ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে বর্তমান প্রজন্ম, এ সংকেত আগেই দিয়েছিলো রাশিয়া

নিঝুম মজুমদার, ব্যারিস্টার এ্যন্ড সলিসিটর

আমি নিশ্চিত আপনারা ভুলে গেছেন ২০২৩ সালের ১৫ ডিসেম্বরের কথা। এই দিনে আচমকাই রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া যাখারোভা এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বললেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে যদি শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসে তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তার সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করবে শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাতের জন্য।

যুক্তরাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা বলতে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বললেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘এরাব স্প্রিং’ অর্থাৎ আরব বসন্তের মতো একটি সিনারি তৈরি করবে। যে আরব বসন্ত আনতে ব্যাবহার করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের, কলেজ,স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের। ডোনাল্ড লু ও পিটার ডি হাস তাদের বন্ধুত্বের সময়কাল প্রায় ৩১ বছর ।বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ছিলেন পিটার ডি হাস। আপনারা নিশ্চই সেটা ভুলে যাননি। এই পিটার হাসকে যখন বাংলাদেশে নিয়োগ দেয়া হয় তখন তার উপর স্পেশাল এসাইনমেন্ট ছিলো ইন্দো প্যাসিফিক রিজিয়নে চায়নার প্রভাবকে হ্রাস করা এবং বাংলাদেশকে সদস্য কিংবা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হিসেবে যুক্ত করা।

কিন্তু পিটার ডি হাস কোন সাফল্য ঘরে তুলতে পারেননি। এরপর বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে কয়েকবার এসেছিলেন ডোনাল্ড লু। নানাবিধ চেষ্টা চরিত্র করেছিলেন ইলেকশন নিয়ে। সাফল্য পাননি। যুক্তরাষ্ট্র সব সইতে পারে কিন্তু ফরেন পলিসিতে অপমান মনে রাখে হাজার বছর। যুক্তরাষ্ট্র ফরেন পলিসিতে বাংলাদেশের নিকট মারাত্মক ভাবে পরাজিত হয়। এই অপমান তারা সহ্য করে নেবে এটা ভাবা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়। পিটার হাস ও ডোনাল্ড লু অর্থাৎ মার্কিন প্রশাসনের কাছে বাংলাদেশ একটি পরাজয়ের নাম।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই পরোক্ষভাবে তাঁর মৃত্যুর কথা বলেন।কারন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশোধ স্পৃহার কথা জানেন। তিনি বলেন মৃত্যুকে তিনি ভয় পান না। কেন বলেন, আমরা এখন তা বুঝতে পারি। রাশিয়া ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩ সালে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলো যে নির্বাচনের পর বাংলাদেশে ছাত্র-বিক্ষোভ হবে এবং আরব বসন্তের মত অবস্থা তৈরী হবে।

>>>  বেঁচে আছেন প্রিগোজিন, বললেন সব ঠিক আছে

চলমান জুলাইতে এসে এই বিক্ষোভের দেখা আমরা পেলাম। এর আগে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সি আই এ তাদের সমস্ত সহযোগীদের মাঠে নামাবার প্রস্তুতি সম্পন্ন করে দিয়েছিলো। এই সহযোগীরা কেউ কেউ প্রতিষ্ঠান, কেউ কেউ ব্যাক্তি। লক্ষ্য করার বিষয় হলো, ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনা-

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা কিভাবে কোটার বিষয়টিকে নজরে রেখেছিলো। কিভাবে আদালতে দায়ের করা রিটের দিকে নজর রেখেছিলো। কিভাবে হাইকোর্টের দিকে নজর রেখেছিলো। কিভাবে এই বিষয়টিকে একটি ক্ষোভের কন্টেন্ট হতে পারে, তা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলো। রাষ্ট্র নিশ্চই এই রিট দায়ের, রিটের পরে রায়, হাইকোর্ট সমস্ত কিছুই ক্রনোলজিকালী মিলিয়ে ও খতিয়ে দেখবেন এবং প্রতিটি যায়গায় তথ্য সংগ্রহ করবেন।

মার্কিনিদের ষড়যন্ত্রে এই প্রজন্মের সন্তানেরা পা দিয়েছেন কোন কিছু না বুঝেই। আসলে এই গভীর ডিপ্লোম্যাসি তাদের বোঝার কথাও নয়। আমাদের তরুনেরা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, মুক্তিযুদ্ধের পরের সময় দেখেনি। মার্কিন-পাকিস্তান ষড়যন্ত্রে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড এবং তার পরবর্তী ঘটনাও খুব জানে বলে আমার অন্তত মনে হয়না। একটা সময় মানুষ বুঝতে পেরেছিলো যে, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড কি কি হিসেব নিকেশের মধ্যে হয়েছিলো এবং মার্কিন-পাকিস্তানি সংস্থাগুলো আসলে কি চেয়েছিলো। কিন্তু ততদিনে যা ক্ষতি হবার এই দেশের হয়ে গিয়েছিলো।

এবারো তারা এখন যা বুঝতে পারছেনা, বুঝবে কুড়ি বছর পরে। তখন মাথা চাপড়াবে আর কাঁদবে কিন্তু কিছু করার থাকবে না। তারা বিলাপ করবে, আক্রান্তবোধ করবে এবং বলতে থাকবে আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। কিন্তু কেউ তাদের বাঁচাতে আসবে না। প্রজন্ম আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারে, কই আমরা তো মিছিলে গিয়েছি, সভাতে গিয়েছি রায় জেনে। এখানে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা আসবে কিভাবে?

এই যায়গাতেই তো অংক। ভাবতে হবে এখানেই।

কেন রিট হয়েছে? হাইকোর্টের রায় কেন এমন হলো? কারা রাস্তায় নেমেছিলো আগে? কেন নেমেছিলো আপীলেট ডিভিশানের রায়ের আগে? কারা পানি দিলো? কারা নেট দিলো? কারা এত সাহায্য করলো নেপথ্যে? কারা কাছে এসে উষ্কে দিলো? সমন্বয়কদের গত ৫ বছরের হিসেব নিকেশ কি? কারা এরা? কোন পত্রিকা এত কাভারেজ দিলো শুরুতে? কেন দিলো? কারা ফোন করে বার বার খোঁজ নিয়েছে? কারা সব ধরনের সাহায্য দেয়ার জন্য উন্মুখ হয়েছিলো? কেন ছিলো?

>>>  সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা হারিয়েছে

শেখ হাসিনাকে প্রজন্ম ভুল ভাবে অনুবাদ করলে সেটার একটা লম্বা দায় এই অস্থির জেনারেশনকেই চুকোতে হবে পরবর্তীতে। আমাদের কৈশোরে আমাদের বাবা ছিলো আমাদের অন্যতম প্রধান শত্রু। বন্ধুদের সাথে মিশতে দেয়না, কনসার্টে যেতে দেয়না, বন্ধুদের সাথে ট্যুরে যেতে দেয়না, একা ঘর থেকে বের হতে দেয়না। কত অভিযোগ…

আজ সব বুঝি। সব অনুধাবন করি। কিন্তু আব্বার হাত ধরে দেখি তাঁর বয়স ৮৩। সময় গিয়েছে চলে স্রোতের মতন…!

সংকলিত-

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

সর্বশেষ

এই বিভাগের সর্বশেষ

সর্বশেষ :