চীনে রেকর্ড রাখা শুরুর পর থেকে গত কয়েক দিনে ১৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে। গতকাল বুধবার বেইজিংয়ের আবহাওয়া কর্তৃপক্ষ এই তথ্য দিয়ে জানিয়েছে। প্রবল বর্ষণে গত কয়েক দিনে ২০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আরো অন্তত ১৩ জন নিখোঁজ রয়েছে।
নিহতদের মধ্যে ১১ জনই রাজধানী বেইজিংয়ের বাসিন্দা। গত সপ্তাহের প্রচণ্ড ঝড় ‘সুপার স্টর্ম’ আখ্যা পাওয়া দকসুরির অবশিষ্ট প্রভাবে গতকাল পর্যন্ত টানা পঞ্চম দিন প্লাবিত হয় বেইজিংয়ের বিভিন্ন এলাকা। এরই মধ্যে দেশের পূর্ব উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে আরেক সামুদ্রিক ঝড় বা টাইফুন। তিন সপ্তাহের মধ্যে এটি হতে পারে চীন তথা পূর্ব এশিয়ায় আঘাত হানা তৃতীয় ঝড়।
ঝড়টি এরই মধ্যে প্রতিবেশী জাপানের দক্ষিণের ওকিনাওয়া দ্বীপেও ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছে। বেইজিংয়ের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, ‘চলতি ঝড় চলাকালে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের পরিমাণ রেকর্ড হয়েছে ৭৪৪.৮ মিলিমিটার বা ২৯.৩ ইঞ্চি। এর আগের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ছিল ১৮৯১ সালের ৬০৯ মিলিমিটার।’
চীনে চলতি সপ্তাহে গতকাল পর্যন্ত ৪০ ঘণ্টা বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা জুলাই মাসের পুরো গড়ের বৃষ্টিপাতের সমান।
মূলত ঝড় ডাকসুরির কারণেই প্রবল বৃষ্টি হয়েছে।
চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, টানা ভারি বৃষ্টির জেরে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বেইজিংয়ে। বন্যা পরিস্থিতির কারণে সেখানকার বহু রাস্তার ব্যাপক ক্ষয় – ক্ষতি হয়েছে। উপড়ে পড়েছে অনেক গাছ। বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
বেইজিং ও নিকটবর্তী শহর তিয়ানজিন ও ঝুওঝোতে ভারি বৃষ্টির জেরে পানিবন্দি হয়েছে একাধিক এলাকা। তিয়ানজিনে পানিবন্দি এক লাখ ২৫ হাজার মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে গেছে প্রশাসন। বেইজিংয়ের পূর্বে অবস্থিত এই এলাকায় ভারি বৃষ্টির জেরে ইয়ংদিং নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীসংলগ্ন বেশ কয়েকটি অঞ্চল পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দুর্গতদের স্থান হয়েছে এলাকার স্কুল ও সরকারি ভবনগুলোতে। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও।
ঘূর্ণিঝড় ডাকসুরি বেইজিংয়ের আশপাশেও ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। বেইজিং কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাজধানী বেইজিং ও হুবেই প্রদেশে প্রায় ১০ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বেইজিং ও এর আশপাশের অঞ্চলে একাধিক গাড়ি বানের পানির স্রোতে ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। একটি গাড়ি থেকে ভাগ্যক্রমে আরোহীকে বের করা সম্ভব হয়।
২০১২ সালের পর বেইজিংয়ে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা। বর্ষণের পাশাপাশি কয়েক মাস ধরে চীনে ব্যাপক পরিমাণে তাপমাত্রা বিরাজ করছে। রেকর্ড তাপমাত্রার ঘটনাও ঘটেছে। অতিবৃষ্টির পাশাপাশি অতি তাপমাত্রার এসব চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া ঘটনা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সাথে এর সম্পৃক্ত বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
সূত্র : এএফপি