বদলগাছীর “নাগ ফজলি” স্বাদে-গুণে অনন্য ও মিষ্টতায় ভরা। নাগ ফজলি চাষে এখানকার মাটি উপযোগী হওয়ায় চাষিরা ঝুঁকছেন এ আম চাষে। উপজেলার গণ্ডি পেরিয়ে এ আমের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।
জানা যায়, ব্রিটিশ শাসন আমলে দেশে যখন জমিদার প্রথা ছিল তখন ভান্ডারপুর সতিশ চন্দ্র চৌধুরী পরিবারের জমিদারী ছিল। সতিশ চন্দ্রের ভাই ভূপেন, ভূপেস ও রমেশ চৌধুরী গংদের পুরোহিত ছিলো ব্রজমোহন। পুরোহিত ব্রজমোহন প্রতি বছর জমিদার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তির্থে যেত ভারতে।

ফিরে আসার সময় নানা ধরনের ফলজ বৃক্ষ চারা নিয়ে আসতেন ভারত থেকে। যেমন দেবী ভোগ, মালদা ফজলি, কাশি ফজলি এবং বোমবাই ফজলি। যে এলাকা থেকে চারা নিয়ে এসেছেন সেই এলাকার নাম দিয়ে নামকরন করেছেন পুরোহিত ব্রজমোহন যেমন মালদা ফজলি। তবে বজ্রমোহন মৃত্যুর আগে নাগ ফজলি আমের নামকরন করে যেতে পারেননি। ১৯২০ সালের আগ মুহুর্তে পুরোহিত ব্রজমোহন মারা যায় বলে জানা গেছে। তার মৃত্যুর পর জমিদার পরিবারের সদস্যরা বৈঠকের মাধ্যমে নাগ ফজলি আমের নামকরন করে। যেহেতু এই আমের নিচের অংশে নাকের মত লম্বা তাই নামকরন করা হয় নাক ফজলি। তার পর থেকে এটি নাগ ফজলি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
বদলগাছী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ বদলগাছী উপজেলায় প্রথম এ আমের চাষ শুরু করা হয়। এই জাতের আম দেখতে লম্বায় প্রায় ৪ ইঞ্চি আর চওড়ায় দেড় ইঞ্চি হয়ে থাকে। কাঁচা নাগ ফজলি আম মিষ্টি হওয়ায় শিশুরা ঝাল-লবণ ছাড়াই খেতে বেশ পছন্দ করে। এছাড়াও মিষ্টতার দিক দিয়ে এই জাতের আম ল্যাংড়া ও আম্রপালি আমের সমতুল্য। প্রত্যেকটি আমের ওজন ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়।
উপজেলার ডাঙ্গিসারা এলাকার নাগ ফজলি আম চাষি রাজু আহমেদ শ্যামল বলেন, তিনি ৫০ শতাংশ জমিতে ৩৫ হাজার টাকায় একটি আমের বাগানে খরচ করছেন বর্তমান গতবছর বাগান থেকে নামানো আম নওগাঁ জেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ১ হাজার ৬শ টাকা মণ দরে বিক্রি করছি।
এবছর ভালো লাভে বিক্রি করার আশাবাদী।
আম চাষি ও Mango sell Bazar অনলাইন প্ল্যার্টফর্মে নাগ ফজলি আম বিক্রেতা মোঃ তোজাম্মেল হক বলেন, ৭০ শতাংশ জমির উপরে নাগ ফজলি আমের বাগান রয়েছে। আমি ২০১৮ সাল থেকে নিজ বাগানের আম ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রয় করি। বেশ সুনামের সহিত সরাসরি বাগান থেকে কুরিয়ার মাধ্যমে সারাদেশে নাগ ফজলি আম বিক্রয় করি। এবছর বিক্রয় করার আশা করছি।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবাব ফারহান বলেন, এবছর উপজেলায় প্রায় ৫৭০ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। তার মধ্যে শুধু নাগ ফজলি আম চাষ হয়েছে ৬০ হেক্টর জমিতে। নাগ ফজলি আমের ফলনের লক্ষ্য মাত্রা ১০৫০ হেক্টর মেট্রিক টন। ইতি মধ্যে বদলগাছী উপজেলায় অনেক তরুন উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। তরুন উদ্যোক্তাগণ অনলাইন প্লাটফর্মে আম বিক্রি করে নিজেকে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলছেন।
তিনি আরও বলেন, নাগ ফজলি আম বদলগাছী উপজেলার একমাত্র ব্র্যান্ডিং আম। ক্যাপ পদ্ধতির মাধ্যমে গুণগতমান বজায় রেখে উৎপাদন ও বিপণন বৃদ্ধি করে বহির্বিশ্বে পরিচিতির জন্য উপজেলা কৃষি অফিস নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।







