ঢাকা, সোমবার, ১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

জবি শিক্ষার্থী রাজুর মৃত্যু ঘিরে রহস্য

দৈনিক স্লোগান, ক্যাম্পাস

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইংরেজি বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী রাজু আহমেদের মৃত্যু ঘিরে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

গত ২৯ এপ্রিল (শনিবার) ঘুমের মধ্যে হঠাৎ খিঁচুনি উঠলে অজ্ঞান অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে এই শিক্ষার্থীকে৷ তবে ঘটনার পাঁচ দিন পর পরিবারের পক্ষ থেকে পরিকল্পিতভাবে রাজুকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে৷

রাজুর পরিবারের দাবি, তাদের বাসার টিউবওয়েলের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে কেউ ঘুমের ওষুধ বা এমন জাতীয় কোনো রাসায়নিক মিশিয়ে দিয়েছিল। যার ফলে বিষক্রিয়ায় রাজুর মৃত্যু হয়েছে। একই টিউবওয়েলের পানি পান করে রাজুর পরিবারের বাকি সদস্যরাও বমি করে ও দুইদিন অতিরিক্ত ঘুমে মগ্ন ছিলেন।

রাজুর বাবা জানান, ঘটনার আগের দিন শুক্রবার সকাল ১০টা দিকে রাজু, রাজুর মা এবং বোন একসঙ্গে খাবার খায়। খাবার খাওয়ার পর রাজুর মা ও বোনের বমি হয়। আমি সকালের নাস্তা ও টিউবওয়েলের পানি খেয়ে মাঠে বীজ বুনতে যাই। এরপর বাসায় ফিরে মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে শরীর অসুস্থ অনুভব করি। পরে বাসায় ফিরে দেখি রাজু, রাজুর মা ও আমার ছোট মেয়ে ঘুমাচ্ছে। মাঠে কাজ থাকায় শরীর খারাপ লাগলেও আমি কাজে চলে যাই। এরপর সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে এসে দেখি, ওরা সবাই তখনো ঘুমে।

তিনি জানান, রাজুর ফুফু তার মা ও বোনকে ডাকাডাকি করলেও কোনো সাড়াশব্দ করেনি। রাত সাড়ে ৯টায় রাজুর ঢাকায় যাওয়ার ট্রেন থাকায় ৮টার দিকে তাকে ঘুম থেকে টেনে তুলে দেয় তার ফুফু। ততক্ষণে শরীর খারাপ থাকায় রাজুর বাবাও ঘুমিয়ে যান। পরে রাজুর ফুপু জামা-কাপড় গুছিয়ে দিয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় রান্না করা খাবার টিফিন বক্সে দিয়ে প্রতিবেশীর ভ্যানগাড়ি করে রাজুকে স্টেশনে পৌঁছে দেন। সেখানে রাজুর ক্লাসমেট সাদিয়ার সঙ্গে দেখা হয়।

রাজুর বাবার ভাষ্যমতে, ভ্যানচালক সাদিয়াকে রাজুকে একটু দেখে রাখতে এবং তার বাসায় সবাই যে অসুস্থ সে বিষয়টিও জানান। পরে ট্রেনে ওঠার আগেই রাজু তার সহপাঠীকে তার অসুস্থতার কারণ সন্দেহজনক বলে জানান। তার ভাষ্যমতে, তাদের টিউবওয়েলে হয়ত কেউ কিছু দিয়েছে এবং বাসার সবাই এই পানি খেয়ে ঘুমিয়েছে।

>>>  জবিতে মহাসমারোহে বাংলা বর্ষবরণ

রাজুর রুমমেট শরীয়তুল্লাহ জানান, শনিবার বিকেলে রাজু খাওয়া-দাওয়ার পর তিনি গায়ে হাত দিয়ে দেখেন রাজুর শরীর অনেক গরম। তখন কারণ জানতে চাইলে রাজু তাকে তাদের বাসায় এক আশ্চর্য্যজনক ঘটনা ঘটেছে এবং সবাই টানা ঘুমাচ্ছে বলে জানান।

শরীয়তুল্লাহর ভাষ্যমতে, পরে রাজু খেলা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েন। তারপর হঠাৎ খিঁচুনি উঠার মতো হয় এবং তিনি গিয়ে রাজুকে নাড়াচাড়া করে কোনো সাড়া না পেয়ে তার আরেক রুমমেট আরাফাতকে জানান। তারা রাজুর অন্য বন্ধুদের জানিয়ে তাকে আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে যান।

রাজুর সহপাঠী ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সিফাত বলেন, আজগর আলী হাসপাতালে নেয়া হলে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলা হয়। আমরা দেরি না করে অ্যাম্বুলেন্সে রাজুকে ঢাকা মেডিকেল নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি ওয়ারী থানায় যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাজিরুর রহমান জানান, ময়নাতদন্ত হয়েছে তবে এখনো আমরা রিপোর্ট হাতে পাইনি। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া গেলে স্থানীয় থানার মাধ্যমে পুলিশই মামলা করবে।

রাজুর বাবা আকতারুল ইসলাম বলেন, আমরা এখনো ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাইনি। রিপোর্ট পেলে আমরা আইনের আশ্রয় নিব। এছাড়া আপাতত আর করার কিছু নেই আমাদের।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

সর্বশেষ

এই বিভাগের সর্বশেষ

সর্বশেষ :