যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে প্রথমবারের মতো শতকণ্ঠে বরণ করে নিয়েছে নতুন বছরকে। নতুন ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশি অভিবাসীরা। বৈশাখের প্রথম দিন মানবতার মঙ্গল কামনা করে হয়েছে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা।
ভোর ৬টা ২০ মিনিটে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শতাধিক শিল্পীর অংশগ্রহণে আবহমান বাঙালি সংস্কৃতি পরিবেশনার মধ্য দিয়ে বরণ করা হয়েছে নতুন বাংলা বছরকে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেট থেকে এই আয়োজনে যুক্ত হয়েছেন বাংলাদেশি অভিবাসীরা।
এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড আয়োজিত ঐতিহাসিক এই বর্ষবরণের আহ্বায়ক একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা লায়লা হাসান। বাংলাদেশ থেকে এই আয়োজনে যোগ দিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেছেন স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
আয়োজক সংগঠন এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল লিটনের সঞ্চালনায় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু হয় লায়লা হাসান প্রীতির সম্ভাষণ নিয়ে। বক্তব্য দেন শত কণ্ঠে বর্ষবরণের পরিচালক মহিতোষ তালুকদার তাপস ও এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের সভাপতি বিশ্বজিত সাহা।
নিউ ইয়র্কে শতকণ্ঠ ১৪৩০ বাংলা বর্ষবরণের আহ্বায়ক লায়লা হাসান নিজে একক নৃত্য পরিবেশন করেন। তিনি বলেন, ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে বাঙালিদের সবচেয়ে বড় প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শত শত প্রবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে তা আবারো প্রমাণিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বাঙালিদের আয়োজনে প্রথমবারের মতো টাইমস স্কয়ারে হয়েছে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এটি উদ্বোধন করেন। তিনি বলেছেন, টাইম স্কয়ারের শত কণ্ঠে বর্ষবরণ আয়োজনটি অনবদ্য। প্রবাসজীবনের এতো প্রতিকূলতার পরেও বৈশাখের প্রথম দিনে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রবাসীদের বিপুল অংশগ্রহণ ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। আমার চাওয়া-প্রতিবছর এভাবেই বৈশাখ উদযাপিত হোক নিউ ইয়র্কসহ পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে।
এই বছর পহেলা বৈশাখ উদযাপন ব্যাহত করতে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সাম্প্রদায়িক মানুষ আদালতে মামলা করেছিলেন। মামলায় তাদের পরাজয় হয়। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এই আয়োজন শুভর জয় হিসেবে দেখছেন আয়োজক সংগঠন এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের সভাপতি বিশ্বজিত সাহা। তিনি বলেছেন, বাঙালি জাতি কখনো ধর্মান্ধতার কাছে পরাজিত হয়নি। ১৩ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট এই আয়োজন স্থগিত করার মামলা খারিজ করে দেয়। বর্ণাঢ্য এই আয়োজন রমনার বটমূলের আদলে জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় ১৫ এপ্রিল সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে। থাকবে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলা এবং ঈদ বাজার। এটি উদ্বোধন করবেন নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস।
আয়োজক সংগঠন এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল লিটন বলেন, প্রতিবছর বৈশাখের প্রথম দিন বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হবে নিউ ইয়র্কের টাইম স্কয়ারে। থাকবে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রাও।
শত শত বাঙালির স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখে অভিভূত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায়। তিনি বলেছেন, বিশ্বব্যাপী বাঙালি সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে ইতিহাস সৃষ্টিকারী এবারের পহেলা বৈশাখ উদযাপন যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। সবার অংশগ্রহণে সর্বজনীনভাবে এমন বর্ণাঢ্য আয়োজন আমাদের আগামী প্রজন্মকে বাংলা সংস্কৃতির প্রতি উদ্বুদ্ধ করে থাকবে।