বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আসা বিমানযাত্রীদের হাত ধরে সোনা নিয়ে আসার চাহিদা বাড়ছে। ২০২২ সালে দুই বিমানবন্দর দিয়ে প্রায় ৫৪ টন সোনা এসেছে, যার বর্তমানে বাজারমূল্য ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। পরিমাণের দিক দিয়ে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে সোনা আসা বেড়েছে ৫৩ শতাংশ।
বিমানযাত্রীরা এসব সোনা এনেছেন বৈধ পথেই, যাত্রী (অপর্যটক) ব্যাগেজ বিধিমালার আওতায়। তবে সোনা আনা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আসার ওপরও প্রভাব পড়ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সোনার বদলে বিদেশফেরত ব্যক্তিরা বৈদেশিক মুদ্রা আনলে তা দেশের ব্যাংকব্যবস্থায় যুক্ত হতো। এই মুদ্রা বর্তমান সংকট কাটাতে ভূমিকা রাখত।
এই বিপুল পরিমাণ সোনার চাহিদা দেশে আছে কি না, সেই প্রশ্নও রয়েছে। স্বর্ণ নীতিমালা (২০১৮) অনুযায়ী, দেশে বছরে নতুন সোনার চাহিদা ১৮ থেকে ৩৬ টন। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) হিসাবে, বছরে ১৮ থেকে ২০ টন নতুন সোনার প্রয়জন হয়ে থাকে।
তাহলে এত সোনা দেশে আসার পর কী হয়, জানতে চাইলে বাজুসের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, এই সোনার বেশির ভাগ আবার বাহিরে পাচার হয়ে যায়। এক বছরে এত বেশি সোনা দেশে আসাটা অস্বাভাবিক। কারণ, দেশে এত সোনার চাহিদা নেই।
বাংলাদেশে তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মধ্যে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে সোনা আনার হিসাবটি পাওয়া গেছে।
সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে ২০২১ সালের ছয় মাসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সিলেট দিয়ে খুব বেশি সোনা আসে নি।
কীভাবে, কেন আনা হয় সোনা
যাত্রী (অপর্যটক) ব্যাগেজ বিধিমালা অনুযায়ী, বিদেশ থেকে আসার সময় একজন যাত্রী ২৩৪ গ্রাম বা ২০ ভরি সোনার বার শুল্ক-কর পরিশোধ করে আনতে পারেন। প্রতি ভরিতে শুল্ক-কর দিতে হয় দুই হাজার টাকা। সাধারণত দুটি বারেই ২৩৪ গ্রামের কাছাকাছি ওজন হয়ে থাকে।
বিনা শুল্কে যাত্রীরা ১০০ গ্রাম বা সাড়ে আট ভরি পর্যন্ত সোনার গয়না আনতে পারেন। এ গয়নার হিসাব কাস্টমস নথিভুক্ত করে থাকে না। ২০২২ সালে যে ৪৫ হাজার কোটি টাকার সোনা এসেছে, তার মধ্যে এসব গয়না নেই।
মূল্যবান ধাতুর দাম এবং অন্যান্য বিষয়ে তথ্যসেবা প্রদানকারী ওয়েবসাইট কিটকোতে দেখা যায়, বিশ্ববাজারে এখন প্রতি আউন্স সোনার দাম দুই হাজার ডলারের আশপাশে। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি ভরির দাম পড়ে সাড়ে ৭৯ হাজার টাকা।
প্রতি ভরিতে দুই হাজার টাকা শুল্ক দেওয়ার পর দাম দাঁড়ায় সাড়ে ৮১ হাজার টাকার মতো। দেশের বাজারে এখন ২২ ক্যারেট মানের সোনার ভরি ৯৮ হাজার ৪৪৪ টাকা। কলকাতার বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে এখন ২৪ ক্যারেটের পাকা সোনার ভরি ৭১ হাজার ১৫০ রুপি, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৯২ হাজার টাকা দাঁড়ায়ি থাকে।
দুই বিমানবন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা এবং যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশে যাত্রীদের হাত ধরে সোনার বেশির ভাগই আসছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। কোনো কোনো যাত্রী নিজে থেকেই সোনার বার নিয়ে আসেন। অনেক সময় সোনা পাচারকারীর প্রতিনিধিরা বাংলাদেশগামী যাত্রীদের বৈধ পথেই দুটি সোনার বার বহন করার জন্য অর্থ দেন। বিমানবন্দরে শুল্ক পরিশোধ করার পর যাত্রীদের কাছ থেকে তা নিয়ে নেওয়া হয়। ঝুঁকি না থাকা ও আয়ের সুযোগ থাকায় যাত্রীরা সোনা বহনে আগ্রহ দেখান।






