দুবাইয়ের আলোচিত জুয়েলারি দোকান মালিক আরাভ খান ওরফে সোহাগ মোল্লা ওরফে রবিউল ইসলাম রবি দেশের ৬৪টি জেলায় ৬৪টি মসজিদ তৈরির ঘোষণা দিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ )দুপুর ১২টার দিকে আরাভ খান তার ফেসবুক লাইভে এসে এ ঘোষণা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি একজন দিনমজুরের ছেলে। আমাকে ঢাকায় এসে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। হোটেলেও কাজ করেছি। অনেক কষ্ট করে আমি আজ এ অবস্থানে এসেছি। আল্লাহ যদি আমাকে সুস্থ রাখে তাহলে খুব শিগগিরই দেশের ৬৪টি জেলায় ৬৪টি মসজিদ নির্মাণ করব।
নিজের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলার কথা তুলে ধরে আরাভ খান বলেন, ‘আমার নামে মামলা হয়েছে এ কথা সত্য। তবে আমি কোনো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নই। পুলিশ আমাকে অস্ত্র মামলায় জেলে দিয়েছে, এ কথাও সত্য। তবে আমি কোন দোষী না। আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় জেলে যেতে হয়েছে। আবার জামিনেও বের হয়ে এসেছি। আদালত যদি আমাকে কোন সাজা দেয় তাহলে আমি সে সাজা মাথা পেতে নেব।’
তিনি আরো বলেন, ‘অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও সাকিব আল হাসান ভাই আমার স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করেছেন। এর জন্য আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ।’
নিজের ব্যবসা সম্পর্কে আরাভ খান বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে আমি আমার এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দাঁড় করেছি। এখানে আমার কিছু ব্যাবসায়িক প্রতিপক্ষ তৈরিও হয়েছে। তারাই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা রটাচ্ছে। গণমাধ্যমে যেসব খবর আসছে তা পুরোপুরি সত্য নয়।’
এর আগে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান দুবাই এর হিন্দ প্লাজায় ‘আরাভ জুয়েলারি’ নামে এই স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করেন। দোকানটির মালিক কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ ইউনিয়নের আশুতিয়া গ্রামের আরাভ খান। তবে তার প্রকৃত নাম হচ্ছে সোহাগ মোল্লা বলে জানিয়েছে সেখানকার এলাকাবাসী।
সোহাগ মোল্লা আশুতিয়া গ্রামের দিনমজুর মতিয়ার রহমান মোল্লার ছেলে। মতিয়ার একসময় বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলায় ফেরি করে হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করতেন। সেখানেই ১৯৮৮ সালে সোহাগ মোল্লার জন্ম হয়। ২০০৫ সালে চিতলমারী সদরের একটি বিদ্যালয় থেকে সোহাগ মোল্লা এসএসসি পাস করেছেন। দারিদ্র্যের কারণে এরপর আর তার লেখাপড়া করা হয়নি।
চিতলমারী থেকে ২০০৮ সালে তিনি ঢাকায় চলে যান। সেখানে গিয়ে তার নাম পরিবর্তন করে হয়েছেন মোল্লা আপন। জড়িয়ে পড়েন অপরাধের জগতে। পুলিশ হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের কারণে ঢাকার বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে ডজনখানেক বেশি মামলা হয়েছে।
২০১৮ সালের ৭ জুলাই রাজধানীর বনানীর একটি ফ্ল্যাটে খুন হন পরিদর্শক মামুন। তাকে জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কথা বলে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর আরাভ খান ওরফে সোহাগ মোল্লা ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। এই মামলায় ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল গোয়েন্দা পুলিশ সোহাগ মোল্লা ওরফে রবিউলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। পুলিশ হত্যার মামলায় তার ভাড়া করা এক ব্যক্তি আত্মসমর্পণ করে ৯ মাস জেল খেটে বের হন! ২০২০ সালে ভারতীয় পাসপোর্ট পান তিনি। যাতে তার নাম বদলে লেখা হয়েছে ‘আরাভ খান’।
কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘সোহাগ মোল্লা ওরফে মোল্লা আপন, ওরফে রবিউল ইসলাম রবি, ওরফে শেখ হৃদি, ওরফে আরাভ খানের বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত ৯টি ওয়ারেন্ট আমার থানায় এসেছে। আমি ওয়ারেন্টগুলো তামিল করার জন্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু তার কোনো হদিস আমরা পাচ্ছিলাম না।’
