ঢাকা, সোমবার, ১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নৌঘাঁটি রক্ষায় ডলফিন মোতায়েন করেছে মস্কো

রাশিয়া কৃষ্ণ সাগরে সেভাস্তোপল নৌঘাঁটিতে নিরাপত্তা জোরদার কর হয়েছে। সেখানে প্রশিক্ষিত ডলফিন মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে শত্রু পক্ষের ডুবুরি শনাক্ত এবং ‘প্রতিরোধ’ করা যায়। ব্রিটিশ গোয়েন্দারা শুক্রবার এই কথাই বলেছেন।

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ান নৌবাহিনী কৃষ্ণ সাগরে তাদের প্রধান ঘাঁটিতে বড় ধরনের উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ করছে, যেটি দখলকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপের বন্দর সেভাস্তোপলে অবস্থিত।

এদিকে ইউক্রেন একটি অত্যন্ত প্রত্যাশিত পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে, যা ক্রিমিয়ার কাছাকাছি অবকাঠামোকেই লক্ষ্য করেছে। তারা বলেছে, তাদের লক্ষ্য হলো দখলকৃত সব জমি কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে আবারো ফিরিয়ে  নেওয়া। 

গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, কৃষ্ণ সাগরের রুশ নৌবহরও ইউক্রেনীয় হামলার প্রধান লক্ষ্য হতে পারে। সেখানে বিশেষ বাহিনীর আক্রমণ এছাড়া নৌ ড্রোন অভিযানও চালানো হতে পারে।

ফলস্বরূপ, ঘাঁটির কাছাকাছি রাশিয়ার নতুন প্রতিরক্ষায় বন্দরের প্রবেশপথজুড়ে কমপক্ষে চার স্তরের জাল এবং বুম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

তারা বলছে, ‘সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এই প্রতিরক্ষাগুলো সম্ভবত প্রশিক্ষিত সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যার মাধ্যমে বৃদ্ধি পেয়েছে।’ এটি অব্যাহত রয়েছে বলেও তারা অভিহিত করে রেখেছে।

গোয়েন্দারা বলেছেন, ‘ছবিতে বন্দরে ভাসমান স্তন্যপায়ীর ঘের প্রায় দ্বিগুণ দেখা গেছে, যাতে সম্ভবত বোতল-নাকযুক্ত ডলফিনও রয়েছে।

আর্কটিকের পানিতে নৌবাহিনী বেলুগা তিমি এবং  সিলও ব্যবহার করছে।’

তারা আরো বলছে, ‘রাশিয়া বিভিন্ন মিশনের জন্য প্রাণীদের প্রশিক্ষিত করে রেখেছে, তবে সেভাস্তোপল বন্দরে যেগুলো রাখা হয়েছে সেগুলো সম্ভবত ডুবুরি শত্রুদের মোকাবেলা করার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, সোভিয়েত নৌবাহিনী প্রশিক্ষিত স্তন্যপায়ী প্রোগ্রামটি তৈরি করেছিল, যা সেভাস্তোপলে অবস্থিত ছিল। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সেটি ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর অধীনে ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে রাশিয়া এই উপদ্বীপ এবং নৌঘাঁটিটি দখল করার পর থেকেই এই প্রোগ্রামটি যথেষ্ট বড় হয়েছে।

রাশিয়া ওলেনিয়া গুবায় তাদের আর্কটিক ঘাঁটিতেও বেলুগা তিমি মোতায়েন করেছে, যা গভীর সমুদ্রে অভিযানের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ২০১৯ সালে নরওয়ের উপকূলে দেখা যাওয়া একটি বেলুগা তিমি এই প্রোগ্রাম থেকেই পালিয়ে এসেছিল বলে ধারণা করা হয়েছিল। এই ছাড়া ২০১৫ সালে রাশিয়া সিরিয়ার টারতুসে তাদের ঘাঁটিতে প্রশিক্ষিত ডলফিন মোতায়েন করেছিল।

>>>  জোরদার হচ্ছে চীন-রাশিয়া বন্ধন

সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র—উভয়ই স্নায়ুযুদ্ধের সময় ডলফিন ব্যবহার করেছিল, তাদের ডুবোজাহাজ, খনি, বন্দর এবং জাহাজের কাছাকাছি সন্দেহজনক বস্তু বা ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে ডলফিনগুলোকে প্রশিক্ষিত করা
হয়েছিল।

অবসরপ্রাপ্ত সোভিয়েত কর্নেল ভিক্টর বারানেটস সেই সময় বলেছিলেন, মস্কো এমনকি ডলফিনকে শত্রু জাহাজে বিস্ফোরক যন্ত্র বসানোর প্রশিক্ষণও দিয়েছিল। তারা জানত কিভাবে কৃষ্ণ সাগরে পরিত্যক্ত টর্পেডো ও ডুবে যাওয়া জাহাজ শনাক্ত করতে হয়। বারানেটস সোভিয়েত এবং সোভিয়েত-পরবর্তী যুগে সামরিক ডলফিন প্রশিক্ষণ প্রত্যক্ষ করেছিলেন।

এই ছাড়াও মার্কিন নৌবাহিনী ২০০৩ সালে নিউ ইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনে ৯/১১ হামলার পরে অপারেশন এন্ডুরিং ফ্রিডমকে সমর্থন করার জন্য বাহরাইনে মোতায়েন করা সমুদ্র সিংহ ব্যবহার করে রেখেছিল।

সূত্র : এএফপি, দ্য গার্ডিয়ান

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

সর্বশেষ

এই বিভাগের সর্বশেষ

সর্বশেষ :