ইয়াসির আরাফাত, রাবি প্রতিনিধি, স্লোগান
সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে নিয়মিত বিক্ষোভ করছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে, এই আন্দোলনটিকে তারা সাংস্কৃতিক রূপদান করেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে বিভিন্ন ধরনের নাটক উপস্থাপন, অভিনয়, গান ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে অভিনব উপায়ে সরকারের কোটা ব্যবস্থার পুনর্বহালের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে তারা। সাথে সাথে ‘কোটা না মেধা, কোটা কোটা’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘১৮-এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘মেধাভিত্তিক নিয়োগ চাই, প্রতিবন্ধী ছাড়া কোটা নাই’, ‘মেধাবীদের কান্না, আর না আর না, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’ ইত্যাদি স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো ক্যাম্পাস। এক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ে সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ লক্ষণীয়। এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে তারা। শিক্ষকরা পেনশন স্কিম “প্রত্যয়ের” বিরুদ্ধে তাদের দাবি অর্জন করে ক্লাসে ফিরলেও শিক্ষার্থীরা সার্বজনীন কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষে ফিরবে না বলে জানিয়েছে তারা। আজ রোববার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে আয়োজিত এক সাংস্কৃতিক প্রতিবাদী সমাবেশ থেকে তারা এই ঘোষণা দেয়। প্রকৃতপক্ষে, ৪ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
তাদের দাবিগুলো এরকম:
এক. ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে। পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোয় মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে।
দুই. যাদের কোটা আছে জীবনদ্দশায় একবারই কোটা ব্যবহার করতে পারবে।
তিন. প্রতি ১০ বছর পর পর জনশুমারির সঙ্গে অর্থনৈতিক সমীক্ষা করতে হবে যাতে আমরা বুঝতে পারি কোটার প্রয়োজনীয়তা কেমন এবং কোটার মূল্যায়ন করা।
চার. দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
সরকার পক্ষ থেকে তাদের দাবি আদায় সম্পর্কিত কোন সুসংবাদ না আসায় পরবর্তী কর্মসূচিতে রেললাইন অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে রাবি শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে দেওয়া পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। ২০২১ সালে ওই পরিপত্রের ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল হওয়ার অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্টে রিট করেন। মূলত, গত ৫ জুন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এরই প্রেক্ষিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আজ উত্তাল যাতে ২০১৮ সালের মতো আবারও সেই পরিপত্র বৈধ ঘোষণা এবং সংস্কার করা হয়।