ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি অর্জনে ব্যর্থ ব্যাংক খাত

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাসেই বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ব্যাংকগুলো। দুই অংকের অঙ্কের ঘর থেকে নেমে এসেছে এক অঙ্কে। নতুন অর্থবছরের শুরুর মাস জুলাইয়ে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৯ শতাংশ, বিপরীতে অর্জন হয়েছে ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। তবে, তার আগের মাস জুনে এই খাতের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১০ দশমিক ৫৭ শতাংশ। সংশ্লিষ্টদের মতে, বিনিয়োগ চাহিদা, ঋণযোগ্য তহবিল কমাসহ নানান কারণে লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণস্থিতি ১৪ লাখ ৮৫ ৪৪৫ কোটি টাকা। আগের মাস জুনেও ১৪ লাখ ৯৪ হাজার ৯৯ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছিল বেসরকারি খাত। তথ্যমতে, এক মাসের ব্যবধানে ৮ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা কমেছে ঋণ বিতরণ। তবে, আগের বছরের একই (জুলাই ২০২২) মাসে যেই ঋণ বিতরণ হয় তার চেয়ে ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি। গত ২০২২ সালের জুলাই মাসে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা ঋণ নিয়েছিল ১৩ লাখ ৫২ হাজার ৫৬৬ কোটি কোটি টাকা।

ব্যাংকখাত সংশ্লিষ্টদের মতে, কোনো ঋণের মোট স্থিতির আগের বছরের সুদসহ হিসাব হয়। এতে আগের বছরের তুলনায় প্রকৃত বা নিট ঋণের পরিমাণ বিতরণ ছাড়াই পরের বছর বৃদ্ধি পায়। তবে, সুদযুক্ত হওয়ার পরেও এবার বেসরকারি ঋণ কমেছে। অর্থাৎ নতুনভাবে তেমন কোনো ঋণই বিতরণ হচ্ছে না এই খাতে।

সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের (২০২২-২৩) শেষ মাস জুনেও বেসরকারিখাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি ঋণ প্রবৃদ্ধিতে। গত অর্থবছরের জন্য ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ছিল। গত অর্থবছরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কমছে, লক্ষ্যমাত্রাও তেমন অর্জন হয়নি। গত জুন শেষে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছিল ১০ দশমিক ৫৭ শতাংশ, যা তার আগের মাস শেষে ১১ দশমিক ১০ শতাংশ ছিল।

>>>  ক্ষমা পেলেন গাজীপুরের জাহাঙ্গীর

অভ্যন্তরীণ ঋণে প্রবৃদ্ধি থাকলেও কমে যাচ্ছে বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, জুলাই শেষে বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ কমে নেমে এসেছে ১ হাজার ৩৩৮ কোটি ডলারে। আর গত জুন শেষে ছিল ১ হাজার ৭৭৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ৪৩৭ কোটি ডলার বা ২৪ দশমিক শূন্য ৬১ শতাংশ।

আগের বছরগুলোতে ঋণ সামান্য করে বেড়েছিল। করোনার মধ্যে ব্যাপক বেড়ে যায়। গত ২০২০ সাল শেষে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ ছিল ৯১৩ কোটি ডলারের। পরের বছরে ২০২১ সাল শেষে বেড়ে হয় ১ হাজার ৫৪৬ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক বছরে ৬৩৩ কোটি ডলার বা ৬৯ দশমিক ২৮ শতাংশ বেড়ে যায়। দেশের বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি ঋণের বাইরে গত মার্চ পর্যন্ত মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি বিদেশি ঋণ রয়েছে ৮১০ কোটি ডলার। বিদেশি ঋণ কমার পেছনে সুদহার অনেক বেড়ে যাওয়া ও নতুন ঋণ পাওয়া কষ্টকরকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে মুদ্রাস্ফীতি এবং লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট বা বিওপি) ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এতে অর্থায়ন কমে বেসরকারি খাতে। এছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাম্প্রতিক সময়ে আমানত প্রবৃদ্ধি কম হচ্ছে। ডলারের ওপর চাপ কমাতে আমদানি অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে। অন্যদিকে, রপ্তানিও বাড়ছে। গত কয়েক মাস রেমিট্যান্সও বেড়েছে। পদ্ধতিগত কারণে বাজার থেকে টাকা উঠে যাচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

সর্বশেষ

এই বিভাগের সর্বশেষ

সর্বশেষ :