ময়লা পানিতে পোলিও শনাক্তকরণে নতুন একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন এই পদ্ধতিতে আগের চেয়ে কম সময়েএ মধ্যে পোলিও শনাক্ত করা যাবে বলে দাবি করেছেন তারা। ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে এই গবেষণার পরিচালনা করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি এমএইচআরও এই গবেষণা পরিচালনা করে।

তথ্যঃ দ্য গার্ডিয়ান

দ্য জার্নাল অব ইনফেকশাস ডিজিজে নতুন পদ্ধতির কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে গবেষক দল। ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত শিশুদের মলের তথ্য ব্যবহার করে তারা এই পদ্ধতি শনাক্ত করেছে। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ পোলিওর ঝুঁকিতে আছে বলে ব্যাখ্যা করেছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা।

নতুন পদ্ধতিতে ২৩ দিনের মধ্যে পোলিও শনাক্ত করা যাচ্ছে, যেখানে আগে সময় লাগত ৪২ দিনের মতো। এই পদ্ধতি ৯৯ শতাংশ কার্যকর বলে পরীক্ষায় ফলাফল পাওয়া যায়। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষক অ্যালেক্স শ বলেন, ‘এ পদ্ধতি পোলিওর ধরন শনাক্তে খুব কার্যকর। পোলিও সংক্রমণের সময় দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে এই শনাক্তকরণ পদ্ধতি বেশ সফল হবে বলে আমরা মনে করি। বিভিন্ন প্যাথোজেন শনাক্তকরণের মাধ্যমে আমরা পোলিওর উপস্থিতির  দ্রুত টের পাচ্ছি।’

আগের পদ্ধতিগুলোর ৪০ থেকে ৪২ দিন পর্যন্ত লেগে যায় পোলিও শনাক্তে, এতে জনস্বাস্থ্যবিদদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের গতি ধীর হয়ে যায়। সাধারণভাবে মল সংগ্রহের মাধ্যমে ল্যাবে পরীক্ষা করে পোলিওর উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়ে থাকে।  নতুন এই পদ্ধতির নাম হচ্ছে ডিডিএনএস। এই পদ্ধতি অনুসারে স্থানীয়ভাবে মল পরীক্ষার সুযোগ আছে। আগে আফ্রিকার নানা দেশে মল সংগ্রহ করে নির্ধারিত ল্যাবে পরীক্ষা করা হতো। অনেক ক্ষেত্রে ল্যাবগুলো দূরের কোনো দেশে পরিচালনা করা হয়। নতুন এই পদ্ধতিতে গড়ে ১৯ দিনের মধ্যেই ফলাফল সংগ্রহ করা যাচ্ছে।

নতুন এই পদ্ধতি পোলিওর জন্য নতুন হলেও একইভাবে ইবোলা, হাম এবং এমপক্স শনাক্তকরণে এরই মধ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। বিজ্ঞানী হাভিয়ের মার্টিন বলেন, ‘বৈশ্বিকভাবে আমরা পোলিও নির্মূলের ক্রান্তিকালীন এক সময়ে বাস করছি। টিকার মাধ্যমে অনেক দেশে পোলিও দূর করা হচ্ছে। আবার নতুন নতুন এলাকায় পোলিওর আবির্ভাব ঘটছে। নতুন এই পদ্ধতি দ্রুততার সাথে পোলিওর সন্ধান দিচ্ছে। এরই মধ্যে গবেষক দল এই পদ্ধতি যুক্তরাজ্যে পরীক্ষা করে সাফল্য পেয়েছেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি এবং জুলাইয়ে লন্ডন শহরের পয়োনিষ্কাশনব্য বস্থায় পোলিও ভাইরাসের খোঁজ পাওয়া যায়। তখন এই পদ্ধতিতে পোলিওর শনাক্ত করা যাবে।’

গবেষক অ্যালেক্স শ আরও জানিয়েছেন, লন্ডন, নিউইয়র্ক কিংবা ইসরায়েলের মতো এলাকায় পোলিওর সন্ধান মিলছে, যেই কারণে সতর্ক হতে হবে। উন্নত দেশে যদি পোলিওর দেখা মেলে, তাহলে বলা যায় উন্নয়নশীল দেশে পোলিও এখনো লুকিয়ে আছে। নতুন পদ্ধতি পোলিও দূর করবে না, কিন্তু শনাক্ত করার সময় কমিয়ে দ্রুত কাজ করতে সহায়তা করবে।