প্রশ্নঃমাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ প্রচারের পর আপনাকে সবচেয়ে বেশি কোন শব্দ বা বাক্য শুনতে হয়েছে?
একটা কথাই সবাই বলছেন, গল্পের জালে সবাইকে আটকাতে পেরেছি। নির্মাণের প্রশংসাও করছেন সবাই। এটা আমার জন্য ভীষণ রকম অনুপ্রেরণার।
প্রশ্নঃ সিন্ডিকেট’–এর অ্যালেন স্বপন জনপ্রিয় চরিত্র হলেও এই চরিত্রে অভিনয় করা নাসির উদ্দিন খান ব্যাপক পরিচিত তারকা নন। তাঁকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে ভেবে আলাদা সিরিজ নির্মাণ করা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিন্তু আমি অনেক আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। আমার বিশ্বাস ছিল, নাসির উদ্দিন খানের অভিনয়ের যে সহজাত ক্ষমতা, প্রকৃতিপ্রদত্ত প্রতিভা, সেটার যদি ৭০ ভাগ পাওয়া যায়, তাহলে চরিত্রটা উৎরে যাবে। কিন্তু দেখলাম, নাসির উদ্দিন খান ১১০ ভাগ দিয়েছেন। সাধারণত বড় তারকাদের ক্ষেত্রে নামের পাশাপাশি গল্পটাও প্রভাব ফেলে থাকে। তাঁদের ক্ষেত্রে প্রথমেই একটা ফলাফল পাওয়া যায়। দর্শকেরা শুরুতেই আগ্রহ বোধ করেন, কারণ অমুক তারকা আছেন, তমুক তারকা আছেন। নাসির উদ্দিন খানকে নিয়ে আমার চ্যালেঞ্জ ছিল, প্রতিটি মুভমেন্ট, অভিব্যক্তি ঠিক ওই জায়গায় পৌঁছানো, মানুষ সেই স্বপনকেই দেখতে চান, যেই স্বপনকে আমি দেখাতে চাই। দর্শক দারুণভাবে গ্রহণ করেছেন।
প্রশ্নঃ আপনাকে প্রেমের নাটক এবং টেলিছবিতে বেশি দেখা গেছে। এমনকি প্রথম চলচ্চিত্রও প্রেমের। অনেকের মতে, এটাই আপনার কাজের আরামদায়ক ক্ষেত্র। ইদানীং সেই আরামের জায়গা থেকে বেরিয়ে গল্প বলছেন। ভিন্নভাবে গল্প বলার অনুপ্রেরণা কোথা থেকে পাচ্ছেন?
শোর ঘোড়া আর কাজের ঘোড়া আলাদা। আমার ক্ষেত্রে শোর ঘোড়াটাই ছিল রোমান্টিক। এটার ব্র্যান্ডিং হয়েছে বাজারজাতকরণের কারণে। অথচ আমার জীবনের প্রথম কাজও কিন্তু সাইফাই থ্রিলার ধাঁচের ছিল। তবে এটা ঠিক, প্রেম, রমকমের ব্র্যান্ডিং হয়েছে। মানুষও তাই ভেবেছেন যে রোমান্টিক ঘরানা শিহাব শাহীনের আরামদায়ক ক্ষেত্র। অ্যালেন স্বপন বা আমি যখন থ্রিলারের দিকে আগস্ট ১৪ দিয়ে যাত্রা শুরু করি, তা কিন্তু নতুন করে শেখা কিছু নয়। এটা আগে থেকেই আমার তৈরি ছিল। হয়তো কাজগুলো সেভাবে করিনি। আমাদের সমসাময়িক পরিচালকদের চিন্তাভাবনা ছিল ভিন্নভাবে গল্প তুলার। আগে এইরকম সুযোগ ছিল না। কয়েক বছর ধরে সুযোগটা আসায় অনেকে সেভাবে গল্পগুলো বলার চেষ্টাও করছেন। মাই জব, আই অ্যাম ডুয়িং টু সেম থিং। সেটা রোমান্টিক কিংবা রহস্য ধাঁচে। ভিন্ন পদ্ধতিতে বলার চেষ্টা করি।
প্রশ্নঃ সিরিজের মূল গল্পের সবাই প্রশংসা করছেন। কিন্তু অনেকের মতে, চিত্রনাট্য আরও একটু টান টান হতে পারত, পর্বসংখ্যাও কমানো যেতে পারত। আপনারও কি তেমন কিছু মনে হয়?
প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্ব দেখে এটা কারও কারও মনে হয়েছে। সত্যি বলতে, একটা চরিত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে স্বাভাবিকভাবেই সময় একটু বেশি লাগে। যাঁদের এই সমস্যা মনে হয়েছে, তাঁদের কাছে প্রথম এখন দ্বিতীয় পর্বের অধিকাংশ সংলাপ চট্টগ্রামের ভাষায়ই ছিল বলে এমনটা মনে হয়েছে। সাবটাইটেল দেখে দেখে বুঝতে হয়েছে। এটা একটু অসুবিধা হতে পারে। আবার চট্টগ্রামের ভাষা যাঁরা বোঝেন, তাঁদের কাছে কোনো পর্বই তেমনটা মনে হয়নি। তারপরও দর্শকের মতামত তো দর্শকের মতামতই। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, এটুকু সময় দিতেই হতো। সময়টুকু না দিলে ‘অ্যালেন স্বপন’ চরিত্রটার প্রতি ন্যায়বিচার করা হতো না।
প্রশ্নঃ ওটিটি আসার পর বলা যায়, নির্মাতা হিসেবে আপনাকে নতুন করে চিনেছেন দর্শক। ‘মরীচিকা’, ‘সিন্ডিকেট’, ‘মায়াশালিক’–এরপর ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ও ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে। ক্যারিয়ারের এই পর্যায় কেমন উপভোগ করছেন?
আমি অনেক উপভোগ করছি। চলচ্চিত্র বড় মাধ্যম হওয়ায় অনেক মানুষেরই চেষ্টা লাগে। অনেক মানুষের চেষ্টায় একটা ফিল্ম তৈরি হয়। ওটিটি আসার কারণে আমরা এত মানুষ মিলে সেসব কাজ করতে পারছি। প্রতিটি বিভাগে আলাদাভাবে বিশেষজ্ঞ দল করা হয়েছে। আগে ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপের ভূমিকাটা সেভাবে পালন করা যেত না। টেলিভিশনে নাটক বানানোর ক্ষেত্রেও অনেক কিছু একজনকেই করতে হতো। এখন সবচেয়ে ভালো মানুষদের নিয়েই কাজ করছি। তাই উন্মুক্ত প্রান্তরে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি মনে হচ্ছে।
