ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

গোপনে ব্যবসা করছেন আফগান নারীরা

২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় যাওয়ার পর নারীরা চাকরি হারান। তাদের অনেকে গোপনে ব্যবসা শুরু করেছেন। নিজেদের বাড়িতে জিম, বিউটি সেলুন, স্কুল পরিচালনা করছেন।

তাদেরই একজন ৪৪ বছর বয়সী লায়লা হায়দারি। পূর্ব-মধ্য আফগানিস্তানের শহর কাবুলে তার একটি রেস্টুরেন্ট ছিল। সেখানে সন্ধ্যায় সংগীত ও কবিতা পাঠের আসর বসানো হতো। বুদ্ধিজীবী, লেখক, সাংবাদিক ও বিদেশিদের কাছে রেস্টুরেন্টটি বেশ জনপ্রিয় ছিল। তিনি ব্যবসার আয়ের একটি অংশ দিয়ে মাদক পুনর্বাসন কেন্দ্রও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

কিন্তু তালেবান ক্ষমতায় আসার পর সেটি ভেঙে ফেলেন তাদের সমর্থকেরা।এই ঘটনার পাঁচ মাস পর গোপনে একটি হ্যান্ডিক্রাফট (হাতের তৈরি শিল্প) সেন্টার খোলেন হায়দারি। সেখানে পোশাক তৈরি ও অলংকার বানিয়ে টাকা আয় করছেন প্রায় ৫০ জন নারী। তারা মাসে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার টাকা আয় করেন।

হায়দারি বলেন, “যে নারীদের কাজ খুব দরকার, তাদের জন্য আমি এই প্রতিষ্ঠানটা শুরু করেছি।”

হ্যান্ডিক্রাফট ব্যবসার কিছু অংশ দিয়ে মেয়েদের একটি গোপন স্কুলে অর্থ সহায়তা দিচ্ছেন হায়দারি। সেখানে প্রায় ২০০ মেয়ে গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজি শিখছে। কিছু মেয়ে স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করছে। বাকিরা অনলাইনে পড়ছে।

নারীদের জন্য বেশিরভাগ চাকরি নিষিদ্ধ করেছে তালেবান। মেয়েরা মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা নিতে পারছেন না। মেয়েদের চলাফেরার ওপরও বেশ কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

তবে হাজার হাজার নারী তাদের বাড়িতে ছোট ব্যবসা শুরু করেছেন। এতে করে সাধারণত বাধা দিচ্ছে না তালেবান। পাশাপাশি হায়দারির মতো গোপন প্রতিষ্ঠানও কাজ করে যাচ্ছে।

২৫ বছর বয়সী দর্জি ওয়াজিহা শেখাওয়াত আগে একা পাকিস্তান এবং ইরানে গিয়ে কাপড় কিনে আনতেন। তালেবানের নিয়ম অনুযায়ী, এখন তিনি একা ভ্রমণ করতে পারেন না। কিন্তু সঙ্গে একজনকে নিয়ে যাওয়া তার পক্ষে আর্থিক কারণে সম্ভব নয়। এই অবস্থায় তিনি তার পরিবারের এক পুরুষ সদস্যকে কাপড় কিনতে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ভুল কাপড় কিনে আনেন।

>>>  আফগান নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ করলো তালেবান

তিনি বলেন, “আমি আগে নিয়মিত বিদেশে ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে যেতাম, কিন্তু এখন কফি পান করতেও বাইরে যেতে পারি না। দম বন্ধ লাগে। মাঝেমধ্যে আমি ঘর বন্ধ করে চিৎকার করি।”

এদিকে পার্টি ড্রেস এবং চাকরিজীবী মেয়েদের পোশাকের চাহিদা কমে যাওয়ায় ওয়াজিহার মাসিক আয় ৬০০ ডলার থেকে কমে ২০০ ডলার হয়েছে।

আফগানিস্তানে বিধবা, বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়া এবং একা থাকা নারীর সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। তাদের অনেকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। আবার অনেকের মাহরাম (সাথে যাওয়ার মতো পুরুষ সাথী) কেউ নেই।

২০১৫ সালে স্বামী মারা যাওয়ার পর সাদাফ (ছদ্মনাম) কাবুলে বিউটি সেলুন চালিয়ে পাঁচ সন্তান লালনপালন করতেন। এখন তালেবান তার সেলুন বন্ধ করে দেওয়ায় তিনি ঘরে ব্যবসা শুরু করেছেন। কিন্তু তার অনেক ক্রেতা চাকরি হারানোয় সেলুনে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তাই সাদাফের মাসিক আয় ৬০০ ডলার থেকে কমে ২০০ ডলার হয়েছে।

গত মাসে তালেবান দেশের সব বিউটি সেলুন বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। ফলে ৬০ হাজারের বেশি নারী চাকরি হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সাদাফ আশঙ্কা করছেন, ঘরে ব্যবসা করায় তালেবান তার পেছনে লাগতে পারে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

সর্বশেষ

এই বিভাগের সর্বশেষ

সর্বশেষ :