ঢাকা, সোমবার, ১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ভূট্টার দাম নির্ধারণ বড় কম্পানির, ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেনা কৃষক!

দৈনিক স্লোগান, অর্থনীতি

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে ভুট্টার আবাদ করে বিপাকে পড়েছে কৃষক। অতিমাত্রায় খরা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফলন কম, পাশাপাশি গত বছরের তুলনায় দাম কম হওয়ায় মারাত্মক লোকসানে পড়েছেন তারা। এই উপজেলায় ভুট্টাকে লাভজনক ভেবে অন্য সব ফসল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল কৃষক। এখন দাম কম হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। ঋণ করে যারা চাষাবাদ করেছিল পরিশোধের দায়ে তাদের এখন মাথায় হাত। 

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা দেখা গেছে, ধান,গম,আখ ,মরিচসহ অন্যান্য সব ফসলের চেয়ে বেশি জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে। মাঠ ঘাট খাল বিল নদীর চর সর্বত্রই ভুট্টার চাষ হয়েছে। 

উপজেলা কৃষি অফিস  সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৮ ইউনিয়ন এবং একটি পৌর সভায় ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল ৫ হাজার ৩০০ হেক্টর। অথচ চাষ করা হয়েছে ৬ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এই বছর ১ হাজার ২৭০ হেক্টর বেশি জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে । জমিতে গড়ে ফলন হয়েছে প্রতি হেক্টরে ১০ মে.টন ভুট্টা। 

তবে ভালো দাম না পেয়ে কৃষকরা হতাশ প্রকাশ করেছে। মৌসুমের শুরুতে ভুটার বাজার দর ছিল মণ প্রতি ১৪০০ টাকা। ভরা মৌসুমে এসে দাম পড়ে যায়। কাচা ভুট্টা ৬০০ টাকা থেকে ৭০০ বিক্রি হয়েছে আর শুকনা  ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। কাটামাড়াইয়ের শেষের দিকে দামের কিছুটা ঊর্ধ্বগতি দেখা গেলেও তা যথেষ্ঠ নয়। বর্তমান শুকনা ভুট্টার বাজার দর ৯৫০ থেকে ১ হাজার টাকা মণ। 

এক বিঘা মাটিতে ভুট্টার আবাদ করে ফলন হয়েছে ২৫ মণ থেকে সর্বচ্চ ৩০ মণ যার বাজার মূল্য আনুমানিক ২৫ হাজার থেকে ২৭ হাজার টাকা, আর  খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার ওপরে। তাছাড়া অজ্ঞাত কারনে এবার গতবারের চেয়ে ফলন অনেক কম। কয়েক মাস ধরে পরিশ্রম করে শূন্য হাতে ঘরে ফিরতে হচ্ছে কৃষকদের। ভুট্টা ক্রয়কারী কম্পানিগুলো কৃষককে জিম্মি করে কম মূল্যে ভুট্টা ক্রয় করছে বলে অভিযোগ  করেছে কৃষকরা। 

>>>  আবারও মন্দার সতর্কবার্তা বিশ্ব ব্যাংকের

উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুট্টার চাষ হয়েছে বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নে। সেখানকার চাষি আব্দুল মান্নানের অভিযোগ ‘৫ বিঘা মাটিতে ভুট্টা লাগিয়ে লস খেলাম এক কেজি গরুর মাংসও কিনে খেতে পারব না ,সার, বিজ, কীটনাশক সবকিছুর দাম বেশি অথচ ভুট্টার দাম অনেক কম।  

আরেক চাষি জবেদ আলীর (৫৫) আক্ষেপ ‘৭ মাস ধরে বৌ বাচ্চা নিয়ে খেটেখুটে আবাদ করে এখন হাতে কিছুই নাই আগামী দিনগুলি  কিভাবে সংসার চালাব? যারা ভুট্টা কিনে তারা একজোট হয়ে দাম কমাইছে দেখার কেউ নাই।’

স্থানীয় ভুট্টার ব্যাবসায়ীদের বক্তব্য- মোকাম থেকে যেই দাম নির্ধারণ করে তারা সেই মূল্যে ক্রয় করেন। দাম কম দেওয়ার বেশি দেওয়ার তাদের সুযোগ নেই। যা কিছু হয় সেখান থেকেই হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কৃষি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ধান-গমের মূল্য সরকারিভাবে যেমন নির্ধারিত হয় ভুট্টার বেলায় হয় না। কম্পানীগুলো তাদের ইচ্ছেমত ভুট্টার দাম নির্ধারণ করে। তাহলে কৃষক সঠিক মূল্য কিভাবে পাবে? বড় বড় কম্পানিগুলোর নিজেদের বেঁধে দেওয়া মূল্য অনুযায়ী সারা দেশে ভুট্টা ক্রয় বিক্রয় হয়। দাম কম হওয়ার এটা অন্যতম কারণ।’

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলমগীর আজাদ বলেন, এই উপজেলায় এবার সবচেয়ে বেশি ভুট্টার উৎপাদন হয়েছে। কৃষি বিভাগের সঠিক পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা পেয়ে কৃষকরা ভুট্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় কৃষকদের হতাশার অভিযোগ পেয়েছি। আসলে ফসলের মূল্য নির্ধারণে কৃষি বিভাগের করণীয় কিছুই নেই।’ অন্য ফসল চাষ করে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি!


সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

সর্বশেষ

এই বিভাগের সর্বশেষ

সর্বশেষ :