চার বছর আগে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে খাবারের দোকান দিয়েছিলেন নাজমুল শাদাত। সেই সময় নাজমুলের কাছে ইট, বালু সরবরাহ করেন সাইম খান। এভাবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী নাজমুলের সাথে পরিচয় হয় সাইমের। দুজনই সিদ্ধিরগঞ্জেরই বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে।
২০২১ সালের শুরুর দিকে একসাথে ব্যবসার কথা বলে নাজমুলের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা নেন সাইম। নাজমুল তাঁর জমানো টাকা, নিজের প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্য তহবিল এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ওই টাকা দেন। কিন্তু ছয় মাসেও লভ্যাংশ না পেয়ে পুরো টাকা ফেরত চেয়ে থাকে নাজমুল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে একের পর এক মামলা দিয়ে নাজমুলকে ফাঁসানোর চেষ্টা করে থাকে সাইম। তবে পুলিশ তদন্তে নামার পর নিজের ফাঁদে নিজেই ধরা পড়েন সাইম। গত ১৫ মে সাইমসহ চারজন গ্রেপ্তার করার পর এখন সে কারাগারে।
বাসায় ইয়াবা রেখে পুলিশে খবর
ঢাকার রমনা পার্কের সরকারি প্রকল্পে ইট এবং বালু সরবরাহের কাজ পাওয়ার কথা বলে নাজমুলের কাছ টাকা নেন সাইম। বিনিময়ে তাঁকে লভ্যাংশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে।
পাশাপাশি সাইম নিজের একটি ব্যাংক চেক দেন নাজমুলকে। ছয় মাস পর লাভের এক টাকাও না পেয়ে তিনি সাইমের দেওয়া চেক নিয়ে ব্যাংকে যান। জানতে পারেন, ওই হিসাবে টাকা নেই। পরে সাইমের বিরুদ্ধে চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা করে থাকেন নাজমুল।
সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এই অবস্থায় প্রতিশোধ নিতে সাইম ২০২১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর নাজমুলের গৃহকর্মীকে দিয়ে তাঁর (নাজমুল) বাসায় ১৮৬টি ইয়াবা বড়ি রেখে পুলিশকে খবর দিয়ে থাকেন। পরদিন গৃহকর্মীকে আটক করা হয়। তিনি পুলিশের কাছে স্বীকার করেন যে, সাইম তাঁকে ইয়াবা বড়ি রাখার জন্য টাকা দেন। তদন্ত শেষে পুলিশ সাইমের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন।
চেক প্রত্যাখ্যানের মামলায় গত বছরের শেষের দিকে সাইমের দেড় বছর কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড হয় উল্লেখ করে তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, এরপর পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। দুই মাস কারাভোগের পর হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন সাইম। জামিনে বেরিয়ে নাজমুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দেন তিনি।
কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করিয়ে মিথ্যা মামলা
পুলিশ জানায়, চেক প্রত্যাখ্যানের মামলায় সাইম কারাগারে যাওয়ার পর সেখানে হৃদয় এবং বেলালসহ আরেক জনের সাথে পরিচয় হয়। দুই মাস পর সাইম জামিনে বেরিয়ে আসেন। এরপর বেরিয়ে আসেন হৃদয় ও বেলাল। কারাগার থেকে বেরিয়ে সাইম নতুন ফন্দি আঁটেন। তিনি কারাগারে থাকা ওই তৃতীয় ব্যক্তির স্ত্রী খাদিজা আক্তারের সাথে তিন লাখ টাকার একটি চুক্তি করেন। এর সাথে যুক্ত করেন হৃদয় এবং বেলালকেও।
চুক্তি অনুযায়ী খাদিজার সাথে যোগসাজশ করে তাঁর বাসা থাকা কিশোরীকে গত ১২ মে ঢাকার কদমতলীর সাদ্দাম বিপণিবিতান এলাকা থেকে তুলে নেন হৃদয় এবং বেলাল।
সেখান থেকে নেওয়া হয় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। সেখানে একটি ঘরে হৃদয়, বেলাল এবং ওই ঘরের মালিক কালু কিশোরীকে ধর্ষণ করেন। ভোরে কিশোরীটিকে তাঁরা সাদ্দাম বিপণিবিতান এলাকায় রেখে যান। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান খাদিজা। ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ি থেকে কদমতলী থানাকে জানানো হয় যে, কিশোরী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ১৩ মে সকালে হাসপাতাল থেকে থানায় ফোন দিয়ে জানানো হলেও ওই কিশোরী রাতে মামলা করতে থানায় আসে। মামলার বাদী হন কিশোরীর খালা দাবি করা খাদিজা আক্তার। মামলায় নাজমুল এবং তাঁর পরিচিত সুমন মিয়া নামের এক বিদ্যুৎমিস্ত্রিকেও আসামি করা হয়।







