
ভয়াবহ বন্যায় গতকাল বুধবার পর্যন্ত লিবিয়ার দেরনা শহরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে পাঁচ হাজার ৩০০ ছাড়িয়েছে। দেশটির বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী জানিয়েছেন, মৃতের সংখ্যা আরো বেড়ে এখনকার দ্বিগুণের আশঙ্কা রয়েছে।
লিবিয়ার সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, সাগর থেকে এখনো লাশ উদ্ধার হচ্ছে। দেরনা শহরটি পুনর্গঠনে শত কোটি ডলারের ঘরে খরচ হবে।
দেরনা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরের একটি বাঁধ প্রথমে ধসে যায়। এরপর আরেকটি বাঁধ ও চারটি সেতু ভেঙে যাওয়ার পর শহরটি তলিয়ে যেতে থাকে।
জাতিসংঘের অভিবাসনবিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, দেশটির বন্যাকবলিত এলাকায় অন্তত ৩৪ হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। এসব মানুষের আশ্রয় এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য সহায়তা দরকার।
তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সাহায্য করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ বন্যায় ওই অঞ্চলের বেশির ভাগ রাস্তা ডুবে গেছে। বর্তমানে খাদ্যসামগ্রী, বিশুদ্ধ পানি, শিশুখাদ্য এবং ওষুধ বেশি দরকার।
লিবিয়ায় জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বুধবার জানান, কর্মকর্তারা বলছেন অন্তত ১০,০০০ মানুষ নিখোঁজ রয়েছে।
মর্গ এবং হাসপাতালগুলো লাশে ছেয়ে গেছে। দেরনার কাছে একটি হাসপাতালে কর্মরত লিবিয়ার ডাক্তার নাজিব তারহোনি বলেছেন, আরো সাহায্যের প্রয়োজন।
তিনি বিবিসি রেডিওকে বলেন, ‘হাসপাতালে আমার বন্ধুরা আছে যারা তাদের পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য হারিয়েছেন... আবার কেউ সবাইকে হারিয়েছেন। আমাদের শুধু এমন লোক দরকার যারা পরিস্থিতি বোঝে - লজিস্টিক সাহায্য, কুকুর যারা আসলে মানুষের গন্ধ নিতে পারে ও মাটির নিচ থেকে তাদের খুঁজে বের করতে পারে। আমাদের শুধু মানবিক সাহায্য দরকার।
লিবিয়ার ডাক্তার ইউনিয়নের প্রধান মোহাম্মদ আল-ঘৌশ তুর্কি মিডিয়াকে বলেছেন, ‘বিশেষায়িত ফরেনসিক, উদ্ধারকারী দল ও মৃতদেহ উদ্ধারে বিশেষজ্ঞদেরও জরুরি প্রয়োজন রয়েছে।’
এদিকে শহরের রাস্তাগুলো কাদা ও ধ্বংসস্তূপে ভরে গেছে। উল্টে যাওয়া বহু ক্ষতিগ্রস্থ যানবাহনও রাস্তায় স্তূপ হয়ে আছে। স্থানীয় একজন কর্মকর্তা চকিউয়াত বলেছেন, ‘দেরনার কিছু এলাকা সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। একটি আবাসিক এলাকা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে, আপনি এটি আর দেখতে পারবেন না। আমি আগে কখনো এরকম কিছু দেখিনি। এটা প্রায়ই সুনামির মতো।’
দেরনার একজন ফটোসাংবাদিক ত্বহা মুফতাহ বলেছেন, ‘বিশেষজ্ঞরা ২০১১ সাল থেকে বাঁধের বিষয়ে সতর্কতা করে আসছিল কিন্তু কেউই এই বিষয়ে কিছু করেনি।’ তিনি বিবিসির নিউজ আওয়ার প্রোগ্রামে বলেন, ‘বাঁধ ধসের শব্দ বিমান হামলার মতো ছিল। পানি আসা এখন থেমে গেছে ও যা অবশিষ্ট আছে তা কেবল ধ্বংসস্তূপ। বন্যার কবলে পড়া মানুষগুলো পানির নিচেই রয়ে গেছে।’
লিবিয়া ফুটবল ফেডারেশন (এলএফএফ) অনুসারে বেশ কয়েকজন অভিজাত ফুটবলার মারা গেছেন এই বন্যায়। তারা নিহত চার খেলোয়াড়ের নাম প্রকাশ করেছে। তারা হলেন, শাহীন আল-জামিল, মন্ডার সাদাকা, সালেহ সাসি এবং আইয়ুব সাসি।
সূত্র : এএফপি, বিবিসি
প্রকাশক: মনসুর মো. এন হাসান
সম্পাদক: মো. আশরাফুল ইসলাম
প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী-সম্পাদক: আনোয়ার সজীব