
‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করমু। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।’
কাঁটা ফুটিয়েছে এই মন্তব্য কে ঘিরে । জাকির হোসেন নামের এক দিনমজুরের এই বক্তব্য উঠে এসেছিল প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত ‘সবই ঠিক আছে, কিন্তু সবকিছুর দাম বেশি, এখন জীবন অনেক কঠিন’ প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনটি ২৭ মার্চ তারিখে হালনাগাদ করা। হালনাগাদ বলতে, ফেসবুকে তোলা ছবির কার্ডে একটি বিভ্রান্তির সুযোগ থাকায় সেটি তুলে নেওয়া ও শিরোনামটি পাল্টে দেওয়া।
ছবির কার্ডে ‘ভুল’ তথ্য, ‘বানোয়াট’ বক্তব্য—এসব প্রতিক্রিয়া অজুহাতমাত্র। অনেকটা যেন, ‘তুই পানি ঘোলা করিস নাই, তোর বাপ করেছে!’ পানি যে আদৌ ঘোলা নয়, সেটাও দেখার বালাই নেই।
আসল ক্ষোভটা হলো এই যে কেন কেউ এমন ‘উন্নয়নবৈরী’ অপ্রিয় সত্য বলবেন ও তাঁর কথাটি কেন সাংবাদিক সবার কানে পৌঁছে দেবেন? তা-ও আবার এমন দিনে, যেদিন জাতি স্বাধীনতার আনন্দে-স্মরণে উদ্ভাসিত হচ্ছে।
কেন মনে করিয়ে দেবেন, এখনো চাহিদামতো খাবার জোগাড় করতে গিয়ে দেশের মানুষদের একটা বড় অংশেরই ঘাম ছুটে যাচ্ছে।
প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান দিনমজুর জাকিরের ক্ষুব্ধ কথাটি আমাদের শুনিয়েছিলেন। তাই তাঁকে কোনো তীর্থস্থান এবং দুটি কারাগার দর্শন করে আসতে হলো। তারপরেই তিনি জামিন পেয়েছেন।
প্রতিবেদন প্রকাশ করার মালিক সম্পাদক। তাঁকেও আদালতে দাঁড়িয়ে আগাম জামিন নিতে হলো। নিতে তো হবেই। বাঘে ছুঁলে ১৮ ঘা, পুলিশে ছুঁলে ৩৬ ঘা, কারা যেন ছুঁলে ৭২ ঘা। আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ছুঁলে কটা ঘা, তা অবশ্য কেউ এখনো গুনে সারতে পারেনি।
তবে সেসব কথা যাক। জাকির হোসেন যা বলেছিলেন, আমার ৩৫ বছর সাংবাদিকতার জীবনে অনেকের নানা সমস্যা আর দাবির তেমন কথা আমি বিভিন্ন প্রতিবেদনে আকসার লিখেছি—এরশাদ আমলে, বিএনপি এর আমলে, আওয়ামী লীগের আমলে, সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এর আমলে, বিবিধ জোট সরকারের আমলে, এমনকি করোনাকালে বর্তমান সরকারের আমলে। তা হলে তো আমি বড় বেঁচে গেছি বলতে হবে, আমার দিকে কেউ তেড়ে আসেনি।
যেসব কথা কাঁটা বলে গণ্য হতে পারে, একই প্রতিবেদন থেকে তেমন আরও দুটো কথা বলি:
‘এখন স্মৃতিসৌধের ভেতরে ঢুকতে দেয় না। কাল (আজ) ঢুকতে দিব। তখন অনেক ফুল বিক্রি হইব।’—গত ২৫ মার্চ স্মৃতিসৌধের সামনে এ কথা বলেছিল ফুল বিক্রেতা শিশু সবুজ।
হোসাইন নামের আরেক শিশু বলেছিল, ‘বাসায় চাইল (চাউল) নাই, তাই খাই নাই। দুই ভাই মিলে ফুল বেচি। এরপরেই চাইল কিনুম। কাইল অনেক ফুল বেচুম। সব দিন এমন বেচা গেলে ভালো হইত।’
প্রকাশক: মনসুর মো. এন হাসান
সম্পাদক: মো. আশরাফুল ইসলাম
প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী-সম্পাদক: আনোয়ার সজীব