ঢাকা, রবিবার, ১৩ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাংলাদেশের ঋণ বেড়েছে সাড়ে তিন গুণেরও বেশি: বিশ্বব্যাংক

গত ১২ বছরে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে সাড়ে তিন গুণেরও বেশি। এরমধ্যে ২০২১ থেকে ২০২২ সাল- এই এক বছরে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

বিশ্বব্যাংকের ওয়ার্ল্ড ডেট রিপোর্ট বা বৈশ্বিক ঋণ প্রতিবেদন ২০২৩ এর তথ্যানুসারে, ২০২২ সাল শেষে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৭ দশমিক শূন্য ১২ বিলিয়ন, বা ৯ হাজার ৭১২ কোটি ডলার। ২০২১ সালে যা ছিল ৯১ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ১৪৭ কোটি ডলারের বেশি। সেই হিসাবে এক বছরে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি।

২০২১ সালে বিশ্বের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর সম্মিলিত বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন বা ৯ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার। পরের বছর ২০২২ এ ঋণের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৯ ট্রিলিয়ন বা ৯ লাখ কোটি ডলারে। অর্থাৎ এই সময়ে সম্মিলিতভাবে এসব দেশের বিদেশি ঋণ কমেছে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ।

২০১৫ সালের পর ২০২২ সালেই প্রথম নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে নিট ঋণ প্রবাহ কমেছে। ২০২২ সালে এসব দেশ ঋণ পেয়েছে ১৮৫ বিলিয়ন বা ১৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। ২০২১ সালে যা ছিল ৫৫৬ বিলিয়ন বা ৫৫ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। অর্থাৎ এই এক বছরে নিট ঋণ প্রবাহ কমেছে ৬৬ দশমিক ৭২ শতাংশ। এর ফলে গত বছর স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি উভয় প্রকৃতির ঋণই কমেছে।

বিশ্বব্যাংকের বৈশ্বিক ঋণ প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০১০ সালে বাংলাদেশের মোট বিদেশি ঋণ ছিল ২৬ দশমিক ৫২ বিলিয়ন (২ হাজার ৬৫২ কোটি) ডলার। ২০১৮ সালে যা ৫৭ দশমিক ১২ বিলিয়ন (৫ হাজার ৭১২ কোটি)  ডলার ও ২০২২ সালে তা ৯৭ বিলিয়ন (৯ হাজার ৭০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে যায়।

>>>  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৭ জনের মৃত্যু, ভর্তি ১৯১২

বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১০ সালের পর ১২ বছরে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে তিন গুণের বেশি। ২০২২ সালে ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক বিনিয়োগের গতিপ্রকৃতি বদলে যাওয়ার পরেও বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে। দেশের ঋণ নিয়ে একধরনের উদ্বেগ তৈরি হলেও সামগ্রিক ঋণ-জিডিপির অনুপাত এখনো ৪০ শতাংশের নিচে। তবে বিদেশি ঋণের অর্থে যেসব প্রকল্প হচ্ছে, সেখান থেকে বিদেশি মুদ্রা আয়ের তেমন সুযোগ নেই। সেই সঙ্গে টাকার যেভাবে অবমূল্যায়ন হচ্ছে, তাতে সরকারের ঋণ পরিশোধের ব্যয় বেড়ে যাবে। এর সঙ্গে রাজস্ব আয় আনুপাতিক হারে না বাড়লে ঋণ পরিশোধ নিয়েও শঙ্কা থেকে যায় বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২ সালে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোকে রেকর্ড ৪৪৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ৪৪ হাজার ৩৫০ কোটি মার্কিন ডলার বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়েছে। গত বছর এবং এ বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির গতি কম। এই পরিস্থিতিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণের কিস্তি হিসেবে পরিশোধ করার কারণে এসব দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বাজেট কমে গেছে।

এছাড়াও আইডিএ থেকে যেসব দেশ ঋণ পাচ্ছে, তাদের ঋণের বোঝা আরও বাড়ছে। ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে তাদের ঋণের বোঝা চার গুণ হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের দৃষ্টিতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, এই সময়ে বন্ডের সুদহার বৃদ্ধির কারণে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলো থেকে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ তুলে নেয়া। এই পরিস্থিতিতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হচ্ছে, বিশ্বব্যাংক তা পূরণের চেষ্টা করছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০২২ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যে ১১৫ বিলিয়ন বা ১১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের নতুন অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে, তার অর্ধেক দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এছাড়াও নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ঋণ প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে কয়েকটি বিষয় চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি। মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এসব দেশের সরকারি ও বেসরকারি বন্ড থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে যাওয়ার বিষয়টিকে। বলা হয়েছে, বন্ড কমে যাওয়ায় বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা এসব দেশ থেকে ১৮৯ বিলিয়ন বা ১৮ হাজার ৯০০ কোটি ডলার তুলে নিয়েছেন।

>>>  আ. লীগের ৮১ সদস্যের কমিটিতে স্থান পেলেন যারা

অন্যদিকে, মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে বিশ্বের সব দেশ নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। এতে ঋণের সুদহার বেড়েছে। সে জন্য নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোর ঋণ করার ব্যয় বেড়েছে। আরেকটি বিষয় হলো, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে বন্ডের সুদহার বেড়ে যাওয়া। বিনিয়োগকারীরা এখন নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ থেকে বিনিয়োগ তুলে নিয়ে বন্ডে এসব বিনিয়োগ করছেন।

এই প্রক্রিয়ায় নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলো থেকে ১২৭ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ১২ হাজার ৭১০ কোটি ডলার চলে গেছে। ২০১৯-২১ সালে এসব দেশে প্রতিবছর গড়ে ২০২ বিলিয়ন বা ২০ হাজার ২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছেন বিনিয়োগকারীরা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

সর্বশেষ

এই বিভাগের সর্বশেষ

সর্বশেষ :