ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কারাবন্দী খাদিজাতুল কুবরার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ।
আজ সোমবার (২৮ ই আগষ্ট) বেল ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এই মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ খাদিজার বড় বোন মুনিরা জাহান বলেন, বিনা বিচারে আজকে এক বছর ধরে আমার বোনটা জেলে আছে। জেলে দেখা করতে গেলে জিঙ্গেস করে, কেন আমি এতদিন কারাগারে? তখন আমাদের কাছে কোন উত্তর থাকে না। আমার বোন কেন কারাগারে? সে কী এমন অপরাধ করেছে! এতদিন তাকে বিনা বিচারে আটক রাখতে হবে। খাদিজা অসুস্থ, তাকে তার পড়াশোনা থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে। আমার বোনের মুক্তি চাই।
এসময় উপস্থিত গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মো. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, আমি শিক্ষকদের প্রতিনিধি হয়ে নয়, নিজের তাড়না থেকে আজকের মানববন্ধনে উপস্থিত হয়েছি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী এভাবে দীর্ঘদিন কারাগারে থাকতে পারে না। আমি কিছুদিন আগে তাকে নিয়ে একটা কলাম লিখেছিলাম। তখন আমি জানার চেষ্টা করেছিলাম, আসলে তার অপরাধটি কি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে তাকে ক্ষমা দেওয়া উচিত।
এসময় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী ইভান তাহসীব বলেন, একটা গণতান্ত্রিক রাষ্টে প্রত্যেকটি জনগনের স্বাধীনতা আছে তার মতামত প্রকাশ করার। অনুষ্ঠানে খাদিজা সেসব বিষয়ে জানতে চেয়েছে। তা আমাদের সকল সাধারন নাগরিকের জিজ্ঞাসা।এখানে সরকার ও রাষ্ট্রকে প্রশাসন এক করে দেখছে কিন্তু সরকার ও রাষ্ট্র যে দুটি ভিন্ন সত্ত্বা এটা আমাদের ধারণা রাখা উচিত।
মানববন্ধনে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের কারও কারও হাতে ছিল পোস্টার, তাতে লেখা ‘ফ্রি খাদিজাতুল কুবরা’, ৩৬৫ দিনের অবিচারের মুক্তি হোক’ ,
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নয়,জানমাল রক্ষায় সুষ্ঠ আইন চাই’, `গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চাই,আমাদের কথা বলার স্বাধীনতা চাই’, ইত্যাদি
অন্যদিকে খাদিজার কারাবন্দী হওয়ার এক বছরে গতকাল তার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সমূহ প্রতিবাদ জানিয়েছে। এছাড়াও গতকাল ‘হয়নি জামিন, হয়নি বিচার: অবিচারের ৩৬৫ দিন’ লেখা সম্বলিত এক ব্যানারে রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির পায়রা চত্বরে অনুষ্ঠিত এক সংহতি সমাবেশে খাদিজার মুক্তির দাবি জানিয়েছে মানবাধিকারকর্মী, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, সংগীতশিল্পীসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা।
জানা যায়, অনলাইনে সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচারসহ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে ২০২০ সালের অক্টোবরে খাদিজা ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর কলাবাগান এবং নিউমার্কেট থানায় দুটি মামলা করে পুলিশ।
খাদিজাতুল কুবরার নামে ২০২০ সালে যখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয় তখন তার বয়স ১৭ বছর। অথচ, তাকে প্রাপ্তবয়স্ক দেখিয়ে মামলাটি করা হয় এবং সেই মামলায় আজ ৩৬৫ দিন ধরে খাদিজা কারাগারে দিনাপাত করছে।তবে তিনি যে মামলায় গ্রেফতার আছেন, সেই মামলার বিচার শুরু হয়নি এখনো।
এদিকে গত জুলাইয়ে আপিল বিভাগের এক আদেশে আগামী ১০ নভেম্বর পর্যন্ত (৪ মাস) তার জামিনসংক্রান্ত আবেদনের শুনানি স্ট্যান্ডওভার (মুলতবি) রাখা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এতে ধারণা করা হচ্ছে, এর আগে তার জামিনসংক্রান্ত আবেদন শুনানির সুযোগ নেই