ভারতের অন্যতম শীর্ষ ধনী গৌতম আদানি নিজের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দেবেন। এই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে চুক্তিও হয়ে গেছে। ছয় বছর আগে তিনি এই ব্যবসায় ঢুকেছিলেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, আদানি ফিনসার্ভ নামের ওই কোম্পানিতে আদানি ক্যাপিটাল এবং আদানি হাউজিংয়ের ৯০ শতাংশ শেয়ার ছিল। সেই শেয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান বেইন ক্যাপিটালের কাছে বিক্রি করে দেবেন গৌতম আদানি। তবে ঠিক কী পরিমাণ অর্থে আদানি এই শেয়ার বিক্রি করছেন, তা এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

আদানি ক্যাপিটাল এবং আদানি হাউজিংয়ের নেতৃত্বে আছেন গৌরব গুপ্ত। ২০১৬ সালের অক্টোবরে তিনি আদানি গোষ্ঠীতে যোগ দেন। এই ২টি কোম্পানিতে তাঁর ১০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা আছে। কোম্পানি ২টি মোট ৫০ কোটি ডলারের সম্পদ ব্যবস্থাপনা করে। তবে নতুন মালিকের অধীনেও গৌরব গুপ্তের ভূমিকা অপরিবর্তিত থাকবে। অর্থাৎ বেইনের মালিকানায় যাওয়ার পরও ফিনসার্ভের নেতৃত্বে তিনিই থাকবেন।

আদানি ক্যাপিটাল মূলত ক্ষুদ্র এবং অতি ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ দেয়; আর আদানি হাউজিং গ্রামাঞ্চলে স্বল্প সুদে গৃহঋণ দিয়ে থাকে।

খবরে বলা হয়েছে, বেইন আদানি ফিনসার্ভে আরও ১৭ কোটি ডলার বা ১ হাজার ৩৯৪ কোটি রুপি জোগান দিয়ে থাকবে। এই কোম্পানির বাজার মূলধন দুই হাজার কোটি রুপি। তবে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার অনুমোদন পাওয়ার আগ পর্যন্ত কোম্পানিটি আদানি ফিনসার্ভ নামেই কাজ করবে। আদানি-বেইন চুক্তি চলতি বছরের মধ্যেই কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছে অ্যাভেনডাস ক্যাপিটাল এবং রথসচাইল্ড।

গৌরব গুপ্ত সম্পর্কে গৌতম আদানি বেশ উচ্চ ধারণা পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘গৌরব একসময় বিনিয়োগ ব্যাংকার ছিলেন, তখন থেকেই আমি তাঁকে চিনি। তিনি একসময় উদ্যোক্তা হতে চাইলে আমি তাঁকে সহযোগিতাও করেছি। ভারতের আধা শহর এবং গ্রামাঞ্চলের মানুষের জন্য তিনি কেবল উন্নত আর্থিক সেবাই নিয়ে আসেননি, বরং তিনি আদানি গোষ্ঠীতেও বড় ভূমিকা পালন করেছেন।’

নতুন পদক্ষেপ সম্পর্কে আদানি গ্রুপের কর্ণধার বলেন, ‘বেইন ক্যাপিটালের মতো স্বনামধন্য এক বিনিয়োগ গোষ্ঠী এখন ফিনসার্ভের পরিচালনায় আসছে, এতে আমি খুব খুশি। এতে আমার ব্যবসা অনেকটাই বড় হবে বলে আমি আশা করি।’

আদানি যখন আর্থিক ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছেন, ঠিক সেই সময় আরেক শতকোটিপতি, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি এই ব্যবসায় ঢুকছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত নতুন আর্থিক কোম্পানি শেয়ারবাজারেও তালিকাভুক্ত হবে।

তবে গৌতম আদানির এই ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার সাথে হিনডেনবার্গ প্রতিবেদনের যোগ আছে বলে টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে। হিনডেনবার্গের অভিযোগ ছিল, আদানি গোষ্ঠী কারচুপি করে শেয়ারের দর বাড়িয়েছে। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর আদানি গোষ্ঠীর বাজার মূলধন শত শত কোটি ডলারের বেশি কমেছে। আদানি নিজেও শীর্ষ ধনীর তালিকায় তৃতীয় স্থান থেকে নেমে যান। আজ সোমবার সকালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকায় তাঁর স্থান ছিল ২৪তম, সম্পদমূল্য ৫১ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ১৯০ কোটি ডলার।

আদানি ফিনসার্ভ এখন বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। অথচ গত বছরের এই সময় গৌরব গুপ্ত বলেছিলেন, ২০২৪ সালে ফিনসার্ভ প্রাথমিক গণপ্রস্তাব ছাড়বে। তখন অন্তত ১০ শতাংশ শেয়ার বাজারে ছাড়া হবে।