ঢাকা, সোমবার, ১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বিনা মূল্যে ছিন্নমূল মানুষকে ইফতার করাচ্ছেন তাঁরা

দৈনিক স্লোগান, সারাদেশ


ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল সাড়ে পাঁচটা। বগুড়া জেলার সার্কিট হাউস সড়কের পাশে রোজাদার ছিন্নমূল মানুষের দীর্ঘ সারি দারিয়ে। তাঁদের হাতে ইফতারির প্যাকেট আর পানি তুলে দিচ্ছেন কয়েকজন তরুণ। এভাবে রোজার দ্বিতীয় দিন থেকে শহরের ভাসমান, দরিদ্র এবং ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে ইফতারি বিতরণ করছে অনলাইন রক্তদান সংগঠন নামে বগুড়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। প্রতিদিন অন্তত ১৫০ জন রোজাদারকে বিনা মূল্যে ইফতার করাচ্ছে তারা।

সার্কিট হাউস সড়ক ছাড়াও শহরের সাতমাথায় সরকারি আজিজুল হক কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন মুনলাইট ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি মাসব্যাপী রোজাদারদের বিনা মূল্যে ইফতারি এবং রাতের খাবার খাওয়াচ্ছেন তারা। এ ছাড়া সাতমাথায় প্রতিদিন দুই শতাধিক রোজাদারের কাছে এক টাকায় ইফতারি বিক্রি করছেন একদল তরুণ। লাইফ লাইন নামের একটি সংগঠনের মাধ্যমে তাঁরা এই কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

বগুড়া শহরে গৃহকর্মীর কাজ করেন রুপালি বেগম। এক মেয়েকে নিয়ে খুব কষ্টে  চলে তাঁর সংসার। আজ মঙ্গলবার বিকেলে সার্কিট হাউস সড়কে ইফতারি বিতরণ শুরু হলে তিনি সারিতে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন এখান থেকে ইফতারি সংগ্রহ করি। বাড়িতে গিয়ে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে খাই। বাজারে সব জিনিসের দাম চড়া। ৫০ টাকার নিচে ইফতার করা যায় না। কিনে খাওয়ার মতো সামর্থ্য নেই আমার।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনলাইন রক্তদান সংগঠনের যাত্রা শুরু ২০১৬ সালে। বগুড়া সদরের চাঁনপুর গ্রামের তরুণ সোহেল রানার (২৭) হাতে সংগঠনটির জন্ম। বগুড়ার সড়ক ও জনপথ বিভাগে (সওজ) খণ্ডকালীন নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে চাকরি করছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি স্বেচ্ছাসেবী নানা কাজে যুক্ত আছেন।

সোহেল রানা বলেন, ২০১৬ সালে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর জন্য এক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না। দীর্ঘক্ষণ পর একজন রক্ত দেন। ওই দিনই বগুড়া অনলাইন রক্তদান সংগঠন নামে ফেসবুকে একটি পেইজ খোলেন। অল্প দিনে সংগঠনটির পরিধি বেড়ে যায়। তাঁর দাবি, সংগঠনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ৮০ হাজারের বেশি মানুষকে রক্তদান করা সম্ভব হয়েছে।

>>>  রোজা: ছোলা বিক্রিতে ভাটা, টিসিবির লক্ষ্যমাত্রা অর্ধেক

স্বেচ্ছাসেবীরা জানান, রক্তদানের পাশাপাশি তাঁরা প্রতি শুক্রবার শহরের প্রায় ১৫০ জন ছিন্নমূল মানুষকে দুপুরের খাবার খাওয়ানো দাইত্ব শুরু করেন। এই উদ্যোগের নাম দেওয়া হয় ‘বগুড়া অনলাইন ফুড ব্যাংকিং’। রোজা শুরুর পর তাঁরা ইফতারসামগ্রী বিতরণ শুরু করেছেন। ফেসবুকে উদ্যোগের কথা জানানোর পর অনেকে তাঁদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। তাঁরা একটি প্যাকেটে ৫০ টাকার ইফতারসামগ্রী দিচ্ছেন। ইফতারির মধ্যে আছে খিচুড়ি, শসা, ডিম, খেজুর এবং বোতলজাত পানি। ঈদের পর তাঁদের দুপুরের খাবার বিতরণ  করা আবার শুরু হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

সর্বশেষ

এই বিভাগের সর্বশেষ

সর্বশেষ :