ঢাকা, সোমবার, ১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

পদ্মা সেতুর এক বছর, কৃষি রাজধানী হয়ে উঠেছে শরীয়তপুর

পদ্মা সেতু নির্মাণ বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের টাকাতেই সেই চ্যালেঞ্জে জয়ী হয়েছে বাংলাদেশ। আজ পদ্মা সেতু উদ্ধোধনের এক বছর পূর্তি হয়েছে । এই এক বছরে দেশের কৃষি রাজধানী হয়ে উঠেছে শরীয়তপুর জেলা। যেই জেলার কৃষকদের নিজের উৎপাদিত ফসল এক সময় বিক্রি করতে না পেরে ফেলে দিত হতো অথবা গবাদী পশুকে খাইয়ে দিতে হতো। সেই জেলার কৃষকেরা যোগাযোগ ব্যবস্থায় কল্পনাতীত উন্নতি হওয়ার ফলে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন ঘরে বসে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ফসল বিক্রি করছে কয়েক গুণ বেশি দামে।

এইসব কিছুর মূলে রয়েছে পদ্মা বহুমূখী সেতু। এছাড়া পদ্মা সেতুর এক বছর পূর্তির মাস জুনের পহেলা তারিখে জেলায় কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে ৬৮৬ একর খাস জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা)। যা কৃষি সম্ভাবনার নতুন মাত্রা খুলে দেবে।

২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু চলাচলের জন্য উদ্ধোধনের পরে বদলে গেছে শরীয়তপুরের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির চিত্র। কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে গত চার মাসে শরীয়তপুরের কৃষকরা ২১৬ মেট্রিক টন সবজি রপ্তানি করে আয় করেছে প্রায় ২৩ লাখ ইউরো। যা বাংলাদেশি মুদ্রার মান অনুযায়ী ২৩ কোটি টাকার চেয়েও বেশি।

শরীয়তপুরের কৃষি খাতকে আরও উন্নত এবং গবেষণাধর্মী করার জন্য ইতোমধ্যে জেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মানের জন্য আইন পাস করেছে মন্ত্রীসভা।

রাজধানী থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরত্বে হওয়ায় শরীয়তপুরের বিভিন্ন কৃষি বাজারে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, কুষ্টিয়া, ফেনী, গোপালগঞ্জ, নাটোর, যশোর, রাজশাহী, ময়মনসিংহসহ প্রায় সারাদেশের ব্যবসায়ীরা কৃষি পণ্য ক্রয় করতে আসেন। শরীয়তপুরে ধান, পাট, গম, ভুট্টা, চিনা বাদাম, হলুদ, মরিচ, আদা, পেঁয়াজ, রসুন, সয়াবিন, সরিষা, কালোজিরা, তিলসহ আলু, কুমড়া, করলা, বেগুন, কচু, চিচিংগা, ঝিংগা, ডাটা, লালশাক, পুঁইশাক, পেঁপে, শসা, লাউ, টমেটো, পটল, আখ, ডাল, ধনিয়া, তরমুজ, পানসহ  প্রায় সকল প্রকার কৃষি পণ্য উৎপাদন করে থাকে এই জেলার কৃষকেরা।

>>>  রংপুরে নারীরা ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে কাজ করে: বাণিজ্যমন্ত্রী

সবজির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন বাড়াতে পতিত জমিকে চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ শুরু করছে স্থানীয় প্রশাসন এবং কৃষি বিভাগ। মানসম্মত ফসল উৎপাদনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ১৫ হাজার কৃষক এবং কৃষাণীকে। মাটির ধরণ অনুযায়ী অনাবাদী জমিতে সবজি উৎপাদনে কাজ শুরু করেছে কৃষি বিভাগ। এছাড়া নতুন করে চাষাবাদের আওতায় আনা হয়েছে ৪ হাজার ৭২০ হেক্টর অনাবাদী জমি। যার ফলস্বরুপ গত রবি মৌসুমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২৬৭ কোটি টাকার।

জাজিরার মোশারফ হোসেন মোল্লা দৈনিক স্লোগানকে জানিয়েছেন, লাউ এবং কচু চাষ করেছি কন্টাক্ট ফার্মিয়ের মাধ্যমে। আমার উৎপাদিত ফসল সুইজারল্যান্ডসহ ইউরোপের দেশগুলোতে বিক্রি হচ্ছে, যা আমার কৃষক জীবনকে স্বার্থক করে তুলেছে। কৃষি পণ্য উৎপাদন, বিক্রিসহ জীবন মানে উন্নয়ন সবকিছুর মূলে  রয়েছে এই পদ্মা সেতু। এই সেতু না হলে আমার ভাগ্যচাকা কবে ঘুরত তা বলা মুশকিল ছিল। পদ্মা সেতুর এক বছর পূর্তিতে যা পেয়েছি তাতে করে আমার ভাগ্যচিত্র পাল্টে গেছে। আশা করছি আগামী দিনে আরও বেশি লাভবান হতে পারব।

ভেদরগঞ্জের কৃষক আনোয়ার বেপারী চাষ করেছন ধান, পাট, মরিচ, শশা এবং তরমুজসহ বিভিন্ন মৌসুমী কৃষিপণ্য। পদ্মা সেতুর কারণে তার ফসলের মাঠ থেকে সরাসরি বিক্রি হয় ফসল। নিজের পরিবারের ভরণপোষণের পাশাপাশি প্রয়াত বড় ভাইয়ের পরিবারের দায়িত্বও নিতে পেরেছেন আনোয়ার। তিনি বলেন, পদ্মা পাড়ে ফসল নিয়ে যখন দিনের পর দিন অপেক্ষা করে ফেরী না পেয়ে ফসল নদীতে ফেলে দিয়ে খালি পকেটে বাড়ি ফিরতাম তখন নিজেকে অপরাধী মনে হতো। কিন্তু পদ্মা সেতুর কারণে এখন আমার ফসল মাঠ থেকেই বিক্রি হয়ে যায়। পদ্মা সেতু কৃষকদের জন্য অমূল্য ধন।এই সেতুর কারণে শরীয়তপুরের কৃষকরাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে।

কৃষিপণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেড লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কাওসার আহমেদ দৈনিক স্লোগানকে বলেন, জাজিরাসহ শরীয়তপুরের কৃষি পণ্যের চাহিদা ইউরোপের দেশগুলোতে বেশ ভালো। পদ্মা সেতুর কারণে ফসলের মাঠ থেকে ফসল সংগ্রহের পর খুব অল্প সময়ে রপ্তানি করা সম্ভব হয়ে৷ থাকে। আগামী দিনে শরীয়তপুরের কৃষি পণ্য আরও ব্যাপকহারে রপ্তানি করা হয়ে থাকবে।

>>>  সর্বজনীন পেনশন নিয়ে অপপ্রচার বন্ধের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

সর্বশেষ

এই বিভাগের সর্বশেষ

সর্বশেষ :