পেতো। কিন্তু তা নয়, আমরা তো ফাউলামি করে দুশো পেলেই খুশি। আর এজন্যই এ জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়।

উপরোক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও অনেক কারণ আছে, যার দরুন আমরা বাঙালি! আমরা সবার থেকে আলাদা জাতি!

যদি আমরা জাতিগত ভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শপথ নিতে পারি যে- আমরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে, স্বজাতের প্রতি সদয় থেকে, নিজের পাশাপাশি দেশের স্বার্থে কর্মঘণ্টা বাড়িয়ে পরিশ্রম করে, দেশের স্বার্থে আপোষহীন থেকে কাজ করে যাবো’ তাহলেই উন্নয়নের দিকে আমাদের অর্থনীতির চাকা ঘুরবে চারগুণ শক্তিতে। ফলে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা স্থিতিশীল হয়ে উঠবে, আর আমরা হয়ে উঠবো উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের নাগরিক। নতুবা যা তা-ই!

>>>  দুই আসনের মনোনয়ন পত্র নিলেন জিএম কাদের ও তাঁর স্ত্রী

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

সর্বশেষ

এই বিভাগের সর্বশেষ

সর্বশেষ :