রামায়ণ অবলম্বনে সিনেমা। তাই বিতর্ক যে হবে, অনেকেই তা পূর্বানুমান করেই রেখেছিলেন। তবে সেটা যে এতটা প্রবল হবে, নেপাল ছবিটিকে নিষিদ্ধ করবে, এত সব কে ভেবেছিলেন? ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দিয়েছে, এমন অভিযোগের বাইরে বেশির ভাগ সমালোচক বলছেন, শিল্পমানের দিক থেকেও উত্তীর্ণ হতে পারেনি ‘আদিপুরুষ’। তবে সমালোচনা, বিতর্কের মধ্যেই ছবিটি দেখতে প্রেক্ষাগৃহে ভিড় পরছে লক্ষণীয়। মুক্তির প্রথম তিন দিনেই বিশ্বব্যাপী ৩৪০ কোটি রুপি ব্যবসা করে ফেলেছে ‘আদিপুরুষ’ সিনেমাটি। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার মতো।
ছবিটি দেখতে যে দর্শক ভিড় করছেন, তাকেই ঢাল হিসেবে ধরেছেন নির্মাতা ওম রাউত। তবে সমালোচকেরা বলছেন, ব্যবসায়িক সাফল্য পেলেই সব ঠিক আছে, এমনটা মনে করার কোন কারণই নেই।
‘আদিপুরুষ’ নিয়ে বিতর্কের শুরু অবশ্য অনেক আগেই, ছবিটির প্রথম টিজার মুক্তির পর থেকেই। সেটার কারণ ছিল ভিন্ন, টিজারে ছবির কারিগরি বিষয়গুলো অনেক ভক্তের মনমতো হয়নি।
সেটা এতটাই তীব্র ছিল যে নির্মাতারা পরে যতটা সম্ভব শুধরে নিয়ে নতুন টিজার মুক্তি দিতে বাধ্য হয়ে থাকে।
১৬ জুন মুক্তির পরপরই নতুন করে আইনি ঝামেলায় পরে থাকে সিনেমাটি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ দিয়ে দিল্লি হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন হিন্দু সেনা সংগঠনের সভাপতি বিষ্ণু গুপ্ত। অভিযোগে বলা হয়, সিনেমায় বিভিন্ন স্থানে দেবতাদের ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর আগে পোস্টার প্রকাশ্যে আসার পরেও একই অভিযোগ এনেছিলেন মুম্বাইয়ের বাসিন্দা সঞ্জয় দীননাথ তিওয়ারি। এ ছাড়া অনেকে হনুমানের ভাষার ব্যবহার নিয়েও আপত্তি তোলেন।
এবার নেপালেও ছড়িয়ে পড়েছে ‘আদিপুরুষ-বিতর্ক’। বিবাদ থামাতে নেপালে শুধু ‘আদিপুরুষ’ নয়, সব হিন্দি ছবি প্রদর্শনের ওপরই নিষেধাজ্ঞা জারি করা করেছে।
কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন শাহ টুইটারে জানিয়েছেন, ‘“আদিপুরুষ” থেকে আপত্তিজনক সংলাপ এখনও সরানো হয়নি। তিন দিন আগেই “সীতা মাতা ভারতের কন্যা” সংলাপটি সরানোর জন্য বলেছিলাম। এই সংলাপ না সরিয়ে ছবিটি প্রদর্শন করলে আমাদের রাষ্ট্র আর সংস্কৃতির অপূরণীয় ক্ষতি হবে।’ সব বিবাদের শিকড় হলো ছবিতে দেবী সীতাকে ভারতীয় কন্যা বলা হয়েছে। নেপালি সেন্সর বোর্ড এই বিষয়ে আগেই আপত্তি তুলেছিল। তাদের দাবি যে দেবী সীতার জন্ম ভারতে নয়, জন্ম হয়েছিল নেপালের জনকপুরে। এই বিবাদের পর নেপালি সেন্সর বোর্ড দেবী সীতার জন্ম ‘ভারতে’ শব্দটি মিউট করে চালানোর অনুমতি দিয়ে থাকে।
গতকাল ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, মুম্বাই পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন মনোজ মুনতাসির। ছবিটি নিয়ে ক্ষোভ আর বিতর্ক যে তাঁর শঙ্কার কারণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে ‘আদিপুরুষ’ নিয়ে বিতর্কের ঝড় বয়ে গেলেও ছবির প্রধান তিন অভিনয়শিল্পী প্রভাস, কৃতি শ্যানন এবং সাইফ আলী খান এখনো এই বিষয়ে মুখ কিছু বলেনি।
