
আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) আগারগাঁও থেকে দিয়াবাড়ী পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার লাইনে চালু হচ্ছে মেট্রোরেল। সে উপলক্ষে স্টেশন ও সড়কের মিডিয়ানগুলো আকর্ষণীয়ভাবে সাজানো হয়েছে।
অল্প কিছু কাজ বাকি রয়েছে, সেগুলোও এখন তড়িঘড়ি করে করানো হচ্ছে। ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রথম এই বৈদ্যুতিক ট্রেনের উদ্বোধন করবেন। পরের দিন অর্থাৎ ২৯ তারিখ থেকে সকাল ও বিকেলে ২ ঘণ্টা করে মোট ৪ ঘণ্টা চলবে মেট্রোরেল।
উদ্বোধন উপলক্ষে মিরপুর সাড়ে ১১ থেকে ক্যান্টনমেন্ট এর অভ্যন্তর দিয়ে মেট্রোরেল বরাবর নিচের সড়ক বরাবর উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প ও দিয়াবাড়ীতে চলাচল বন্ধ করা হয়েছে।
উদ্বোধনের দিন ঐ সড়ক দিয়ে উত্তরার উত্তর স্টেশন বা মেট্রোরেলের ১ নম্বর স্টেশনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি সুধী সমাবেশে অংশগ্রহণ করবেন।
সমাবেশ শেষে তিনি মেট্রোরেলের ১ নম্বর স্টেশনসংলগ্ন নামফলকের উদ্বোধন করবেন। এরপর উত্তরার উত্তর স্টেশন অর্থাৎ ১ নম্বর স্টেশন থেকে মেট্রোরেলে চড়ে আগারগাঁওয়ে মেট্রোস্টেশন হয়ে মেট্রোরেলের উদ্বোধনী কর্মসূচি শেষ করবেন।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানায়, দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সবগুলো স্টেশনের সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখন বারবার মেট্রোরেল চালিয়ে খুঁটিনাটি বিষয়গুলো চেক করা হচ্ছে।
আগারগাঁও মেট্রোস্টেশনে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বলেন, স্টেশনটি তিনতলাবিশিষ্ট যার দ্বিতীয়তলা বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সেখানে যাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু দোকান বসানো হবে। ওই বাণিজ্যিক জায়গায় নির্দিষ্ট কিছু খাবার বিক্রি করা হবে। তবে আগুন জ্বালিয়ে সেখানে কোনো ধরনের খাবার তৈরি করার সুযোগ থাকবে না। মেট্রোস্টেশন কম্পাউন্ডের অভ্যন্তরে ধুমপান ও নিষিদ্ধ।
সকল শ্রেণির নাগরিকের কথা বিবেচনা করেই মেট্রোরেল তৈরি করা হয়েছে। সেখানে হেঁটে চলার সিঁড়ি, চলন্ত সিঁড়ি ও লিফটের ব্যবস্থা রয়েছে। বয়স ও শারীরিক সক্ষমতার বিষয় বিবেচনা করে এসব সুবিধা ভোগ করবেন যাত্রীরা। প্রতিবন্ধীরা লিফটে চড়বেন, বয়স্করা চলন্ত সিঁড়িতে চড়বেন এবং তরুণ ও যুবকরা সাধারণ সিঁড়ি বেয়ে মেট্রোস্টেশনে ওঠানামা করবেন।
বহু প্রতীক্ষিত মেট্রোরেল বা এমআরটি-৬ এর উদ্বোধনের পর প্রাথমিকভাবে সকাল ও বিকালে পালা করে দুই ঘণ্টা করে মোট চার ঘণ্টা চলবে। উত্তরা উত্তর স্টেশন বা প্রথম স্টেজ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে এই বিদ্যুৎচালিত ট্রেন। পথের দূরত্ব হবে ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। উদ্বোধনের দিনই উক্ত স্টেশন দুটি খুলে দেওয়া হবে। সে অনুযায়ী সব ধরনের প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
মেট্রোরেলের এই অংশের বাকি সাতটি স্টেশনও পর্যায়ক্রমে অর্থাৎ ধাপে ধাপে খোলা হবে। যাত্রীদের চাহিদা মোতাবেক মেট্রোরেলের শিডিউল নির্ধারণ করা হবে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত স্টেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে-উত্তরার উত্তর স্টেশন (দিয়াবাড়ী), উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ স্টেশন, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও। উদ্বোধনের দিন শুরুর ও শেষের মেট্রোস্টেশন খুলে দেওয়া হবে। পরে ধাপে ধাপে অন্য গুলোও খুলে দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য যে, মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া হবে ১০০ টাকা এবং কমলাপুর পর্যন্ত চালু হলে ভাড়া হতে পারে ১২০ টাকা। প্রথম পর্যায়ে, উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত যাত্রীপ্রতি ভাড়া হবে ৬০ টাকা। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার ২০১২ সালে মেট্রোরেল প্রকল্প গ্রহণ করে এবং ২০১৭ সালে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। জাপানের সহযোগী সংগঠন -জাইকা, এই প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। দিয়াবাড়ী থেকে কমলাপুর পর্যন্ত প্রায় ২১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই মেট্রোরেল নির্মাণে খরচ হচ্ছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। আর মেট্রোরেল পরিচালনার জন্য প্রথম বছরে সরকার বরাদ্দ করেছে ১ হাজার কোটি টাকা।
প্রকাশক: মনসুর মো. এন হাসান
সম্পাদক: মো. আশরাফুল ইসলাম
প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী-সম্পাদক: আনোয়ার সজীব