ভোজ্যতেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে সীমিত আয়ের মানুষ। যাঁদের এক লিটার, পাঁচ লিটারের তেলের বোতল কেনার সামর্থ্য নেই, তাঁরা অল্প পরিমাণে খোলা তেল কিনে কাজ চালিয়ে নিতে পারেন।

খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের জন্য আজ মঙ্গলবার থেকে সারা দেশে বাজার তদারকিতে নামছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এর আগে খোলা সয়াবিন বন্ধের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কয়েক দফা সময়সীমা নির্ধারণ করে দিলেও সেটা মান্য হতে দেখা যায়নি। একই সময়ে সয়াবিনের আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতার ফলে সরকার চুপচাপ ছিল। এখন সয়াবিনের দাম কমতে শুরু করায় খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করার বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আপাতত বাজারে শুধু খোলা সয়াবিন বিক্রি বন্ধ করা হবে। খোলা পাম এবং পাম সুপারের মতো খোলা তেল বাজারে থাকবে। এখন খোলা সয়াবিন পুরোপুরি মোড়কজাত করে বিক্রি করতে পারলে, পরে অন্যান্য তেলকেও এই নিয়মের আওতায় আনা হবে। অর্থাৎ অন্যান্য তেলও মোড়কজাত করে বিক্রি করতে হবে। সরকার চাইছে, বাজারে খোলা কোনো তেলই যেন না থাকে। ভোজ্যতেলের সব ধরনের পদই মোড়কজাত করে বিক্রি করতে হবে।

অভিযোগ আছে, খোলা অবস্থায় বিক্রির সুযোগ থাকলে ব্যবসায়ীরা অনেক সময় পাম তেলকে খোলা সয়াবিন বলে বিক্রি করেন। আবার কখনো কখনো নিম্নমানের তেলের দামও বেশি দামে বিক্রি করে থাকে বিক্রেতারা। এক পদের তেল বলে অন্য পদের তেল সরবরাহের ঘটনাও ঘটে সচরাচর। এই ছাড়াও ভোজ্যতেল খোলা অবস্থায় থাকলে স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বারবার আলোচনায় উঠে এসেছে।

এই ব্যাপারে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, বাজারে খোলা অবস্থায় সয়াবিন তেল যেন বিক্রি না হয়, সেই জন্য সারা দেশে ৫২টি দল মঙ্গলবার (আজ) থেকেই তদারকি শুরু করবে। মূলত স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং প্রতারণা ঠেকাতে সরকার এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহন করছে।

জানা গেছে, খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের জন্য প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। এরপর এর সাথে যোগ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সরকারের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থার আলোচনায়ও উঠে এসেছে, খোলা তেল বিক্রি বন্ধ করা উচিত। কারণ, খোলা তেল স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে, এমন অভিযোগ রয়েছে অনেক দিন ধরেই। এই জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের গত ডিসেম্বরের মধ্যে শতভাগ তেল মোড়কজাত করে বিক্রির সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।

ভোক্তা অধিদপ্তর বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ভোজ্যতেল কোম্পানিগুলোর সাথে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাতে দেশের বাজারে খোলা সয়াবিন তেল না রাখার ব্যাপারে আবারও কথা দিয়েছে কোম্পানিগুলো। তারা সেভাবে প্রস্তুতিও নিচ্ছে বলে সরকারকে জানিয়েছে। এই ব্যাপারে বাজার তদারকির জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তরকে। ক্রমান্বয়ে বাজার থেকে খোলা সয়াবিন বিক্রি বন্ধে কোম্পানি এবং দোকানদারদের সাথে কাজ করে থাকবে সরকারি সংস্থাটি।

এই ব্যাপারে জানতে চাইলে ভোজ্যতেল বিপণনকারী কোম্পানি টিকে গ্রুপের পরিচালক মো. শফিউল আতহার তাসলিম বলেন, শতভাগ তেল বোতলজাত করা গেলে কোনটি কোন কোম্পানির তেল, তা নিয়ে আর কোনো সংশয় তৈরি হবে না। তবে কাজটা করতে গেলে সবার সম্মিলিত প্রয়াস ছাড়া কোনভাবেই সম্ভব না।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে বছরে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এই তেলের ৭০ শতাংশ পাম তেল। বাকি ৩০ শতাংশ সয়াবিন। সয়াবিনের ৫০ শতাংশ খোলা বিক্রি হয়। বাকি ৫০ শতাংশ বোতলজাত করে বিক্রি হয়ে থাকে। বাজারে বর্তমানে খোলা সয়াবিনের লিটারপ্রতি দাম নির্ধারণ করে দেওয়া আছে ১৫৯ টাকা। আর খোলা পাম তেলের লিটারপ্রতি দাম পড়ছে ১২৮ টাকা করে।