উত্তাল সাগরের জোয়ারে বড়বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে মেরিন ড্রাইভে। এতে সাগর পাড়ের দৃষ্টিনন্দন এই সড়কটির ভাঙন আরো প্রকট হচ্ছে। ভাঙন রোধে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল কোর কাজ করছে। আপাতত মেরিন ড্রাইভের সামনে জিও টেক্সটাইল দিয়ে ভাঙন সামলাতে চেষ্টা করছে তারা।
এর আগে গত বুধবার রাতে পূর্ণিমার জোয়ারের কারনে মেরিন ড্রাইভের আটটি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়।
কক্সবাজার কলাতলী থেকে টেকনাফ সাবরাং জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার সড়কে গত তিন দিনে ১২টি স্পটে ভাঙন দেখা দেয়। সাবরাং ইউনিয়নের হাদুরছড়া, মুন্ডার ডেইল, খুরের মুখ এবং বাহারছড়া এলাকায় সবচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দেয়। খণ্ড খণ্ড অংশে সড়কের ভাঙন প্রায় আড়াই শ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃতি হয়েছে।কিন্তু প্রথম দিনে ভাঙন ছিল মাত্র ৭০ মিটারের মতো।
মেরিন ড্রাইভে ভাঙনে আতঙ্কে রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের আশঙ্কা, শুক্রবার সকালের জোয়ারে সর্বশেষ সড়কের মাঝভাগ অতিক্রম করেছে। কোনোভাবে যদি সড়কের প্রস্থে আর মাত্র সাত ফুট পর্যন্ত ভেঙে যায় তবে জোয়ারের পানি লোকালয়ের মধ্যে প্রবেশ করতে পারবে।
সাবরাং মুন্ডার ডেইল এলাকার বাসিন্দা নুরুল আলম বলেন, ‘মেরিন ড্রাইভ সড়কটি সাগর পাড়ে অনেকটা বেড়িবাঁধের মতো জোয়ারের পানি আটকাচ্ছে। এই সড়কের কোনো অংশে দশ ফুটও যদি একবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তখন সেটি আটকানো বেশ কঠিন হয়ে পড়বে। তখন ভাঙনের ওই অংশ দিয়ে প্রবল স্রোতে ঢুকবে জোয়ারের পানি। স্রোতের সাথে মোকাবেলা করে তখন বাঁধ রক্ষা করা সহজ হবে না। যেটি আমরা অতীত থেকে দেখে আসছি।
সাবরাং ইউনিয়নের মেম্বার মোহাম্মদ সেলিম দৈনিক স্লোগানকে বলেন, ‘বুধবার রাতের জোয়ারে মেরিন ড্রাইভে প্রথম ভাঙন দেখা দেয়। পরে দুই দিনে এবং রাতে ভাঙন আরো বেড়ে যায়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধে আপ্রাণ চেষ্টা করছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘মেরিন ড্রাইভ সড়কের ভাঙন রোধ করা না গেলে দুই হাজার পরিবার ঝুঁকিতে থাকবে। হুমকির মুখে পড়বে সরকারের মেগা প্রকল্পের আওতায় বেজা বাস্তবায়নাধীন অর্থনৈতিক জোনও। এছাড়া অনেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, মেরিন ড্রাইভের পাশে অনেক ব্যবসায়ির বিনিয়োগকৃত কোটি কোটি টাকার জমি সম্পত্তিও বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
এই নিয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেছে। এতে মেরিন ড্রাইভের সাবরাং বাহারছড়া ঘাট মুন্ডার ডেইল, হাদুরছড়া এবং পশ্চিম মুন্ডার ডেইল এলাকার বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর কাজ করছে।’
কক্সবাজারের কলাতলী থেকে সাবরাং জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে। নয়নাভিরাম এই সড়কটি সেনাবাহিনীর প্রকৌশল কোর এর মাধ্যমেই নির্মাণ করা হয়। এই সড়কের তত্ত্বাবধান এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে সেনাবাহিনী।