আগামী চার বছরে ই-কমার্সের বাজার আরও প্রায় ৪০০ কোটি ডলার বাড়বে। বর্তমান বাজারদরে এর পরিমাণ প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকা। ২০২২ সাল শেষে ই-কমার্সের বাজারের আকার ছিল প্রায় ৬৬০ কোটি ডলার। এই বাজার আগামী চার বছরে আরও বাড়বে। ২০২৬ সাল নাগাদ তা বেড়ে গিয়ে দাঁড়াতে পারে ১ হাজার ৫০ কোটি ডলার। বর্তমান বাজারদরে এর পরিমাণ ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
গতকাল শনিবার ডিজিটাল অর্থনীতি থেকে কর আদায়সংক্রান্ত এক সংলাপ অনুষ্ঠান আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সেখানে একটি গবেষণার হিসাব দিয়ে ই-কমার্সের বাজার সম্প্রসারণের সম্ভাবনার এই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সিপিডি মনে করেন, ডিজিটাল অর্থনীতি থেকে কর আদায় বাড়াতে হলে রাজস্ব প্রশাসনের সংস্কার করা প্রয়োজন। আবার কর সুবিধা যৌক্তিকভাবে দিতে হবে।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সংলাপ আয়োজনে সহায়তা করেছে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা ডিজিটাল অর্থনীতির আকার বৃদ্ধির সঙ্গে এই খাত থেকে কর আদায়ে জোর দেন। তাঁদের মতে, ডিজিটাল অর্থনীতির সম্প্রসারণ হলেও কাঙ্ক্ষিত কর আদায় করা যাচ্ছে না। কর দেওয়ার পদ্ধতি সহজ করলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। হয়রানি বন্ধ করতে হবে। এই ছাড়া ফেসবুক, গুগল, অ্যামাজনের মতো অনাবাসী প্রতিষ্ঠানের কাছে কর আদায়েরও উদ্যোগ নিতে হবে।
■ ফেসবুকে সক্রিয় এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয় বৃহত্তম দেশ।
■ ফেসবুক, গুগল, অ্যামাজনসহ ৯টি অনাবাসী প্রতিষ্ঠান কর দিয়েছে মাত্র ৩৮৫ কোটি টাকা।
■ ২০২৭ সালে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়াবে ১ কোটি ১৩ লাখ।
■ ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয়ে শীর্ষ ১০টির মধ্যে বাংলাদেশ অষ্টম।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। মূল প্রবন্ধে তিনি ডিজিটাল অর্থনীতি সম্প্রসারণের কিছু উদাহরণ তুলে ধরেন। কিন্তু সেই সঙ্গে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব না হওয়ার কিছু উদাহরণও দেন তিনি।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ফেসবুক, গুগল, অ্যামাজনের মতো অনাবাসী প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে এসেছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে এর ব্যবসা সম্প্রসারিত হবে। নাগরিকেরা ফেসবুকে বেশ সক্রিয় এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। এই সূচকে ভারত এবং ফিলিপাইন প্রথম এবং দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। কিন্তু ২০২১-২২ অর্থবছরে ফেসবুক, গুগল, অ্যামাজনসহ ৯টি অনাবাসী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মাত্র ৫৮ কোটি টাকার মতো ভ্যাট পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সব মিলিয়ে কর মিলেছে ৩৮৫ কোটি টাকা।
মূল প্রবন্ধে আরও বলা হয়, অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের (অ্যাটকো) হিসাবে, গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজনসহ ইন্টারনেটভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বছর ২ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের ২০১৯ সালের হিসাবে, দেশের পাঁচটি মোবাইল ফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠান আগের পাঁচ বছরে গুগল, ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানকে ৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার ডিজিটাল বিজ্ঞাপন দিয়েছে। কিন্তু এনবিআরের হিসাব বলা হয়েছে, মাত্র ১৩৩ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে।
সিপিডির মূল প্রবন্ধ অনুযায়ী, ওভার দ্য টপ (ওটিটি) প্ল্যাটফর্ম থেকে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ১৫ কোটি ২৭ লাখ ডলার পাবে এবং ২০২৭ সাল নাগাদ এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়াবে ১ কোটি ১৩ লাখ। নেটফ্লিক্সের বাংলাদেশে গ্রাহকসংখ্যা এখন মাত্র ২ লাখ। বছরে আয় ২০০ কোটি টাকা। চরকি, বায়োস্কোপ, টফির মতো দেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্মও আছে। মূল প্রবন্ধে আরও বলা হয়, ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয়ে শীর্ষ ১০টির মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে অষ্টম।
বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর অবকাশ-সুবিধা, নগদ সহায়তাসহ নানা প্রণোদনা দিয়ে থাকে সরকার। তবে আগামী জুন মাসে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কর অবকাশ-সুবিধা উঠে যাচ্ছে। তবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পণ্য বা সেবা বিক্রিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে।






