হাইকোর্ট বলেছেন, ১টি গাছ কাটলে আরও ১০টি গাছ লাগাতে হবে। জনস্বার্থে একান্ত প্রয়োজন হলে অনুমতি নিয়ে দু-একটি গাছ অপসারণ করা যাবে। তবে কাটার আগে গাছ লাগাতে হবে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের সময় ৩০টি তালগাছ উপড়ে ফেলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক শুনানিতে বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান এবং বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এমন অভিমত ব্যক্ত করেন। জলবায়ু সহনশীল গ্রামীণ অবকাঠামো প্রকল্পের পরিচালক মো. মামুনুর রশীদের উদ্দেশে আদালত এই কথা বলেছেন।

প্রকল্প পরিচালকের উদ্দেশে আদালত বলেন, উন্নয়ন পরিকল্পনার স্বার্থে এবং মানুষের সুবিধার্থে এমন যদি হয় প্রয়োজন হয়ে পড়েছে—সেখানে দু-একটি গাছ অপসারণ করা যাবে। এই ক্ষেত্রে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি নিয়ে তা করতে হবে। তবে গণহারে গাছ অপসারণ বা কাটা যাবে না। অনিবার্য প্রয়োজনে যে গাছটা কাটবে, সেই গাছের পরিবর্তে আরও ১০টি গাছ লাগাতে হবে পার্শ্ববর্তী বা অন্য জায়গায়। একই ধরনের গাছ লাগাতে হবে। আগে গাছ লাগাবে, তারপরে কাটবে। আগে কাটবে না।

‘গ্রামের ৩০টি তালগাছ কাটলেন চেয়ারম্যান’ শিরোনামে গত ৪ মে একটি  প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ‘তালগাছ উপড়ে ফেলা হলো’ শিরোনামে ৬ মে সম্পাদকীয় ছাপা হয়। এতে বলা হয়, কলাপাড়া উপজেলায় একটি গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে মহিপুর ইউনিয়নের নজিবপুর গ্রামে এক সপ্তাহ ধরে খননযন্ত্র বা এক্সকাভেটর দিয়ে পরিবেশের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ৩০টি তালগাছকে উপড়ে ফেলা হয়েছে। তালগাছগুলোর বয়স ছিল প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বছর। সম্পাদকীয়টি নজরে এলে ৭ই মে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন।

আদেশ অনুসারে ১৮ মে কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর ইউনিয়নের নজিরপুর কমিউনিটি ক্লিনিক-সংলগ্ন পশ্চিম নজিরপুর এলাকায় মাটির সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে মহিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ফজলু গাজীর নেতৃত্বে ৫ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার মো. সোবহান হাওলাদারের নিয়োজিত খননযন্ত্র দিয়ে ১৬ থেকে ১৮টি তালগাছসহ অন্যান্য প্রজাতির বেশ কিছু গাছ কাটার সত্যতা পাওয়া গেছে।

১৮ মে হাইকোর্ট চেয়ারম্যান মো. ফজলু গাজী এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. সোবহান হাওলাদারকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেন। ঘটনার বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে কলাপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী কাজী মো. ফয়সাল বারীকে হাজির হতে নির্দেশ দেন। ধার্য তারিখ ৩০ মে তিনি আদালতে উপস্থিত হয়ে থাকেন।  

এদিকে ৩০শে মে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে জানান, ফজলু গাজী ওএবং সোবহান তালুকদারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শুনানি নিয়ে সেদিন আদালত ১৪ জুন রায়ের জন্য দিন রেখে এদিন জলবায়ু সহনশীল গ্রামীণ অবকাঠামো প্রকল্প পরিচালককে আদালতে উপস্থিত থাকতে বলেন। এই অনুসারে বুধবার প্রকল্প পরিচালক মো. মামুনুর রশীদ আদালতে উপস্থিত হন ও আদালত তাঁর বক্তব্য শোনে থাকেন।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল উম্মে মাসুমুন নেসা। আদেশ অনুসারে ফজলু গাজী এবং সোবহান হাওলাদার আদালতে হাজির হয়ে থাকেন। তাঁদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. সাখাওয়াত হোসেন এবং কামরুজ্জামান। প্রথম আলোর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার।  
শুনানি নিয়ে আদালত বলেছেন, অনেক মোশন (নতুন মামলা) এবং সময় স্বল্পতার কারণে রায়ের তারিখ পরিবর্তন করে আগামী ৩১শে জুলাই দিন রাখা হলো। সেদিন ফজলু গাজী এবং সোবহান হাওলাদারকে আদালতে হাজির থাকতে হবে।