ঢাকা, শনিবার, ১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আনোয়ার সজীব এর ছোটগল্প ‘অপেক্ষা’

ছোটগল্প, গল্পের নাম: অপেক্ষা, লেখক: আনোয়ার সজীব 

পাক্কা নয় বছর পর দেশে ফিরছে রজব আলী। প্রবাস জীবনের প্রথম অধ্যায়টা তার ভীষণ বিয়োগাত্মক। প্রাণপণে চেষ্টা চালানোর পরেও যখন দেশে কোনো উপায় করে উঠতে পারেনি, তখনই পাড়ি জমায় মরুর দেশে। বাপের যে জমিটা বিক্রি করে সে বিদেশে গিয়েছিলো, তার ছ’মাস পর-ই সরকারি প্রজেক্টের জন্য সেই জমিটাসহ আশপাশের অনেক জমি ক্রয় করে নেয় কর্তৃপক্ষ। দামও দেয় প্রায় তিনগুণের মতো। সেই শোকে পিতৃবিয়োগ হয় তার, ‘আল-হায়র’ জেলখানায় বসেই বাপের আত্মার মাগফেরাত কামনা করতে হয় তাকে।

নয় বছর আগের এই দিনটিতে রজবের কাছ থেকে এক লাখ পঁচাশি হাজার টাকা নিয়েছিলো রেজাউল দালাল, বলেছিলো রুটির ফ্যাক্টরিতে প্যাকেজিং এর কাজ হবে তার। রজব আলী যত্নসহকারে ডায়েরিতে টুকে রেখেছিলো দিন-তারিখসহ সেদিনের সময়টা। রজব স্বপ্ন দেখতো ফিরে এসেই ঘর বাঁধবে নার্সিস কে নিয়ে, নার্গিস ওর বড় ভাবীর খালাতো বোন। কিন্তু প্লেন থেকে নামার পরই তাকে যেতে হয় সোজা জেলখানায়, জাল ভিসার মামলায় ফেঁসে গিয়ে টানা দেড়-বছর থাকতে হয় কারাবাসে। কারাগারে থাকাকালীন প্রতিদিন সে একটা করে চুল ছিঁড়ে জমিয়ে রাখতো সিগারেটের প্যাকেটে। কারণ ওর ইচ্ছে ছিলো দেশে ফিরে সেখান থেকে একটা করে চুল বের করবে, আর রেজাউলের পাছায় একটা করে লাথি মারবে। কিন্তু সেই ইচ্ছেটাও তার পূরণ হলো না। সোয়া’দুই মতো চুল জমা হওয়ার পর সে খবর পেলো যে, রেজাউল দালাল মোটরসাইকেল এক্সিডেন্ট করে স্পট-ডেড (জায়গায় মৃত্যু) হয়ে গিয়েছে! পরদিন থেকে তার আর চুল ছেঁড়া হলো না। তবে জেলে থেকে রজবে’র একটা লাভও হয়েছিলো, শেষ সময়ের দিকে ওর পরিচয় হয় রিয়াদের এক বাংলাদেশী আতর-ব্যবসায়ীর সাথে। রজবে’র আনুগত্য ও সেবামূলক আচরণের দরুন সেই ব্যবসায়ীর মনে জায়গা করে নিয়েছিলো ও। পরে তাকে ছাড়িয়ে নেওয়া ও কাজে নিয়োজিত করে দেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রয়োজনে তিনিই থাকতেন তার অবিভাবকের ভূমিকায়। 

রজব প্লেনের সিটে বসে বিমানবালা’দের দিকে তাকিয়ে-তাকিয়ে চোখের তৃষ্ণা মিটিয়ে নিচ্ছিলো। মাথায় নীল টুপি আর গায়ে মেমসাহেব স্টাইলের কোর্ট, যেন পুরো বিমানের রানী তারা। বিমানবালা’দের মধ্যে একজন তার মনের মধ্যে ‘সাইমুম’ তুলে সব উলোট-পালোট করে দিলো এক নিমেষে। সে-ও হারিয়ে গেলো কল্পনার জগতে, যেন বিমানবালা’টি নার্গিস রূপে তার কাছে এসে বিড়বিড় করে বললো: এই শুনছেন?

রজব: কী বলো ও হে মোর প্রিয়া?

নার্গিস: আচ্ছা আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

রজব: সুদূরপ্রসারী…

নার্সিস: কি সারি? 

রজব: সারি নয়, বিরাট আকারের পরিকল্পনা 

নার্সিস: কী পরিকল্পনা? শুনাবেন আমায়?  

রজব: আমরা প্রথমে একটা গরুর খামার করবো, সেখান থেকে যে লভ্যাংশ আসবে তা ব্যাংকে জমিয়ে রাখবো।

নার্গিস: তারপর? 

রজব: সেই টাকা দিয়ে বড় একটা পানের আড়ৎ করবো। আমি সেখানে বসে খদ্দেরদের সাথে আলাপ করবো, তখন তুমি আমার জন্য খাবার নিয়ে আসবে। বাসনে ভাত বাড়তে-বাড়তে বলবে: হ্যা গো শুনছেন, খাওয়া টা সেরে ন্যান, হিসাব-নিকাশ পরে কইরেন।

তখন আমি বলবো: নেহি খায়েংগা…

[এই বলতে না বলতেই রজব ডান হাত ঝাড়া দিয়ে লাফিয়ে উঠলো, যেন তার ঘোর কেটে গেলো আর সাথে-সাথে হাতখানি গিয়ে ঠেকলো সেই ‘সাইমুম’ তোলা বিমানবালা’র বুকের কাছে]। 

>>>  ইয়াসির আরাফাত এর বিশেষ কবিতা 'তেইশে জুন'

বিমান বালাটি এবার আর তার কল্পনার জগতে রইলো না, বাস্তবেই বলে উঠলো: এক্সকিউজ মি স্যার, হ্যোয়াট হ্যাপেন্ড? এনিথিং রং?

রজব আধা-ইংরেজিতে বললো: নো নো- সব ওকে, আই ঠিকঠাক, নাথিং ডু।

রজব খানিকটা ইতস্তত বোধ করলো এবং লজ্জাও পেলো বেশ।

বিমান থেকে নেমে কাস্টমস হল রুমে অপেক্ষা করতে হচ্ছে রজব আলীকে, কারণ আরব থেকে সাথে নিয়ে আসা লাগেজ এখনো তার হাতে এসে পৌঁছায় নি। প্রায় সাড়ে-চার ঘন্টা অপেক্ষার পর রজব তার লাগেজ হাতে পেলো। কিন্তু একি? ভিতরটা প্রায় শূন্য! লাগেজের পেট বরাবর জিপারের মতো লম্বা করে ছুরি দিয়ে কাটা, দুই-তিনটা কাপড় বাদে প্রায় সবই বের করে নেওয়া হয়েছে তা থেকে। রীতিমতো চুরি বলা চলে, কিন্তু সেটা ভদ্রসমাজের চুরি আর-কি! রজব মূর্তির মতো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে লাগেজের বুক বরাবর একটি লাথি মারলো আর বিড়বিড় করে কি যেন বলতে লাগলো। ঠিক এমন কিছু লাথি রেজাউল দালাল’কে মারার খুব ইচ্ছে ছিলো তার। কিন্তু আজ সে যেন আবার নতুন রেজাউল কে খুঁজে পেলো, তবে পাল/যুথ ইত্যাদি জন্তু’বাচক বহুবচন রূপে। 

তীর্থের কাকের মতো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে রজব বাইরে বেরিয়ে এলো। চারপাশ থেকে কয়েকজন ট্যাক্সিওয়ালা তাকে এমনভাবে ঘিরে ধরলো, যেন কতগুলো কশাই মিলে একটা গাধা’র দরদাম করতে এসেছে। রজব দর কষাকষি করে পাঁচ হাজার টাকা মাইনের বিনিময়ে একটা ট্যাক্সি ঠিক করলো। গন্তব্য ধোপাখোলা, কিন্তু বায়তুল মোকাররম মার্কেটে কিছুক্ষণের জন্য বিরতি নিলো সে, উদ্দেশ্য কিছু কেনাকাটা করা। মায়ের জন্য বোরকা, নার্গিসের জন্য লাল টকটকে বেনারসি, ভাইয়ের জন্য ঘড়ি, ভাবি’র জন্য মখমলের থ্রিপিস, বাচ্চা-কাচ্চাদের জন্য কিছু জামাকাপড় আর গ্রামের মসজিদ এবং মুরব্বিদের জন্য কতগুলো জায়নামাজ কিনে নিলো সে, তাছাড়া আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবে’র জন্য কিছু সুগন্ধি আতর ও কিনে নিলো। তারপর যাত্রা শুরু করলো বাড়ির উদ্দেশ্যে। ট্যাক্সির ভিতর থেকে মাঝে-মধ্যে জানালা দিয়ে মাথা বের করে নাক দিয়ে নির্মল বাতাস টেনে নিচ্ছিলো, আর কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ছিলো রজব। এবার ডানপাশের সিটে বসে বাঁ’পাশের ফাঁকা সিটটাতে নার্গিস কে নিয়ে ভাবতে শুরু করলো তার প্রেমিক হৃদয়। নিজেই নিজের মতো করে নার্গিসের সাথে কথা বলতে শুরু করলো: চুপ কেন, কিছু বলো!

নার্গিস: আপনি বলেন, আমি শুনি 

রজব: লাল টকটকে শাড়িতে তোমাকে মানিয়েছে বেশ 

নার্গিস: কি যে বলেন, আমি কি আর ততোখানি সুন্দর? 

রজব: তুমি আমার চোখে বসন্তের কাঁচা হলুদের মতো সুন্দর, ভালোবাসি তোমায় আপনার চাইতেও বেশি। 

নার্গিস: তাই? বিয়ে করবেন এবার আমায়, নাকি আবার কোনো অজুহাত দেখাবেন?

রজব: বাড়ি ফিরেই মুরব্বিদের পাঠাবো তোমাদের বাড়িতে, আমার ঘরের ঘরোনি করে আনবো যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব হবে।

নার্গিস: তারপর? 

রজব: তুমি-আমি মিলে সংসার সাজাবো, আমাদের ছেলে-মেয়ে হবে। 

নার্গিস: যাহ্! মুখে কিছুই আটকায় না।

[নার্গিস লজ্জায় মুখ লুকিয়ে নিতে চাইলো, কিন্তু রজব জোর করে তার মুখের কাছে প্রকম্পিত ঠোঁট দুটো আলতো করে ছুঁয়ে দিতে গিয়েই চমকে উঠলো! নিজেকে আবিস্কার করলো যে, তার ঠোঁট দু’টো জানালার কাঁচের সাথে মিশে গেছে আর জিহ্বা দিয়ে গ্লাসে জমে থাকা ধূলো লেহন করছে। সে ভিষণ লজ্জা পেলো, কিন্তু লজ্জার পরিমাণ আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেলো, যখন সে সামনের লুকিং গ্লাসে দেখলো যে, ড্রাইভার তার দিকে তাকিয়ে-তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে]। 

>>>  আসিফ আহমেদ এর কবিতা 'মাথা ভাঙ্গা'র করুন আর্তি'

দৌলতদিয়া ঘাট! প্রায় পৌনে এক ঘন্টার জ্যামে আটকে আছে তারা, সামনে নাকি আরও ঘন্টা তিনেকের মতো জ্যাম, ড্রাইভার তাকে সেরকম কিছুই জানালো। এমন সময় জানালার কাঁচে টুকটুক করে তিন-চারটে শব্দ হলো, ভারি কিউট একটা মেয়ে আঙ্গুল দিয়ে বাইরে থেকে টোকা দিচ্ছে জানালার গ্লাসে। রজব আস্তে করে গ্লাসটা নামাতেই মেয়েটা মুখ উঁচিয়ে সামনে এসে দাঁড়ালো, হাতে কতগুলো গোলাপ আর রজনীগন্ধা নিয়ে জানতে চাইলো: সাহেব ফুল লইবেন? 

[এই বলেই ফুলভর্তি হাত খানি রজবের মুখের সামনে তুলে ধরলো। কিন্তু আজরাইলের মতো ট্যাক্সির ড্রাইভারটি তাকে গালমন্দ করে তাড়িয়ে দিলো, আর রজবকে উদ্দেশ্য করে বললো: স্যার, এদের ফুল লইবেন না, এরা নিষিদ্ধ পল্লী’র মেয়ে, জন্মের ঠিক নাই। হ্যাগোর মায়েরা ক’দিন পরেই হ্যাগোরে পর-পুরুষের কাছে শুইতে পাঠাইবো]।

রজব ড্রাইভারের কথা বিন্দুমাত্র আমলে না নিয়ে ট্যাক্সি থেকে নিচে নেমে দাঁড়ালো, আর সেই মেয়েটিকে ডাক দিলো: এই ফুল-সোনা… 

মেয়েটির কানে ডাকের আওয়াজটি পরম মমতার উদ্রেক করলো, সে হাঁপাতে-হাঁপাতে দৌড়ে এসে বললো: মোরে ডাক দিছেন সাহেব?

রজব: হিম..

মেয়েটি: ফুল লইবেন? 

রজব: সবগুলো নেবো

[মেয়েটি ছোট্ট বালতি থেকে ফুলগুলো তুলে রজবের হাতে দিলো, রজব তাকে পাঁচশ টাকার একটা কচকচে নোট দিলো সাথে মাথায় হাত বুলিয়ে কিছুটা আদরও করে দিলো। তারপর রজব যখন ট্যাক্সিতে উঠতে যাবে ঠিক তখনই পিছন থেকে কেউ একজন এসে তার পা জড়িয়ে ধরলো। রজব পিছন দিকে মুখ ফিরাতেই সেই মেয়েটিকে দেখতে পেলো, ওর হাতে একটা হলুদ ফুল]।

মেয়েটি ফুলটা রজবের হাতে দিয়ে বললো: লন, এইডা ম্যাডাম-রে দিবেন, এইডার জন্য কোনো ট্যাকা লাগবো না, আমি আদর পাইয়া দিছি ।

রজব ফুলটা হাতে তুলে নিলো, কিন্তু এবার আর তাকে আদর করলো না। কারণ ফের যদি আবার নিজেকে ঋণগ্রস্ত মনে হয়, তাহলে হয়তো পুনরায় সে তা শোধ করতে চাইবে! তারচেয়ে বরং কিছুটা ভালোবাসা তার কাছে অবশিষ্ট থাকুক।

জ্যাম ছাড়লো! গাড়ি ফেরিতে উঠবে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে-ই, ড্রাইভার তেমন কিছুই জানালো রজবকে। তাই এবার সে শান্তিতে কিছুটা ঘুম দিতে চাইলো, হেলান দিয়ে শুয়েও পড়লো সিট ভেঙ্গে। ও মা একি! প্রায় চল্লিশ মিনিটের মতো তন্দ্রাভাব কাটার পরও সে দেখলো যে ট্যাক্সিটা সেই আগের জায়গাতেই রয়েছে। সে ড্রাইভারের কাছে কারণ জানতে চাইলে ড্রাইভার তাকে বললো যে, ভিআইপি’রা যাতায়াত করতাছে। রজব অবাক হয়ে কিছুসময় তাকিয়ে দেখলো, কিন্তু রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী কিংবা ভিআইপি লোগো যুক্ত কোনো গাড়ী সে দেখতে পেলো না। এবার সে গাড়ি থেকে নেমে কর্তব্যরত গার্ড’কে প্রশ্ন করলো: কি ব্যাপার ভাই? আমাদের গাড়ি আটকে রেখে পিছনের গাড়ি ছাড়ছেন কেন?

গালভর্তি পান চিবোতে-চিবোতে, ট্যাপা মাছের মতো ভুঁড়ি টা কে আরও একটু জাগিয়ে, পাক হায়েনার মতো একখানা ভাব ধরে, ভ্রু কুঁচকে রজবের দিকে তাকিয়ে বললো: আজ্ঞে কিছু বলছেন সাহেব? 

রজব: বলছি ভিআইপি টা কে?

কর্তব্যরত লোক: মন্ত্রী’র লোক

রজব: তো, কোন মন্ত্রীর লোক? আর ক্যামন ধাঁচের লোক?

>>>  মচকে যাওয়া অর্থব্যবস্থা থেকে কি ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব?

কর্তব্যরত লোক: মন্ত্রীর শালাতো শ্যালকের বন্ধুর শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়। 

রজব: আর পিছনের ঐ লাল গাড়িটা কার?

লোক: ডিসি সাহেবের 

রজব: তো, গাড়ির ভিতরে কী ডিসি সাহেব আছেন? 

লোক: না, ডিসি সাহেবের ওয়াফের কুত্তা আছে।

রজব: মানে?

লোক: কুত্তাডা নাকি ম্যানোলে পইড়া গেছিলো কাইল, তাই ডাক্তার বাড়িতে লইয়া গেছিলো দারোয়ান বেডায়। ম্যাডাম নাকি সেই শোকে খাওয়া-নাওয়া ই ছাইড়া দিছে। 

রজব ভীষণ অবাক হয়ে ভাবলো, হায়রে আমার প্রিয় স্বদেশ, প্রিয় সোনার বাংলা! ভাবতে-ভাবতে তৎক্ষনাৎ তার চোখ গেলো তথাকথিত ভিআইপি লাইনের শুরুর দিকে অর্থাৎ পুলিশ বক্সের পিছনের দিকটায়। সে এবার আরেক রেজাউল দালাল কে আবিষ্কার করলো! সে দেখলো, ওখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ একজন বাঁশি ফুঁকছে আর একজন করে লোক এসে তার পায়ের কাছে ডাবের খোলার নিচে কি যেন রেখে যাচ্ছে, আর সাথে-সাথে তাদের গাড়িগুলো ছেড়ে দিচ্ছে। ডাবের খোলার নিচে তারা কি রেখে যাচ্ছে তার আর সেটা বুঝতে বাকি রইলো না।

রজব ক্লান্তি ভরা মুখ নিয়ে আকাশের পানে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিলো, আর ক্ষুব্ধ হয়ে তার সংকীর্ণ ভাগ্যের জন্য নালিশ জানালো উপর ওয়ালার কাছে। মিনিট তিনেকের মধ্যে শো-শো শব্দে আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামলো, ভিআইপি লাইনের মাথায় একটা মাইক্রোবাসের চাকা কাঁদার মধ্যে ডুবে গেলো। আর সাথে সাথে ভিআইপি লাইনে জ্যাম পড়ে গেলো, এবার রজব’দের লাইনের গাড়িগুলো একেক করে ফেরিতে উঠতে শুরু করলো। 

পৌঁনে এক ঘন্টার মধ্যে আবার ট্যাক্সি চললো হাইওয়েতে গন্তব্য উদ্দেশ্য করে। রজব ড্রাইভার কে উদ্দেশ্য করে বললো: সামনে বিপদজনক জায়গা, সাবধানে চালিয়ে যান।

ড্রাইভার: “সাহেব, বিপদজনক জায়গাগুলো-তে-ই বিপদ কম হয়। কারণ বিপদের আশংকা টের পাইলে মানুষ হুঁশ হইয়া যায়, কিন্তু টের না পাইলে বেহুঁশ থাকে। আর বেহুঁশ অবস্থা মানেই বিপদের আশংকা।”

রজব ড্রাইভারের এমন ফিলোসোফি মূলক কথা-বার্তায় কিছুটা বিস্মিত হলো, সে এবার হাত-পা ছড়িয়ে খানিকটা আরাম করে বসলো। তারপর প্যাকেট থেকে ফুলগুলো বের করে কোলের উপর রাখলো। এবার সে নার্গিসের সাথে সাথে ফুল ওয়ালা সেই মেয়েটাকেও ভাবতে শুরু করলো: আহারে! কি মিষ্টি একটা মেয়ে। নার্গিস যদি আমাকে অমন সুন্দর একটা মেয়ে উপহার দেয় তাহলে সারাজীবন আমি তাকে মাথায় তুলে রাখবো, নিজ হাতে খাইয়ে দিবো, স্কুলে নিয়ে যাবো ইত্যাদি ইত্যাদি। এমন শত-শত ভাবনা রজবের মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকলো। এমন সময় পিছন থেকে একটা ট্রাক রজবদের ট্যাক্সিটা-কে ধাক্কা মারলো। রজব মুহুর্তের মধ্যে ছিটকে পড়লো ট্যাক্সি থেকে, ড্রাইভার ট্রাকের নিচে চাপা পড়লো! রজবের ডান পায়ের উপর দিয়ে ট্রাকের একটি চাকা উঠে গেলো! জ্ঞান হারানোর পূর্বে সে দেখলো যে, একটি লোক তার দিকে ছুটে আসছে। সে ভাবলো লোকটি বোধহয় তাকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাবে, কিন্তু জানোয়ার টা দৌড়ে এসে তার পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিলো আর মোবাইল, ঘড়িসহ টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে মুহুর্তের মধ্যে উধাও হয়ে গেলো। অতঃপর রজব অস্পষ্টভাবে আরেক রেজাউল দালাল কে দেখতে-দেখতে ঘুমিয়ে পড়লো! এবার আর তার চোখে কোনো স্বপ্ন নেই, নার্গিসকে নিয়ে ঘর বাঁধার ও পরিকল্পনা নেই। সকল নেই’এর মধ্যে রইলো শুধু বাড়ি ফেরার অপেক্ষা! 

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

সর্বশেষ

এই বিভাগের সর্বশেষ

সর্বশেষ :