ক্রেডিট কার্ড হলো ব্যাংক বা কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দেওয়া একটি বিশেষ সুবিধা। এই কার্ড দিয়ে কেনাকাটা বা অন্যান্য সেবার জন্য ঋণ নেওয়া যেতে পারে। ক্রেডিট কার্ডে নেওয়া ঋণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত দিতে দেরি হলে জরিমানা হিসেবে সুদ দিতে হয়।

কোনো কারণে সুদ দিতে দেরি করলে ঋণের পরিমাণও বাড়তে থাকে। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে এটিএম বুথ থেকে টাকাও তোলা যায়। তবে সেই ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হারে সুদ দিতে হয়। চাইলে চেক দিয়েও ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলা যায়। তবে ক্রেডিট কার্ড মূলত কেনাকাটা করার জন্যই গ্রাহকেরা ব্যবহার করে থাকেন।

কারা পাবেন ক্রেডিট কার্ড

একজন ব্যক্তি ক্রেডিট কার্ড নিতে পারবেন কি পারবেন না—সেটা নির্ধারণ করে থাকে ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী কাগজপত্র, মাসিক আয় বা বেতন এবং আনুষঙ্গিক বিষয়াদির উপর বিবেচনা করেই। ব্যাংকভেদে ক্রেডিট কার্ডের জন্য ভিন্ন হলেও সাধারণ কিছু শর্ত অবশ্যই মানতে হয়্ব থাকে, যা সব ব্যাংকের জন্যই প্রযোজ্য।

ব্যাংকভেদে শর্তাবলি পরিবর্তিত হতে পারে। আপনি যদি এসব যোগ্যতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার সুবিধা অনুযায়ী যেকোনো ব্যাংকে আবেদন করতে পারেন। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড পেতে গ্রাহককে প্রথমেই আবেদন করতে হবে ও প্রতিষ্ঠানের চাহিদামতো তথ্য পূরণ করে ছবিসহ জমা দিতে হবে।

যে ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করবেন, সেটির পরিপ্রেক্ষিতে আপনি যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, সেখানে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বেতন পেতে হবে। নির্দিষ্ট পরিমাণের কম বেতন পেলে ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। তবে প্রতিটি ব্যাংকের জন্য লিমিট নিয়ে আলাদা আলাদা নিয়ম ব্যাবস্থা দেয়া থাকে।

ব্যবহার করতে সতর্ক থাকুন

ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড ব্যবহারের সময় কিছু নিরাপত্তার বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। একটু অনিয়মে ঘটতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত নানা পরিস্থিতি। তাই ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড এমন স্থানে রাখুন, যেন সহজে কারও তা চোখে না পড়ে। নারীরা যদি পার্স বা ভ্যানিটি ব্যাগে ক্রেডিট কার্ড রাখেন, তাহলে চেন বন্ধ রাখুন। জনবহুল এলাকায় কেনাকাটার ক্ষেত্রে ছোট ব্যাগে ক্রেডিট কার্ড রাখবেন।

মুঠোফোন বা ক্যামেরায় কেউ যাতে আপনার কার্ডের ছবি তুলতে না পারে, সে বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকুন। মূল্য পরিশোধের পর কার্ড ফেরত নেওয়া হয়েছে কি না, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। ক্রেডিট কার্ডের নম্বর বা এই সম্পর্কিত স্পর্শকাতর তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন। ব্যাংকের অনুমোদিত বা নির্ধারিত ব্যক্তি ছাড়া কার্ডের তথ্য অন্য কেউ চাইলে জিজ্ঞাসা করে তার পরিচয় নিশ্চিত হতে হবে।

সাধারণত ক্রেডিট কার্ডের তথ্য আদান-প্রদানে ব্যাংকের নির্দিষ্ট ফোন নম্বর থাকে। এর বাইরে কোনো নম্বর থেকে ফোন করে কার্ডের তথ্য চাইলে, তা নির্ধারিত ব্যাংকে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়ে নিবেন। কার্ড হারিয়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন। দ্রুত সময়ে কার্ডটি লক হলে ক্ষতির আশঙ্কা অনেকাংশে কমানো সম্ভব হয়ে থাকে।

যেই এটিএম ব্যবহার করে আপনি নিয়মিত টাকা তোলেন, চেষ্টা করুন সেসব স্থান থেকেই টাকা তুলার জন্য। ব্যাংকের ভেতরে বা কাছাকাছি জায়গায় স্থাপিত এটিএমের চেয়ে অপরিচিত স্থানের এটিএম থেকে টাকা না তোলাই উত্তম হবেয়। কার্ডের পিন এটিএমে প্রবেশ করানোর সময় আরেক হাত দিয়ে তা ঢেকে রাখুন, যাতে গোপন কোনো ক্যামেরা বা যন্ত্রে পিন নম্বরটি দেখা যেতে না পারে।

যদি আপনার কার্ডটি হারিয়ে যায় বা চুরি হয়ে থাকে, তাহলে সাথে সাথেই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে যোগাযোগ করতে হবে। এই ছাড়া আপনার ব্যবহৃত কার্ডে স্টেটমেন্টে কোনো ধরনের অসংগতি নজরে এলে কল সেন্টারে ফোন দিয়ে রিপোর্ট করুন। সেই ক্ষেত্রে স্টেটমেন্ট তারিখের ৩০ দিনের মধ্যে লেনদেন-সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য উল্লেখ করে লিখিতভাবে একটি  রিপোর্ট করতে হবে।