ঢাকা, সোমবার, ১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আমি আপনাদের কাছে এসেছি

দৈনিক স্লোগান, মতামত

আজ ১৭ মে, ২০২৩ (বুধবার) ; ১৯৮১ সালের এই দিনে বাংলার মাটিতে ফিরে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ৭৫’ পরবর্তী সকল স্বৈরশাসক এর পতন এবং বাংলাদেশের গনতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার এর জন্য তিনি সরাসরি কাজ শুরু করতে পেরেছিলেন এই দিনটি থেকে। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে লাখো জনতার উদ্দেশ্য তিনি মানিক মিয়া এভিনিউতে বক্তৃতা করেন। তারই মূল অংশটুকু আমি তুলে ধরছি-

মূল বক্তব্যঃ
“আজকের জনসভায় লাখো চেনা মুখ আমি দেখছি। শুধু নেই প্রিয় পিতা বঙ্গবন্ধু, মা আর ভাইবোন, আরো অনেক প্রিয়জন। ভাই রাসেল, আর কোন দিন ফিরে আসবে না। আপা বলে ডাকবে না। সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন। স্বামী সংসার ছেলে রেখে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জীবন উৎসর্গ করে দিতে চাই। আমার আর কিছু পাবার নেই। সব হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি আপনাদের ভালবাসা নিয়ে। পাশে থেকে বাংলার মানুষের মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য।

স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর, ছবি (সংগৃহীত)

আপনাদের বোন হিসেবে মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই। আমি বঙ্গবন্ধু হত্যাসহ পরবর্তীকালের বিভিন্ন হত্যাকান্ডের বিচার চাই। বিচার চাই বাংলার জনগণের কাছে, আপনাদের কাছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার বিচার করবে না। ওদের কাছে বিচার চাইবো না। আপনারা আমার সাথে ওয়াদা করুন, বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচী বাস্তবায়ন, শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্য নেতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ করবো। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে গত ৬ বছরে শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতাম। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু যে সিস্টেম চালু করতে চেয়েছিলেন, তা যদি বাস্তবায়িত হতো তবে বাংলার মানুষের আর দুঃখ থাকতো না। সত্যিকার অর্থেই বাংলা সোনার বাংলায় পরিণত হতো।
ক্ষমতাসীনরা বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবার-পরিজনকে হত্যা করে বলেছিল, জিনিসপত্রের দাম কমানো ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আজ দ্রব্যমূল্য কোথায় উঠেছে? বর্তমান সরকার জনগণের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন করতে পারেনি। ধনী আরো ধনী এবং গরীবরা আরো গরীব হচ্ছে। কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। শ্রমিক তার ন্যায্য পাওনা পাচ্ছে না। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। দিনে-দুপুরে রাস্তায় মানুষ খুন হচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ বিশ্বের দরিদ্রতম দেশে পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষ খেতে পারছে না, আর একশ্রেণির লোক প্রচুর সম্পদের মালিক হচ্ছে। ক্ষমতার গদি পাকাপোক্ত করার জন্য ওরা আগামী দিনে বাংলাকে শ্মশানে পরিণত করবে। আবার বাংলার মানুষ শোষণের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হচ্ছে। আমি চাই বাংলার মানুষের মুক্তি, শোষণের মুক্তি। বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম করেছিলেন। আজ যদি বাংলার মানুষের মুক্তি না আসে, তবে আমার কাছে মৃত্যুই শ্রেয়। আমি আপনাদের পাশে থেকে সংগ্রাম করে মরতে চাই।
স্বাধীন-সার্বভৌম জাতি হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য স্বাধীনতাযুদ্ধে বাঙালি জাতি রক্ত দিয়েছে। কিন্তু আজ স্বাধীনতা-বিরোধীদের হাতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হতে চলেছে। ওদের রুখে দাঁড়াতে হবে। মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে আসুন, আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সংগ্রাম করি। আপনাদের ভালোবাসার আশা নিয়ে আমি আগামী দিনের যাত্রা শুরু করতে চাই। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত চার রাষ্ট্রীয় নীতি বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে।”

>>>  তাঁর আগমনেই বিদ্রোহ এসেছিলো...

লেখক: সাবেক সহ-সম্পাদক,বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

সর্বশেষ

এই বিভাগের সর্বশেষ

সর্বশেষ :