“আমরা সবকিছু করছি। এসব করতে অনেক টাকা লাগে, অনেক বিনিয়োগ লেগে থাকে। কিন্তু ক্রেতারা এসে যখন দরদাম করে, তখন আমরা সঠিক মূল্যটা পাই না।”
তৈরি পোশাকের বৈশ্বিক ক্রেতাদের চাপে অর্থ খরচ করে অনেক উদ্যোগ নিতে বাধ্য হলেও বাংলাদেশের উৎপাদকরা সেই তুলনায় পণ্যের দাম পাচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) ঢাকায় এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “বিভিন্ন ব্র্যান্ডের উপস্থিতির সুযোগ আমি বলতে চাই, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশেকে ভয়াবহ চাপ দেওয়া হয়েছে- ‘তোমার কাঠামোগত উন্নত কর, অগ্নি-নিরাপত্তা আরও উন্নত কর, শিশু শ্রমিক মুক্ত হও, এটা করো, সেটা কর’।
“আমরা সবকিছু করছি। এসব করতে প্রচুর টাকা লাগে, অনেক বিনিয়োগও লাগে। কিন্তু ক্রেতারা এসে যখন দরদাম করে, তখন আমরা মূল্যটা পাই না। আপনাদের মান বজায় রাখতে যে সমস্ত কাজ আমাদের করতে হয়, যে পরিমাণ বিনিয়োগে আমরা বাধ্য হই, সেই বিবেচনায় আমরা প্রত্যাশা করি আপনাদের উচিত আমাদেরকে পুরস্কৃত করা এবং অন্তত গ্রহণযোগ্য দামটা আমাদেরকে দেওয়া।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত নর্ডিক দেশের রাষ্ট্রদূতদের উদ্দেশ করে তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ ব্যবসায়ী সালমান বলেন, “খুবই কম লাভের হার নিয়ে কাজ করছে পোশাক শিল্প এবং সেটা সঙ্কুচিত হয়ে পরেছে মহামারীর আগে-পরে।
“নর্ডিক দেশের রাষ্ট্রদূতদের উপস্থিতিতে আমি এই সুযোগটা নিতে চাই , এটা আপনারা আপনাদের যেসব কোম্পানি ব্যবসা করতে আসে, তাদের বলতে পারেন, বিশেষ করে ন্যায্যমূল্যের বিষয়টি নিয়ে। এই মুহূর্তে দামের হার উৎপাদকদের জন্য খুব একটা ন্যায্য নয়।”
তৈরি পোশাকের আবর্জনা ‘রিসাইক্লিং’ নিয়ে বাংলাদেশে নর্ডিক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এনসিসি) আয়োজিত এ আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান।
ঢাকায় তিন নর্ডিক দেশ সুইডেন, নরওয়ে ও ডেনমার্ক দূতাবাসের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছিল অনুষ্ঠানের সহ-আয়োজক। সুইডিশ কোম্পানি এইচ অ্যান্ড এমসহ বিভিন্ন পোশাক ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন।
তৈরি পোশাকের বৈশ্বিক খুচরা বিক্রেতা এইচ অ্যাণ্ড এম গ্রুপ, ইকিয়া, লিন্ডেক্স এবং সুইডেন ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্ট কাউন্সিলের সমন্বয়ে গঠিত ‘সাসটেইনেবল ফ্যাশন প্ল্যাটফর্মের’ পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, তৈরি পোশাকে মোট ব্যবহৃত কাপড়ের ৩৫-৪০ শতাংশ উৎপাদন পর্যায়ে আবর্জনা হয়ে থাকে। বাকি অংশও ব্যবহারের পরে আবর্জনায় পরিণত হয়। সে কারণে এটাকে সমন্বিত প্রক্রিয়ার মধ্যে রিসাইক্লিংয়ে নিয়ে আসতে হয়।
রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ হিসাবে বর্ণনা করে সালমান এফ রহমান বলেন, ইউরোপ যুদ্ধ করছে আর নিষেধাজ্ঞাসহ অন্যান্য কারণে পৃথিবীর অন্য সব দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলছে।
যুদ্ধের পর ইউরোপে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফিরে যাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, “আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানির কথা বলছি এবং প্রতিশ্রুতির কথা বলছি। কিন্তু যুদ্ধের কারণে জ্বালানি সংকটের ফলে ইউরোপ সুবিধা বুঝে নবায়নযোগ্য জ্বালানির কথা ভুলেই গেছে এবং ফিরেছে কয়লা বিদ্যুতে ও অন্য অনেক ক্ষেত্রে।
“বাংলাদেশের মত দূরের দেশ বিস্মিত যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে তোমাদের প্রতিশ্রুতি কী রকম। আমরা কি তেমন মানের কথা বলছি, যা এক অংশের জন্য প্রযোজ্য আর অন্য অংশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়?”
ঢাকায় সুইডেন রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ড্রা বার্গ ফন লিন্ডে অনুষ্ঠানে বলেন, তৈরি পোশাকের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎস হওয়ার কারণে বাংলাদেশকে রিসাইক্লিংয়ের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
“এটা কেবল পরিবেশ ও জলবায়ুর স্বার্থে নয়, অর্থনৈতিক সুযোগও। এর মাধ্যমে হতে পারে নতুন খাতের সূচনা।”
বর্জ্যকে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করতে বড় পরিসরে অর্থায়ন প্রয়োজন মন্তব্য করে রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, “আশা করি, এর মাধ্যমে আমাদের মধ্যে সহযোগিতার নতুন পথ খোঁজার সুযোগ তৈরি হয়ে থাকবে।”
অন্যদের মধ্যে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া, ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি এস্ট্রাপ পিটারসেন, নরওয়ে দূতাবাসের শার্জ দি অ্যাফেয়ার্স সিলইয়ে ফিনেস ওয়ানেবু, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহুপক্ষীয় অর্থনৈতিক অনুবিভাগের মহাপরিচালক ফাইয়াজ মুরশিদ কাজী, এনসিসিআই সভাপতি তাহরিন খান ও নির্বাহী পরিচালক মাশরুর রহমান আলোচনা অনুষ্ঠানের বক্তব্য দিয়েছেন।






