ঢাকা, সোমবার, ১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

পুলিশকে ‘খুশি করে’ এক্সপ্রেসওয়েতে চলছে অবৈধ বাস

দৈনিক স্লোগান, দুর্ঘটনা

পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ে তে ইমাদ পরিবহনের যেই বাস দুর্ঘটনায় ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, সেই বাসের চলাচলের কোন অনুমতিপত্র ছিল না। ছিল না বাসটির কোন ফিটনেস সনদও। তারপরও সেটি নিয়মিত ঢাকা থেকে খুলনার পথে যাত্রী পরিবহন করে আসছিল। এমন শত শত বাস পদ্মা সেতু হয়ে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় অবৈধভাবে বাস চলাচল করে চলছে। এর মধ্যে গ্রিনলাইন, হানিফ, সোহাগ, এনা, ইউনিক, গোল্ডেন লাইনসহ বড় কোম্পানির অনেক বাস বিরুদ্ধে।

পরিবহন কোম্পানিগুলোর সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণের পথে যাত্রী চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। নতুন বাস নামাতে তারা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বরাবর চলাচলের অনুমতির (রুট পারমিট) জন্য আবেদনও জমা দিয়েছে। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আপত্তিতে তা দেওয়া হচ্ছিল না বিআরটিএ। এর ফলে কোন অনুমতি ছাড়াই পুলিশকে ‘খুশি করে’ করেই বাস চালানো হচ্ছে। এই সুযোগে ফিটনেসবিহীন বাসও এই এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে করছে অবাধে চলাচল । সেই সঙ্গে বেপরোয়া গতি সড়ক দুর্ঘটনা বাড়েই চলছে।

এই অবস্থা চললেও এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে নেওয়া হচ্ছে না কার্যকরী কোন পদক্ষেপ । যাদের সিদ্ধান্তে রুট পারমিট দেওয়া বন্ধ রয়েছে, সেই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব দেখার দায়িত্ব পুলিশ ও বিআরটিএর। অন্যদিকে বিআরটিএর একজন কর্মকর্তা জানান, রুট পারমিট দেওয়ার পর সড়কে বাস চলল কি না, অথবা স্থগিত করার পর আবার চলাচল করছে কি না, তা দেখার মতো লোকবল বা ব্যবস্থা বিআরটিএর নেই। পুলিশ চাইলে যেকোনো সময় বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। এখন পুলিশ যদি নীরব থাকলে শাস্তি কার্যকর করা কঠিন হয়ে পরে।

বিআরটিএ সূত্র জানায়, ইমাদ পরিবহনের এই বাসটি এর আগে গত নভেম্বরেও গোপালগঞ্জে দুর্ঘটনায় পড়েছিল। সেই দুর্ঘটনায় তিনজন মারা যায়। এর পর থেকে বাসটির চলাচলের অনুমতি স্থগিত রাখা হয়েছিল। রোববারের দুর্ঘটনায় ১৯ জনের প্রাণহানির পর সেটির নিবন্ধন বাতিল এবং মালিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

>>>  আগুন নেভাতে বঙ্গবাজারে জবি রোভার ও বিএনসিসি

পরিবহনসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রাজনৈতিক বা ব্যবসায়িকভাবে প্রভাব আছে, এমন ব্যক্তিরাই এই পথে বেশি বাস চালাচ্ছেন। অন্যরা আগ্রহ থাকলেও বিনা অনুমতিতে বাস চালাতে সাহস পাচ্ছেন না। এতে সাধারণ যাত্রীদের সামনে বিকল্প কম থাকছে। এই সুযোগে বাড়তি ভাড়া আদায়ের ঘটনাও ঘটছে। এ ছাড়া বাসের রুট পারমিট থেকে সরকার যে রাজস্ব পেত, সেটি থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।

সরকার পদ্মা সেতু চালু করেছে ৯ মাস হয়ে গেছে। ফেরির ঝক্কি-ঝামেলা এড়িয়ে দ্রুত সেতু দিয়ে বাস যাবে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে—এটিই ছিল মূল প্রত্যাশা। কিন্তু রাজধানীর মেয়র হানিফ উড়ালসড়কে যানজট হবে—এই অজুহাতে পদ্মা সেতু হয়ে বাসের অনুমোদন বন্ধের জন্য চিঠি দিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এই চিঠি পেয়ে বিআরটিএ রুট পারমিট বন্ধ রেখেছে। প্রায় সাত মাস ধরে সিটি করপোরেশন ও বিআরটিএর মধ্যে চিঠি চালাচালি করে কোনো ফলাফল। হয়নি। রোজা ও ঈদুল ফিতর আসন্ন। সামনে যাত্রীর চাপ বাড়বে। তখন বাসের সংকট তৈরি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।

পদ্মা সেতু চালুর আগে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে মাওয়া হয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ফেরি পারাপারের মাধ্যমে ১২টি রুটে বাস চলাচল করতো। গাবতলী থেকে দক্ষিণের পথে রুট ছিল ৩০টির বেশি। সেতু চালুর পর গাবতলী থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার বেশির ভাগ বাস রুট পরিবর্তন করে পদ্মা সেতু দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশাল বিভাগ, খুলনা, সাতক্ষীরা ও যশোরের বেশির ভাগই পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচল করছে। এর মধ্যে অনেক লক্কড়ঝক্কড় বাসও চলাচল করছে।

পরিবহন কোম্পানি সূত্রগুলো বলছে, রুট পারমিট নেই বলে বেশির ভাগ কোম্পানি চাহিদামতো বাস নামাতে পারছে না। আগে যে ১২টি রুটে বাস চলত, সেসব কোম্পানির মালিকেরা বাড়তি বাস নামাতে চেয়েও পারছেন না।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

সর্বশেষ

এই বিভাগের সর্বশেষ

সর্বশেষ :