ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী কাজ করলেও কেন ভারতকে ছাড়তে চায় না ওয়াশিংটন

যুক্তরাষ্ট্র প্রায় আড়াই দশক ধরে ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করে চলছে। এই সময়ের মধ্যে যত প্রেসিডেন্ট এসেছেন, তাঁদের সবাই ভারতের অগ্রগতিকে উৎসাহিত করেছেন। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারতকে মোটামুটি তাঁরা সব সময় অগ্রাধিকার দিয়ে যাচ্ছেন।

৯ এবং ১০ সেপ্টেম্বর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে জি–২০ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই অনুষ্ঠানে বেশ প্রফুল্লচিত্তে থাকছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে দুই দেশের এই উষ্ণ সম্পর্কের মধ্যেও মাঝেমধ্যে তিক্ততা ভর করে। এমনকি মার্কিন কর্মকর্তারাই স্বীকার করছেন, ভারতের স্বার্থ নিয়ে অনেক সময় ওয়াশিংটনের সাথে মতভেদ দেখা যায়।

জি–২০ সম্মেলন এমন একসময় হচ্ছে, যে বছর ভারত জনসংখ্যায় প্রতিবেশী চীনকে ছাড়িয়ে গেছে। এখন ভারতই বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ। এই বছরই আবার ভারত তাদের সাবেক ঔপনিবেশিক শাসক ব্রিটেনকে হটিয়ে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এসব অর্জনের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বেশ উৎসবের মেজাজে এবার আমেরিকা, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন।
জি–২০ সম্মেলন সামনে রেখে ব্রুকিং ইনস্টিটিউশনের সিনিয়র ফেলো তানভি মদন বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার মাধ্যমে এখন ভারতকে বিশ্বমঞ্চে বড় শক্তি হিসেবে জানান দিতে চান। তাঁর সেই সময়টা এসেছে বলে মনে হয়।’

যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারতকে তাদের স্বভাবজাত মিত্র বলে মনে করে। এই দেশই পারে স্বেচ্ছাচারী এবং ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠা চীনকে মোকাবিলা করতে। ইতিমধ্যেই এই দুই দেশের মধ্যে সীমান্তের বিতর্কিত বিভিন্ন অংশে সংঘর্ষ হয়েছে।

চীনের সাথে ভারতের উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক দুই দেশকে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে। আবার এই ভারতই কখনো কখনো যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার ইস্যুতে তাদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। যেমন ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার মার্কিন উদ্যোগকে প্রত্যাখ্যান করে পুরোনো মিত্র মস্কোর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখছে দিল্লি।

>>>  পেন্টাগনের ফাঁস হওয়া নথি থেকে যেসব তথ্য মিলল

জি–২০ সম্মেলনে ভারত ভূরাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে খুব বেশি নাড়াচাড়া করার পক্ষে নয়। বরং সেই চায় উন্নয়ন বিশেষ করে ঋণ মওকুফ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়ে সব দেশ যেন ঐকমত্য হয়।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোও অভিযোগ করছে, হিন্দুত্ববাদীরা সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালাচ্ছে ও সরকার সমালোচক গণমাধ্যমকে হয়রানি করছে। এমন পরিস্থিতিতে হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতার অধীনে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অবনতি হলেও পশ্চিমারা নরেন্দ্র মোদিকে কাছে টেনে নিচ্ছেন।

পশ্চিমএবংদক্ষিণেরমধ্যেসেতুবন্ধ

পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তা হিসেবে আলিসা আইরেস ওয়াশিংটনের সাথে দিল্লির সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি বলছিলেন, স্নায়ুযুদ্ধকালে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় দেশ হিসেবে ভারত এখনো ‘প্রচণ্ডভাবে স্বাধীন’ থাকতে চাইবে—এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

আলিসা বলেন, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মতভেদের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অসংগতি দেখে না। কারণ, এই দেশটি ‘সারা দুনিয়ার সবার সাথে সুসম্পর্ক’ রাখতে চায়।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির এলিয়ট স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের ডিন আলিসা বলেন, ভারতীয় নেতৃত্বের ভূমিকা এখন দেখার বিষয়। দেখার বিষয়, জি–২০–এর সভাপতি হিসেবে ভারত বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর সাথে বৈশ্বিক দক্ষিণের সেতুবন্ধ গড়তে কতটা প্রকাশ্যে ভূমিকা রাখতে পারে।

বাইডেন প্রশাসন বারবার মোদির নেতৃত্বকে কুর্নিশ করেছে। তারা বলেছে, জি–২০–এর সাফল্য অর্জনে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির প্রতিষ্ঠানের সংস্কারসহ তারা ভারতের সাথে কাজ করবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

সর্বশেষ

এই বিভাগের সর্বশেষ

সর্বশেষ :