ঢাকা, সোমবার, ১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কুঁড়েঘর’ থেকে কোটি পতি

দৈনিক স্লোগান, লাইফস্টাইল


বাসায় সবার সামনে তাঁকে জোর করেও গান গাওয়ানো যেত না। তবে সুযোগ হলে ওয়াশরুম অথবা বেডরুমের দরজা বন্ধ করে নিজে নিজেই গান গাইতেন। এতোটাই লাজুক ছিলেন যে বন্ধুদের আড্ডাতেও সে গান গাইতে বুক কাঁপত। গানগুলো কে কীভাবে নেবে, এই ছিল ভয়। সেই লাজুক গায়কই সব দ্বিধা কাটিয়ে ‘নিথুয়া পাথারে’ শিরোনামে একটি গান মুঠোফোনে রেকর্ড করেন। ২০১৫ সালে বন্ধুর বাসা থেকে ভয়ে ভয়ে ফেসবুকে গানটি পোস্ট করেন। সেই গানে ৯০ জন ইতিবাচক মন্তব্য করে। সেদিনই তাঁর মনে হয়েছিল, তিনি গান করলে ৯০ ভাগ না হলেও ৫০ ভাগ মানুষ তো তাঁর গান পছন্দ করবেন। এই আত্মবিশ্বাসই তাঁকে গান করতে উৎসাহ জোগাল। কুঁড়েঘর নামে একটি ব্যান্ড গড়ে তুললেন তরুণ গায়ক তাসরিফ খান।

সেই কুঁড়েঘর ব্যান্ডের কোনো কোনো গানের ভিউ এখন তিন থেকে চার কোটি। ভিউয়ে কোটিপতি তাসরিফদের ফেসবুকে পোস্ট করা গান ভাগাভাগি করেন লাখ লাখ ভক্ত। প্রতিদিন তাঁরা দেশের নানা প্রান্ত থেকে যেমন ডাক পান, তেমনি বিদেশ থেকেও গান করার বায়না আসে মাঝে মধ্যেই। তাঁদের আমন্ত্রণ থাকা মানেই আয়োজকদের আলাদা প্রস্তুতি। কারণ, সেই কনসার্টে ছয় থেকে সাত জেলার ভক্তরা এসে হাজির হন। শত শত ভক্ত তাঁর সাথে দেখা করার জন্য দাঁড়িয়ে থাকেন। ‘ময়নারে’, ‘সাত রাজার ধন’, ‘তাইতো আইলাম সাগরে’, ‘ব্যাচেলর’, ‘মধ্যবিত্ত’ তার এই গানগুলো শুনতে চায় হাজার হাজার ভক্ত। ভক্তদের অতি প্রিয় এই কুঁড়েঘরকে গড়ে তুলতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে তাসরিফকে।

‘ভবিষতে গায়ক হতে চাই,’ তাসরিফের মুখে এসব কথা শুনেই অভিভাবকদের এক কথা—‘না, আগে পড়াশোনাই করতে হবে।’ কিন্তু পড়াশোনাতে তাঁর মন নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় একের পর এক অকৃতকার্য হতে থাকেন। অন্যদিকে ব্যান্ড গড়ার জন্যও তিনি তেমন কাউকে পাচ্ছেন না। শেষে বড় ভাই তানভীর সিদ্দিকী আর ছোট ভাই তানজীব খানকে নিয়েই শুরু হলো কুঁড়েঘর ব্যান্ডের পথ চলা। পরে যুক্ত হয় তার বন্ধুরা। কিন্তু কাউকেই ধরে রাখা যাচ্ছিল না। কেউ বাবার কথায়, কেউ বিয়ে করে কুঁড়েঘর থেকে সরে দাঁড়ায়, কারও আবার মনে হয়েছিল, এই দল টিকবে না। তিন বছর ধরে এভাবেই চলে কুঁড়েঘর। তবে ২০২১ সাল থেকে দলে নিয়মিত আছেন তানজীব খান, ইয়ামীন প্রান্ত, প্রিয়ম মজুমদার, ইমরান হোসেন, ফরিদুল হক এবং শামসুল আলম।

>>>  আজ ‘সবার ওপরে তুমি’ দিবস

তাসরিফ বলেন, ‘ব্যান্ড শুরুর পেছনে জেমস ভাইয়ের স্টেজ শোগুলো দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে আমাকে। তাঁর কনসার্টে গিয়ে দেখতাম, গাছের ডালে, বাড়ির ছাদে এবং মাঠে কানায় কানায় শ্রোতারা। তখন ভাবতাম, ইশ্‌ আমাদের গান যদি এত মানুষ শুনতেন। ভাবতাম আমরাও একদিন বড় হব। পরে আমাদের ব্যান্ডের প্রথম গান ইউটিউবে ছাড়ি। সেখানে এক দিনেই গানটি দেখেন চার শ মানুষ। আমার সাবস্ক্রাইবার ছিলেন ২৪ জন। সেদিন রাতে আমি কেঁদে ফেলেছিলাম। আমার শুধুই মনে হচ্ছিল, চার শ মানুষ একটা মাঠে আমার গান শুনছেন। এটাই বিশাল ছিল। মনে হয়েছিল, আমাকে গানই করতে হবে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

সর্বশেষ

এই বিভাগের সর্বশেষ

সর্বশেষ :