ঢাকা, শনিবার, ১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাঙালির স্বপ্ন সারথি শেখ হাসিনা

সাংবাদিক ও গীতিকার কবির বকুলের গানের লাইন থেকে –

বিন্দু বিন্দু আশা দিয়েই আলোর সিন্ধু পাওয়া

তোমার হাতেই পূর্ণ হলো সব বাঙালির চাওয়া

ক্ষুধামুক্ত শান্তি সুখের দারুণ পরিবেশ

নেত্রী থেকে বিশ্বনেত্রী তুমিই বাংলাদেশ

তাঁর গানের লাইনসমূহ কি চমৎকার। সেখানে ফুটে উঠেছে- শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে প্রতিকূল সময়ে দলের দায়িত্ব নিয়ে দলকে সুসংগঠিত করতে দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন। দলকে সুসংগঠিত করার পরে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন। একে একে পঁচাত্তরের নৃশংস হত্যাকাণ্ড, স্বাধীনতাবিরোধী যারা- মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার, দেশকে পাকিস্তানি ভাবধারা হতে মুক্ত ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিসহ বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তাঁর চারদশকের কর্মময় পরিস্থিতি ও দেশকে ছাড়িয়ে বিশ্ব পরিমণ্ডলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করেছেন।

আজকের আধুনিক স্মার্ট বাংলাদেশের একমাত্র কারিগর বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা। পঁচাত্তরে স্বজন হারানোর তীব্র বেদনা ও কণ্টাকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করে শক্ত হাতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কারণেই পশ্চিমাদের কটাক্ষ করা তলাবিহীন ঝুঁড়ি আজ সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্থায়ী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, খাদ্যে স্বনির্ভরতা, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্রামীণ অবকাঠামো, যোগাযোগ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, বাণিজ্য, আইসিটি ও এসএমই খাতে এসেছে ব্যাপক সাফল্য। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার, পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি সম্পাদন, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতিসহ জাতীয় জীবনের বহুক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্টোরেল, কর্ণফুলী টানেল,রুপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রসহ ডিজিটাল বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রুপান্তরের একমাত্র কারিগর বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নয়নের পাশাপাশি শেখ হাসিনার রয়েছে অনেক অর্জন। তিনি পেয়েছেন আন্তর্জাতিক অনেক সম্মাননা ও পদক। এ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে দেওয়া আন্তর্জাতিক পুরস্কারের সংখ্যাও অনেক। টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সফলতা জন্য ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার দেয় গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)। একই মাসে শেখ হাসিনাকে ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পদক দেওয়া হয়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্ব ও মানবিকতার জন্য প্রধানমন্ত্রী আইপিএস ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ও ২০১৮ সালে স্পেশাল ডিসটিংশন অ্যাওয়ার্ড ফর লিডারশিপ গ্রহণ করেন।

>>>  রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ পরিদর্শনে ভাটিয়ারীতে শেখ হাসিনা

ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রবক্তা শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণের পর থেকে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে দলকে সুসংগঠিত করেন এবং ১৯৯৬ সালে প্রথম, ২০০৮ সালে দ্বিতীয়, ২০১৪ সালে তৃতীয় ও ২০১৮ সালে চতুর্থ বারের মতো নির্বাচনে জয়লাভ করে দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

আজ ২৮ সেপ্টেম্বর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিয়াত্তর ছাড়িয়ে পা রাখছেন, সাতাত্তরে। জন্মগ্রহণ করেছিলেন রাজনৈতিক পরিবারে। পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে জাতিকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে চার দশক ধরে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। দাদা শেখ লুৎফর রহমান ও দাদি সাহেরা খাতুনের আদরের নাতনি শেখ হাসিনার শৈশব কেটেছে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়।

১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন।  তখন শেখ হাসিনাকে শেরেবাংলা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ (নারী শিক্ষা মন্দির) ভর্তি করা হয়। এরপর ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। ওই বছরেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হন ও ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। শেখ হাসিনা ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজে পড়ার সময় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলন ও ছয় দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে ১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানের করাচিতে নিয়ে যাওয়ার পর গোটা পরিবারকে ঢাকায় একটি বাড়িতে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই শেখ হাসিনা গৃহবন্দি অবস্থায় তার প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় জন্মগ্রহণ করেন।। এরপর ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের জন্ম হয়।

>>>  আমি আপনাদের কাছে এসেছি

পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার আগে ছোটবোন শেখ রেহানাসহ শেখ হাসিনা স্বামীর কর্মস্থল জার্মানিতে যান। সেখানে অবস্থানকালে তিনি সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নিহত হওয়ার সংবাদ পান। তাৎক্ষণিকভাবে দেশে ফেরার পরিবেশ না থাকায় স্বামী-সন্তানসহ ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। দীর্ঘ ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এবং একই সালের ১৭ মে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এবার শুরু হয় তাঁর স্বৈরাচার ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্রান্তের সঙ্গে লড়াই।

লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে এবং সে বছরের ২৩ জুন প্রথমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এবং ২০০১ সাল পর্যন্ত দেশকে মুক্তিযুদ্ধের ভাবদর্শে পরিচালিত করতে থাকেন। এরপর ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে হারানো হয়। সেদিন আওয়ামী লীগ হারেনি, হেরেছিল বাংলাদেশে, হেরেছিল মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ। এরপর তাঁকে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড নিক্ষেপ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়। তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেও ওই হামলায় ২৪ জন নিহত এবং হাজার হাজার নেতাকর্মী আহত হন।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন নিয়ে বিশাল বিজয় অর্জন করে। এই বিজয়ের মধ্যদিয়ে শেখ হাসিনা দ্বিতীয় বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি তৃতীয়বার ও ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও কূটনৈতিক দক্ষতা দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের জন্যে সুনাম কুড়িয়েছেন। তাঁর সরকারের অন্যতম কূটনৈতিক সফলতা দীর্ঘ ৬৮ বছর পরে ছিটমহল বিনিময়। যারা নিজ দেশে পরবাসী ছিলেন তাদের নিজস্ব পরিচয় হয়েছে। তারা স্বাধীন দেশে বসবাস করতে পারছে। এর একক কৃতিত্ব শেখ হাসিনার। বাংলাদেশের অপর নাম যেমন বঙ্গবন্ধু, ঠিক তেমনি সোনার বাংলার অপর নাম বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা। স্মার্ট বাংলাদেশের একজন স্বপ্নসারথী হিসেবে বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার শতায়ু কামনা করি।

>>>  ইমরান খানের জীবন হুমকির মুখেঃ স্ত্রী বুশরা বিবি

লেখক: প্রতিবেদক, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

সর্বশেষ

এই বিভাগের সর্বশেষ

সর্বশেষ :