রাজশাহীতে কয়েক দিন ধরে কড়া রোদ পড়ছে। আবহাওয়াবিদদের ভাষায়, এটি তীব্র ‘তাপপ্রবাহ’। এরই মধ্যে মানুষের চলাফেরার কষ্ট হচ্ছে। তবে ধানচাষিরা বলছেন, এই মুহূর্তে বৃষ্টি না হওয়াই ভালো। এই খরা আর কয়েক দিন থাকলে তাঁরা সহজে পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবেন।
রাজশাহীর অন্যতম ফসল আমেরও এখন আর তেমন খরায় ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি নেই বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। রাজশাহীতে ৪ মে সর্বশেষ বৃষ্টি হয়েছে।
রাজশাহীতে নিয়মিত আবহাওয়ার খবর সংগ্রহ করেন শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগার এবং জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা জাহাঙ্গীর শাহ। তিনি বলছেন, এই সময়ে বৃষ্টি হলে ধানচাষিরা বিপাকে পড়বেন। এখন ধানের পাশাপাশি খড়ের দাম অনেক বেশি। বৃষ্টি হলে খড় নষ্ট হয়ে যাবে। এতে ধানচাষিদের ক্ষতি হবে। এখন যে রোদ হচ্ছে, তাতে ধান কাটার যেমন সুবিধা হচ্ছে, তেমনি খড়ও শুকিয়ে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারছেন চাষিরা। আর আমচাষিদের এখন খরায় আর ভয় নেই। মাঝে বৃষ্টি হয়ে গেছে। এখন খরায় আম ঝরারও ভয় নেই।
রাজশাহীর গোদাগাড়ীর কৃষক মনিরুজ্জামান বলেন, শুধু যে জমিগুলোতে সবজি আছে, তীব্র তাপপ্রবাহে সেগুলোর কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে। তা ছাড়া এই সময়ে প্রধান দুটি ফসল আম এবং ধানের কোনো রকম ক্ষতি হবে না।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বড় আমচাষি আশাফুদৌলা জানান, এই সময় আমে হপার পোকার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। হপারের বর্জ্যে আমের রং কালচে হয়ে যাচ্ছে। হপার দমন করতে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন।
অবশ্য কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন ভিন্ন কথা। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোজদার রহমান বলেন, ‘হপার দমনের জন্য আমাদের খুবই নির্ভরযোগ্য ওষুধ রয়েছে। আর বৃষ্টি হলে হপারের আক্রমণ আরও বাড়তে পারে।’
রাজশাহী ফল গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, এই খরায় আমের আর কোনো সমস্যা নেই।
এই খরার মধ্যে মাঠে কষ্ট হলেও ধানচাষিরা এবার খুশি। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার গোলাই গ্রামের কৃষক আনিসুজ্জামান বলেন, এবার তাঁর ১২ বিঘা জমিতে ধান আছে। তিনি ধান কেটে খড় মজুত রাখেন। পরে ভালো দামে বিক্রি করেন। ধান কাটার মৌসুমে বৃষ্টি হলে খড় নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তিনি বলেন, এক বিঘা জমিতে প্রায় ২ হাজার আঁটি খড় হয়। কিছুদিন রেখে বিক্রি করলে এ খড় ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। বৃষ্টি হলে খড় বিক্রির লাভ আর পাওয়া যায় না। খরার কারণে একটু কষ্ট হচ্ছে। তবে ধান কাটার জন্য এটিই ভালো আবহাওয়া।
গোদাগাড়ীর ধামিলা গ্রামের চাষি মনিরুল ইসলাম বলেন, কৃষকেরা চাচ্ছেন, বৃষ্টি ছাড়া এই রকম সাত-আট দিন থাকুক। তাহলে তাঁরা ভালোয় ভালোয় ধান আর খড় গুছিয়ে নিতে পারবেন।