ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র সাত দিন। রাজধানীসহ দেশের কোরবানির পশুর হাটগুলো এখনো জমে না উঠলেও খামারে কোরবানির গরু বিক্রি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। গতকাল বুধবার ও আগের দিন মঙ্গলবার রাজধানীর খিলগাঁও, ভাটারা, মোহাম্মদপুর এবং বছিলা এলাকার চারটি খামার ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা বেশির ভাগ গরু বিক্রি হয়ে গেছে। খামারিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই সংখ্যা প্রায় ৬৫ শতাংশ।

খিলগাঁওয়ে বাড়ির ছাদে ব্যতিক্রমভাবে গড়ে তোলা হয়েছে অ্যাভোক অ্যাগ্রো খামার। ওই খামারে এবার কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৪০টি গরু। এর মধ্যে সব গরুই বিক্রি হয়ে গেছে। মোহাম্মদপুর দয়াল হাউজিংয়ে মেঘডুবি অ্যাগ্রোতে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা এক হাজার ৫০০টি গরু এবং মহিষের মধ্যে এক হাজার গরু, মোহাম্মদপুরের বছিলা রোড চল্লিশ ফিট রাস্তায় আলমগীর র‌্যাঞ্চ ফার্মের এক হাজার গরুর মধ্যে  প্রায় ৫৫৫টি ও ভাটারার ছোলমাইদের নর্থ বেঙ্গল ডেইরি ফার্মের ২০০টি গরুর মধ্যে ১৭৬টি গরু বিক্রি হয়ে গেছে।

গতকাল পর্যন্ত এই চারটি খামারের দুই হাজার ৭৪০টি পশুর মধ্যে প্রায় এক হাজার ৭৮১টি গরু বিক্রি হয়ে গেছে। শতাংশের হিসাবে যা গিয়ে দাড়ায় ৬৫ শতাংশ। খিলগাঁও শান্তিপুর মসজিদের পেছনে কাজী ভ্যালি ভবনের ছাদে অ্যাভোক অ্যাগ্রো নামের গরুর খামার গড়ে তুলেছেন কাজী মশিউর রহমান মারুফ। ছাদের এক পাশে বাগান, অন্য পাশেই রয়েছে খামার।

বাড়ির ছাদে ২০১৯ সাল থেকে গরু পালন শুরু করেন তিনি। দ্বিতীয় বছরে ২০২১ সালে তৈরি করেন ১৮ বাই ৩৬ ফিটের শেড। ওই সময় গরু ছিল ৩০টি। ফেসবুকে প্রচার করলে দ্বিতীয় বছরই অ্যাভোক অ্যাগ্রোর সব গরু বিক্রি হয়ে যায়। 

দৈনিক স্লোগানকে মারুফ বলেন, ‘কোরবানির পশুর হাটে ছোট আকারের গরু পেতে ভোগান্তি পোহাতে হয়।

এই কারণে দুটি গরু দিয়ে যাত্রা শুরু করি। এই বছর খামারে কোরবানির জন্য ৪০টি গরু প্রস্তুত করেছি। এরই মধ্যে সবগুলো বিক্রি হয়ে গেছে। এমন সাড়া পাব ভাবতে পারিনি। আমার বেশির ভাগ গরু ছোট এবং মাঝারি আকারের।’ 

ভাটারার নর্থ বেঙ্গল ডেইরি ফার্মে গিয়ে দেখা যায়, খামারের ভেতরে থাকা গরুর যত্ন নিতে ব্যস্ত কর্মীরা। এখানকার গরুর বেশির ভাগ লাল বর্ণের। সারিবদ্ধভাবে বেঁধে রাখা। ওজন করে ক্রেতারা দাম নির্ধারণ করে তারপর কেনেন। লাল বর্ণের গরুর বিষয়ে জানতে চাইলে ফার্মের কর্মী আরাফাত রহমান বলেন, ‘কোরবানিতে ক্রেতারা লাল বর্ণের গরু বেশি পছন্দ করেন। ফলে এই বর্ণের গরু আমাদের খামারে বেশি পালন করা হয়েছে।’

নর্থ বেঙ্গল ডেইরি ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মকবুল হোসেন বলেন, ‘প্রতিবছর কোরবানির জন্য ২৫০টি গরু প্রস্তুত করলেও এবার ২০০টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার কোরবানির গরুর দাম কিছুটা বেশি। গত মাসের (মে) ২৫ তারিখ থেকে খামারের গরু বিক্রি শুরু হয়েছে। বিক্রি হওয়া গরুগুলো খামারেই আছে। ৫৭৬ কেজি ওজনের গরুটি চার লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। আর ১৬০ কেজি ওজনের গরু বিক্রি করেছি ৯২ হাজার টাকায়। এই ছাড়া খামারের ১৫৫টি খাসি এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে।’

নর্থ বেঙ্গল খামারে কোরবানির গরু বুকিং দিতে আসা আব্দুর রহমান বাবু বলেন, ‘আমি গত বছরও এই ফার্ম থেকে গরু কিনেছি। গত বছর যে গরু এক লাখ ৪০ হাজার ছিল, এবার সেটি এক লাখ ৭৫ হাজার টাকার মতো পড়ছে। দাম একটু বেশি হলেও হাটে গিয়ে গরু কেনায় অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’

মোহাম্মদপুর দয়াল হাউজিংয়ের মেঘডুবি অ্যাগ্রো ফার্মে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে যত্ন নেওয়া হচ্ছে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা গরুগুলোর। এই ফার্মে এবার কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে এক হাজার ৫০০টি গরু ও ৫০০টি খাসি। যার মধ্যে এক হাজারটি ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে।

মেঘডুবি অ্যাগ্রোর সিও তারেক মাহমুদ বলেন, ‘কোরবানির গরুর দাম এবার বেশি। খাবার, ওষুধ, লেবার খরচ, পরিবহন, বিদ্যুৎ বিল সব কিছু বাবদ আমাদের খরচ বেড়ে যায়। ফলে গত বছরের তুলনায় এবার ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ বেশি দামে কোরবানির পশু বিক্রি করতে হচ্ছে।’

বছিলার ৪০ ফিট সড়কের আলমগীর র‌্যাঞ্চের পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মাহমুদুল আলম বলেন, ‘আমরা আমাদের ফার্মের গরু ক্রেতার বাসায় পৌঁছে দিই। এই জন্য ক্রেতার আগ্রহ বেশি। ছোট থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত গরুগুলো আমরা প্রাকৃতিক খাদ্য দিয়ে পালন করে থাকি। কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা আমাদের এক হাজার গরুর মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে ৫৫৫টি। এবার কোরবানির বেশ আগেই পশু বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।’

এইদিকে আফতাবনগর ১০ নম্বর সড়কের ভাগাপুর এলাকায় ছোট-বড় অনেক গরুর খামার রয়েছে। এসব খামারে স্থানীয় বাসিন্দারা পাঁচ-ছয়টি করে গরু পালন করছেন। জানা গেছে, কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে তাঁরা গরু পালন করে থাকেন। তাঁদের একজন হচ্ছে আরমান।  তিনি বলেন, ‘গরুর দাম কত হইবো জানি না। তয় হাটে যেই দাম উঠবো হেই দামেই গরু বিক্রি করমু। হাটে যদি কম দাম কয়, তাইলে আর বিক্রি করমু না।’