“গাহি সাম্যের গান, ধরনীর বুকে দিলো যারা আনি- ফসলের ফরমান।”
যুগে যুগে যারা সমাজ-শিক্ষা-ধর্ম সংস্করণ এর কাজ করেন, মানুষ মৃত্যুর পরেও তাঁদের অবদান মনে রাখে আর তাঁরা হয়ে থাকেন অমর। ঠিক তেমনই একজন সমাজ সেবকের নাম জনাব আব্দুল কাদির মোল্লা।
আব্দুল কাদির মোল্লা নরসিংদী জেলার মনোহরদী থানার অন্তর্গত পাঁচকান্দি গ্রামে ১৯৬১ সালের ৮ই আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন; পিতার নাম আব্দুল মজিদ মোল্লা ও মাতা নূরজাহান বেগম।
জীবনে শুরুর দিকে নিজেকে তৈরী করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে তাঁর। সংগ্রামী জীবনের শুরুর দিকে তিনি কারিগরি শিক্ষা নিয়ে পাড়ি জমান সিঙ্গাপুর। পাঁচবছর পর দেশে ফিরে এসে চাকুরী নেন তিতাস গ্যাস কোম্পানিতে। এরপর তিনি প্রতিষ্ঠা করেন থার্মেক্স গ্রুপ, যা আজ দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান।
মানবতার মূর্ত প্রতীক, শিক্ষানুরাগী, দানবীর, ও সমাজ সংস্কারক জনাব আব্দুল কাদির মোল্লা নরসিংদীকে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে আদর্শিক জেলা, নৈতিক জেলা, শিক্ষানগরী হিসেবে পরিচিত করার লক্ষ্যে “মানুষ মানুষের জন্য, সেবাই আমাদের অঙ্গীকার” এই মিশন এন্ড ভিশন নিয়ে গড়ে তোলেন ‘মজিদ মোল্লা ফাউন্ডেশন।’
ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হতে আয়ের লভ্যাংশের ২৫% ব্যায় করেন মানবকল্যাণে। দক্ষ মানব সম্পদ গড়ার ভিশন নিয়ে ১৯৯৫ সালে নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন ‘পাঁচকান্দি ডিগ্রী কলেজ’। ২০০৬ সালে নরসিংদী শহরে প্রতিষ্ঠা করেন ‘আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ’ যা শুরুতেই সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে যায়। পরপর তিনবার দেশের মধ্যে ২য় স্থান। এর ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠা করেন স্ত্রীর নামে ‘এনকেএম হাই স্কুল এন্ড হোমস’ ও ‘আব্দুল কাদির মোল্লা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল।’ এই প্রতিষ্ঠান চারটি মজিদ মোল্লা ফাউন্ডেশন কর্তৃক সরাসরিভাবে পরিচালিত।
এছাড়াও নরসিংদী জেলার ১৫১ টি স্কুল, ৫৭টি কলেজে অবকাঠামো নির্মাণ করেছেন। অনেক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাতেও অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ৮৫টা এতিমখানা তার অনুদানে পরিচালিত হয়ে আসছে। ৩১৫টা স্কুলে মজিদ মোল্লা ফাউন্ডেশন এর এফডিআর রয়েছে। যা থেকে খণ্ডকালীন শিক্ষকদের বেতনসহ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ব্যয় করা হয়। যার অর্থায়নে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এর আবাসিক হল (নির্মাণাধীন); ঢাকা , জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, জগন্নাথসহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে থার্মেক্স গ্রুপের দেয়া বাস আছে। শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ও ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মসজিদ নির্মাণ কাজ চলছে।
নরসিংদীর জেলায় গড়ে তোলেন অসংখ্য মসজিদ। এর মধ্যে অন্যতম বেলাবো জামে মসজিদ। এতে ১২,০০০ মানুষ একসাথে নামাজ পড়তে পারেন। সম্প্রতি এফডিসিতেও মসজিদ নির্মাণ করে দেবার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ড. মশিউর রহমান মৃধা বলেন, “১০০ জন শ্রেষ্ঠ বাঙালির মধ্যে আব্দুল কাদির মোল্লা অন্যতম। সম্প্রতি এক শিক্ষাবিদের গবেষণায় তা বের হয়ে আসছে।” সৈয়দপুর আনোয়ার আলী মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি, জনাব মুস্তাফিজুর রহমান বসু বলেন, “আমরা দানবীর হাজী মুহাম্মাদ মুহসিন কে দেখি নি, আরথি সাহাকে পাইনি। কিন্তু আমাদের নরসিংদীতে পেয়েছি দানবীর আব্দুল কাদির মোল্লাকে।”
বর্তমানে কর্মবীর আব্দুল কাদির মোল্লা নরসিংদীতে মেডিকেল কলেজ, কারিগরি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মানবসেবায় অসামান্য অবদান রাখায় তিনি ‘মাদার তেরেসাঁ অ্যাওয়ার্ড ’-২০১৮ পেয়েছেন। দেশসেরা করদাতা- ২০১৫ নির্বাচিত হয়েছেন। তাকে ‘কর বাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে।
এছাড়াও তিনি বিভিন্ন ধরনের আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে সর্বদা নিজেকে জড়িত রাখেন এবং অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান।