সিলেট বিভাগের আলোচিত সংসদীয় আসন ২২৭, সুনামগঞ্জ-৪ জাতীয় পার্টির ঘাটি হিসেবে পরিচিত। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের আসন বিন্যাসে সুনামগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে (সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত) সুনামগঞ্জ-৪ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মমতাজ ইকবাল কে লাঙ্গল প্রতীকে মনোনয়ন দেয়া হয়। মমতাজ ইকবাল বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।
দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সুনামগঞ্জ-৪ আসনে সুনামগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক এডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ কে মনোনীত করলে পীর মিসবাহ প্রথমবার বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হলেও দ্বিতীয়বার বিপুল ভোটে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নিজের দলীয় প্রার্থী না থাকায় পীর মিসবাহ টানা দশ বছরে তৃণমূল পর্যায়ে মহাজোট সরকারের উন্নয়নকে পৌঁছে দিয়েছেন। ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা মিসবাহ নিজের মেধা রাজনৈতিক প্রজ্ঞাকে কাজে লাগিয়ে টানা দশ বছরে তৃণমূল পর্যায়ে নিজের প্রতি সাধারণ মেহনতী মানুষের আস্থা-ভরসা বেশ শক্ত পোক্ত করেছেন।
নিজের সংসদীয় আসনের বাহিরেও মহান জাতীয় সংসদে আইন প্রণেতা হিসেবে, দুর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ করে সারা দেশে সুনাম কুড়িয়েছেন।
পীর মিসবাহ’র সবচেয়ে বড় গুণ হলো ক্যাডারবিহীন স্বচ্ছ রাজনীতি। ক্ষমতার দশ বছরে কোনো ক্যাডার বা টেন্ডার বাহিনী আশ্রয়-প্রশ্রয় পায়নি, ছত্রছায়ায় আসতে পারেনি। কৃষক শ্রমিক সাধারণ মানুষদের নিয়েই রাজনীতির মাঠ ঘাট চষে বেড়ান। আজকাল এই গুণ অনেক উচ্চ বিলাসী নেতাদের মধ্যে দেখা যায় না। ভোটের মাঠে নেতার চেয়ে ভোটারদের ক্ষমতাটাই বেশি। ভোটের মাঠে পীর মিসবাহর শক্তি জনগণ। যে সুযোগটা বিগত দশ বছরে তৈরি করেছেন মিসবাহ।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর টানা ১৫ বছর ক্ষমতার বাহিরে থাকা সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ এর শীর্ষ নেতারা দলীয় মনোনয়ন চাইলেও দলের কোনো নেতাদের মনোনয়ন না দিয়ে বাংলাদেশ পাবলিক সার্বিস কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক কে মনোনয়ন দেয়ায় আওয়ামী লীগের ত্যাগী তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষে দেখা যায়। জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান ও সাবেক সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ মনোনয়ন বঞ্চিতদের কর্মীরা হতাশ।
হতাশার নির্বাচনী মাঠে হঠাৎ নৌকার প্রার্থীর আগমনে সুনামগঞ্জের আপামর ভোটারেদের কাছে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের ঘন্টা বাজাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কৌশলগত ইঙ্গিতে স্পষ্ট বুঝা যায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। দশ বছরে ভোটারদের সাথে সুহৃদ সম্পর্ক গড়ে তোলা পীর মিসবাহ ভোটের যুদ্ধে জয়ী হবার পূর্বাভাস সুনামগঞ্জের রাজনীতি সচেতন মানুষের মুখে সুস্পষ্ট মনে হচ্ছে।