সরকারি চাকরির জন্য অসংখ্য আবেদন করেও পাননি চাকরি। এদিকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সও শেষ। তাই নিজের সব একাডেমিক সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলেছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুস সালাম।
মঙ্গলবার রাতে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পৌর শহরে একটি রেস্টুরেন্টের ভেতর সালাম তার সার্টিফিকেটগুলোকে আগুনে পোড়ান।
পরে সেই সার্টিফিকেট পোড়ানো ছবি এবং ভিডিও নিজের ফেসবুকেও পোস্ট করেন। মুহূর্তেই তার পোস্টটি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
আব্দুস সালাম মোহনগঞ্জ পৌর শহরের দেওথান গ্রামের শামছুর রহমানের ছেলে। শহরের স্টেশন রোডে ‘কুটুম বাড়ি’ নামে তার একটি রেস্টুরেন্টও রয়েছে।
চাকরি না পেয়ে তিনি এই রেস্টুরেন্ট খোলেন।
ঢাকা কলেজের সাবেক ছাত্র আব্দুস সালামের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০০৬ সালে মোহনগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০০৮ সালে ময়মনসিংহের আলমগীর মনসুর (মিন্টু) মেমোরিয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন তিনি। ২০১৬ সালে ঢাকা কলেজ থেকে দর্শন শাস্ত্রে অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। পড়াশোনা শেষে এনএসআই, রেলওয়ে এবং পুলিশের এসআইসহ বিভিন্ন চাকরিতে আবেদন করেও কোন চাকরি হয়নি।
চাকরির বয়স শেষে হতাশ হয়ে নিজের শহরেই রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করেন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে সালাম বলেন, ‘স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছি, রেজাল্টও ভালো ছিল,কিন্তু অসংখ্য আবেদন করেও চাকরি হয়নি। অথচ লবিং-ঘুষে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরাও চাকরি পেয়েছে। এখন আমার বয়স ৩৬ বছর। সরকারি-বেসরকারি কোনো চাকরিতেই আর আবেদনের সময়সীমা নেই।
অকেজো এই সার্টিফিকেট তাই পুড়িয়ে দিয়েছি। সরকারি চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি জানাই। এতে আমার না হোক পরবর্তী প্রজন্মের উপকৃত হবে। তাদের হয়তো এভাবে হতাশায় আর সার্টিফিকেট পুড়িয়ে দিতে হবে না।’
এর আগে সরকারি ইডেন কলেজের এক ছাত্রী সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলার পর সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগে তার চাকরির সুযোগ হয়েছে।
বয়সসীমা সবার জন্য না বাড়িয়ে সার্টিফিকেট পোড়ানোর কারণে ইডেন কলেজের ছাত্রী মুক্তাকে চাকরি দেওয়া ঠিক হয়নি উল্লেখ করে সালাম বলেন, ‘এটা মন্ত্রী মহোদয় ঠিক করেননি। একজনের জন্য আলাদা নিয়ম হতে পারে না। সবার জন্যই চাকরির বয়সসীমা বাড়ানো দরকার। তাহলে সবাই এই সুযোগটা পাবে।’
মোহনগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছাব্বির আহমেদ আকুঞ্জি বলেন, ‘এভাবে সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলা ঠিক নয়। পড়াশোনা আসলে চাকরি পাওয়ার জন্য নয়, জ্ঞান অর্জনের জন্য। এ জ্ঞান জীবনের সব ক্ষেত্রেই কাজে লাগবে। সবার তো চাকরি হয় না। তাই চাকরির চেষ্টার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হওয়ার জন্যও চেষ্টা করতে হবে। তাহলে এই হতাশাগুলো আর থাকবে না।’








