চাঁদপুরে মাদরাসার দুই শিক্ষকের বেধড়ক পিটুনিতে রক্তাক্ত হয়েছে এক ছাত্র। শিক্ষকের কক্ষে দুই হাজার টাকা এবং মুঠোফোনের মেমোরি কার্ড চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রের ওপর এমনভাবে নির্যাতন চালানো হয়। তবে এই ঘটনার তিন দিন পার হলেও বাড়ি ফিরেও এখনো স্বাভাবিক হতে পারছে না ওই মাদরাসার ছাত্র আব্দুল আহাদ। ভয় আর আতঙ্কে আঁতকে উঠে। এদিকে, এই ঘটনার বিচার দাবি করেছেন স্বজন এবং এলাকাবাসীরা।

অন্যদিকে, ঘটনার পর মাদরাসা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে অভিযুক্ত এই দুই শিক্ষককে। এমনই দাবি করেছে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। গত শুক্রবার চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের আলুমুড়া এলাকার আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুস সালাম মাদরাসায় ছাত্রের ওপর এমন নির্যাতনের ঘটনা ঘটে থাকে। 

চাঁদপুর সদর উপজেলার আশিকাটি ইউনিয়নের সেনগাঁও গ্রামের জহির পাটোয়ারীর ছেলে আব্দুল আহাদ (১৫)। পাশের আলুমুড়া এলাকার আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুস সালাম মাদরাসার কিতাব বিভাগের প্রথমবর্ষের ছাত্র ছিলেন আহাদ। গত মঙ্গলবার ওই মাদরাসার এক শিক্ষকের কক্ষে থেকে দুই হাজার টাকা এবং মুঠোফোনের মেমোরি কার্ড চুরির ঘটনা ঘটে। তারপর পহেলা রমজান শুক্রবার, ওই দিন ঘটনা জানাজানি হলে, এর জন্য দায়ী করা হয় আব্দুল আহাদকে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নির্জন একটি কক্ষে নিয়ে দফায় দফায় চালানো হয় শারীরিক নির্যাতন তার ওপর। জাকারিয়া এবং ইমরান নামের এই দুই শিক্ষক এমন নির্যাতন চালায় আব্দুল আহাদের ওপর। পরে রাতে খবর পেয়ে স্বজনরা তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করেন। দেওয়া হয় চিকিৎসাও। কিন্তু শরীরে আঘাতের সেই চিহ্ন এখনো দৃশ্যমান র‍য়েছে। তারপর আরো তিন দিন কেটে গেছে। তবে এখনো স্বাভাবিক হতে পারেনি নির্যাতনের শিকার এই শিক্ষার্থী। আর সেই দিনের ঘটনা বর্ণনা করে আব্দুল আহাদ জানান, আমি টাকা ও মোবাইল ফোনের মেমোরি কার্ড চুরি না করেও মারের চোটের স্বীকার করেছি। কিন্তু তারপরও গত শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় দুই শিক্ষক পালা করে লাঠি দিয়ে আমাকে মারধর করে। 

এদিকে, স্বজন এবং এলাকাবাসী এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্য বিচার দাবি করেছেন। বাবা জহির পাটোয়ারী বলেন, নির্যাতনের শিকার হওয়া তার ছেলে এখন ঘুমের মধ্যেও শিহরে উঠে। তাছাড়া সারা শরীরে নির্যাতনের যে ক্ষত রয়েছে। তা নিয়েও আমি দুঃশ্চিন্তায় আছি। কারণ, ছেলে এখন বাড়ি থেকে বের হতেও ভয় পায়। নির্যাতিত আব্দুল আহাদের নানা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক বলেন, রোজা রাখা অবস্থায় তার নাতিকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তার জন্য অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।  

এলাকাবাসীর চাপের মুখে মাদরাসা থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে অভিযুক্ত ওই দুই শিক্ষককে। এমন তথ্য জানান, আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুস সালাম মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আসাদউল্লাহ। অন্যদিকে, মাদরাসাছাত্রের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি নজরে এসেছে বলে জানান, চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ। তিনি বলেন, শিশু শিক্ষার্থীর ওপর যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তা ক্ষমার অযোগ্য। তাই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে নির্যাতনের শিকার ছাত্র এবং মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছে পুলিশ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত শিক্ষক জাকারিয়ার বাড়ি হবিগঞ্জে এবং ইমরানের বাড়ি হচ্ছে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলায়। আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুস সালাম মাদরাসা নামে ধর্মীয় এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় চার শ শিক্ষার্থী কোরআন এবং কিতাব শিক্ষা বিভাগে অধ্যয়ন করছেন।