ফিলিস্তিনে মানবিক সংকট এতটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, গাজার লোকেরা রুটির জন্য সকাল-বিকেল ভিক্ষা করছেন। এমনকি পরিবারের সদস্যদের ক্ষুধা মেটাতে বাধ্য হয়ে গাধার মাংস খাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। বার্তাসংস্থা রয়টার্স তাদের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই জানিয়েছে।
৭০ দিন যাবত ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের চলমান।
এই সময়ের মধ্যে এক অমানবিক পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে যাচ্ছে অবরুদ্ধ গাজাবাসীর জীবন। পাচ্ছেন না প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, আছে খাবারের অভাবও। আবার সংকটের কারণে প্রধান প্রধান খাদ্যসামগ্রীর দাম বেড়েছে প্রায় ৫০ থেকে ১০০ গুণ।
উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়া এলাকা থেকে ইউসুফ ফারেস নামের এক সাংবাদিক বলেন, ‘ময়দার মতো প্রধান খাদ্যসামগ্রী পাওয়াও এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যুদ্ধের আগের সময়ের তুলনায় এগুলোর দাম এখন গিয়ে ঠেকেছে ৫০ থেকে ১০০ গুণ বেশি। ’
এই সংকটের মূল কারণ হলো, ইসরায়েলের বোমা হামলায় বেশিরভাগ অঞ্চলেই পৌঁছাতে পারছে না ত্রাণসামগ্রী বহনকারী ট্রাক। হামাসকে ধ্বংসের কথা বলে পুরো গাজা উপত্যকাকেই যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হচ্ছে। এদিকে, স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে গড়ে তোলা হচ্ছে প্রতিরোধ। এমতাবস্থায় ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে খাবারসহ মৌলিক চাহিদা পৌঁছানো যেন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘের মানবিক কার্যালয় ওসিএইচএ বৃহস্পতিবার জানায়, মিসরের সীমান্তের কাছে রাফাহ এলাকায় সীমিত সাহায্য বিতরণ করা হচ্ছে। সেখানে গাজার মোট ২৩ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক এখন বসবাস করছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
রয়টার্স বলছে, সমস্ত ত্রাণবাহী ট্রাক মিসরের রাফাহ সীমান্ত দিয়ে গাজায় প্রবেশ করছে, তবে গাজায় প্রবেশের আগে সেগুলো প্রথমে পরিদর্শন করছে ইসরায়েল। গত ২০ অক্টোবর সহায়তা সরবরাহ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল এবং মিসরের মধ্যে অবস্থিত ক্রসিংয়ে ট্রাকগুলো পরিদর্শন করা হচ্ছে। এর ফলে কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে।
চলমান যুদ্ধে ভুক্তভোগী গাজার আবদেল-আজিজ মোহাম্মদ পরিবারসহ উপত্যকাটির দক্ষিণাঞ্চলে এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। সবমিলিয়ে ওই বাড়িতেই শরণার্থীর সংখ্যা ৩৯ জন।
টেলিফোনে এক সাক্ষাৎকারে আজিজ মোহাম্মদ রয়টার্সকে বলেন, ‘আমার একটা বড় বাড়ি ছিল, সেখানে বিদ্যুৎ ছিল। খাবারে ভর্তি দুটো ফ্রিজ ও পর্যাপ্ত সুপেয় পানি ছিল। আর এখন যুদ্ধের দুই মাস পর আমি রুটি ভিক্ষা করছি। ’
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলেছেন, গত বুধবার ১৫২টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। এর আগের দিনে সেই সংখ্যা ছিল প্রায় ১০০টি। সংস্থাটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, ‘গাজা উপত্যকার বাকি অংশের প্রধান সড়কে সংঘর্ষের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং চলাচলে নিষেধাজ্ঞার কারণে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অনেকাংশে বন্ধ হয়ে গেছে। ’
গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় নিহতের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১৯ হাজার ছুঁইছুঁই। বর্বর এই আগ্রাসনের জেরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ক্ষোভ। এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘেও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাশ হয়েছে। তবে ইসরায়েল বলছে, হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার আগ-পর্যন্ত যুদ্ধ থামাবে না তারা।