কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির এলাকায় এক হাজার ৪৯২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ৬৬ জন রোহিঙ্গা
ও স্থানীয় ৪২৬ জন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ মে পর্যন্ত রোহিঙ্গা শিবিরে ডেঙ্গু পরিস্থিতির এমনই তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
গতকাল রবিবার সকালে ‘ডেঙ্গু পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) ডেঙ্গু রোগীদের যে তথ্য প্রকাশ করে তা মূলত বাংলাদেশি নাগরিকদের।
একই সাথে আমরা রোহিঙ্গাদের হিসাবও রাখি, যেহেতু তারা আমাদের ভৌগোলিক এলাকায় থাকে। তবে তারা বাংলাদেশের না হওয়ায় তাদের পরিসংখ্যান আলাদা।’
নাজমুল ইসলাম আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিবিরে মানুষের ঘনত্ব বেশি। পানি সরবরাহের কোনো ব্যবস্থা নেই।
সেখানে পানি জমা করে রাখতে হয়। এর বাইরে ছোট ছোট অনেক গর্ত রয়েছে, যেখানে সামান্য বৃষ্টিতে পানি জমে যায়, যা মশার প্রজননে সহায়ক। এই কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আক্রান্ত বেশি হচ্ছে। আমাদের জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে অন্য সহযোগী যাঁরা আছেন সবাই মিলেমিশে কাজ করছেন পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য।’
এক দিনে আরো ৬৭ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে
গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় আরো ৬৭ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৮ জন ঢাকার মধ্যে । ঢাকার বাইরে চারজন চট্টগ্রামের, দুজন মাদারীপুরের। মানিকগঞ্জ, বাগেরহাট এবং বরগুনা জেলায় একজন করে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, নতুন এই রোগীদের নিয়ে চলতি বছরে এই পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ৭৭১ জন।
মারা গেছে ১৩ জন। এদের মধ্যে ১০ জন ঢাকার, তিনজন চট্টগ্রাম বিভাগের। গত এক দিনে ডেঙ্গুতে কোন মৃত্যু হয়নি।
সব রোগীর তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রকাশ করে না
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম-এমআইএস পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৫৯টি হাসপাতালের ডেঙ্গুর তথ্য দিয়ে থাকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কারণ তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে যেসব পদ্ধতি রয়েছে সেটি সব হাসপাতালে এখনো গড়ে ওঠেনি। তবে আমরা কাজ করছি, আশা করি শিগগিরই আরো অনেক বেশি হাসপাতালের সব ধরনের তথ্য দিয়ে থাকতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীর আমরা যে তথ্য দিয়ে থাকি সেগুলো মূলত ৫৯টি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর। তবে বহির্বিভাগে যে রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকে এর কোনো তথ্য আমরা এখন দিতে পারছি না।’
আতঙ্ক নয়, প্রয়োজন সচেতনতা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (এনসিডিসি) অধ্যাপক মো. রোবেদ আমিন বলেন, ডেঙ্গু প্লাটিলেটজনিত কোনো রোগ নয়। এটা হলো প্লাজমা লিকেজ বা রক্তনালির রোগ। ডেঙ্গুতে কতগুলো গুরুতর সমস্যা হতে পারে। যখন ব্লাড প্রেসার অনেক কমে যায় তখন এটাকে বলা হয় শক সিনড্রোম। আবার যখন অনেক বেশি রক্তক্ষরণ হয় তখন সেটাকে আমরা বলি হেমারোজিক। আরেকটা ধরন হলো অর্গানজনিত, যেমন—ব্রেইন, হার্ট, লিভারের মতো বড় অর্গানে ধরে যায়। তখন রোগীর আইসিইউ, এইচডিইউর সাপোর্ট প্রয়োজন হয়ে থাকে।
স্বাস্থ্য ১১ পরামর্শ
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ১১ পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল এবং ক্লিনিক শাখা। এগুলো হলো : ১. সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগ স্ক্রিনিংয়ে পর্যাপ্ত কিটের ব্যবস্থা করতে হবে। চার্জ ১০০ টাকার বেশি হওয়া যাবে না। ২. প্রাদুর্ভাব বেশি বেড়ে গেলে আবাসিক চিকিৎসক এবং আরএমওর কক্ষে অতিরিক্ত মেডিসিন বিশেষজ্ঞকে দায়িত্ব দিতে হবে যাতে আগত ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত না হয়। ৩. হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত মশারির ব্যবস্থা করা। ৪. রোগীর চিকিৎসার জন্য প্লাটিলেট প্রয়োজন হলে জাতীয় গাইডলাইন অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। সপ্তাহের সাত দিনই ২৪ ঘণ্টা ল্যাব খোলা রাখতে হবে। সরকারিভাবে ২১টি সেন্টার থেকে প্লাটিলেট সংগ্রহ করতে পারবে। ৫. সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার সহযোগিতায় হাসপাতালের চারপাশ নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। হাসপাতাল কম্পাউন্ডে ডাব বিক্রি বন্ধ করতে হবে। হাসপাতালের অভ্যন্তরে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। ৬. ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মোবাইল নম্বর ও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা অবশ্যই সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করে সংরক্ষণ করতে হবে। ৭. আইইডিসিআর এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার যৌথ উদ্যোগে কন্ট্রোল রুম খুলতে হবে। ৮. আগ্রহী চিকিৎসকরা প্রশিক্ষণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখায় যোগাযোগ করবেন। ৯. এডিস মশার লার্ভা নিধনে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ১০. বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডেঙ্গু শনাক্তকরণের এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন (সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা), আইজি/আইজিএম (সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা), সিবিসি (সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা) টেস্ট সরকারের পূর্বনির্ধারিত মূল্যে করতে হবে। ১১. বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা জাতীয় গাইড লাইন অনুযায়ী করতে হবে ও প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগীর তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস শাখাকে অবহিত করতে হবে।






