ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নির্বাচন বানচালে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে বিশিষ্ট নাগরিকদের বিবৃতি

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালে মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র, নাশকতা ও গোপন তৎপরতার বিরুদ্ধে ১৫৪ জন শিক্ষক, শিল্পী, সাহিত্যিক ও বিশিষ্ট নাগরিকরা বিবৃতি প্রদান করেছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে আগামী ৭ জানুয়ারি ২০২৪ অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করে দেশে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করে ঘোলাজলে মাছ শিকারের জন্য দেশি-বিদেশি মহলের অপতৎপরতায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। অতীতের ন্যায় নির্বাচন বানচালের সব ধরনের অপচেষ্টা মোকাবিলা করে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ এবং জনগণের ইস্পাতকঠিন ঐক্যের ফলে ১৯৭১ সালে বিশ্বমানচিত্রে আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছিলাম উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, পরিতাপের বিষয় হলো, স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও আমাদেরকে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তির সাথে লড়াই করতে হচ্ছে। এই অপশক্তির হাতে আমরা রাষ্ট্রের স্থপতিকে হারিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া সামরিক বাহিনীর অগণিত বীর সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে বা গোপন কিলিং মিশনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে ধারাবাহিকভাবে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, লক্ষ প্রাণের আত্মত্যাগ আর মা-বোনদের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এ দেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্য নিয়ে এখনো ছিনিমিনি খেলছে স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত্তি বাঙালি জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িকতা, গণতন্ত্র এবং সমতা। পাকিস্তানের পরাজিত এই শক্তি সর্বদা মুক্তিযুদ্ধের মৌলচেতনাকে পদদলিত করে অবৈধ পথে ক্ষমতায় এসেছে এবং এখনও আসতে চাইছে। গণতন্ত্রের আবরণ অঙ্গে ধারণের চেষ্টা করলেও এরা এদের আসল চেহারা ঢেকে রাখতে পারেনি।

২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে যেভাবে এরা অগ্নিসন্ত্রাস আর ধ্বংসযজ্ঞে লিপ্ত ছিল, ১৫ নভেম্বর ২০২৩ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর থেকে একইভাবে গুপ্তঘাতক চক্রের ন্যায় এরা গোপন স্থান থেকে হরতাল অবরোধের নামে সাধারণ মানুষের জানমাল, গণপরিবহণ, ট্রেন ইত্যাদির ওপর চোরাগোপ্তা হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ অব্যাহত রেখেছে। রেললাইন উপড়ে ফেলে, অগ্নিসংযোগ করে দেশের স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ব্যাহত করে এরা দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করতে চায়।

>>>  সাকিবকে সমর্থন দিয়ে অনুসারীদের যে বার্তা দিলেন সাইফুজ্জামান শিখর

বিদেশি সাহায্যনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই মুহূর্তে বিদেশি শক্তির দোসররা অর্থনীতি ধ্বংসের মরণখেলায় মেতে উঠেছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরো বলা হয়, যারা নাশকতা করছে, তারা চিহ্নিত অপশক্তি। সরকারের কাছে আহ্বান জানাবো, চিহ্নিত এই দানবদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে তাদের ওপর অর্পিত সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে দৃঢ়তার পরিচয় দেবেন সে প্রত্যাশা করি।

রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং উন্নয়নবিরোধী যে ষড়যন্ত্র চলছে তা সফল হলে বাংলাদেশ ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া কিংবা আফগানিস্তানের পরিণতি ভোগ করবে বলে মনে করেন বিশিষ্ট নাগরিকরা।

কাজেই দেশি-বিদেশি এসব মহলের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নাগরিক সমাজ ১৯৭১ সালের ন্যায় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার শপথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে বলে বিবৃতিতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকরা আর বলেন, আমরা আশা করি, সরকার ও নির্বাচন কমিশন মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় অবাধ ও প্রভাবমুক্ত পরিবেশ সুনিশ্চিত করবে। ভোটারদের প্রতি সনির্বন্ধ আহ্বান বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনাসহকারে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করুন এবং আপনার পছন্দের সরকার গঠনে ভূমিকা রাখুন।

বিবৃতিদাতা শিক্ষক, শিল্পী, সাহিত্যিক ও বিশিষ্ট নাগরিকদের পক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন শিল্পী অধ্যাপক নিসার হোসেন, ডিন, চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

সর্বশেষ

এই বিভাগের সর্বশেষ

সর্বশেষ :