দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যে তারা একে অন্যের প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত। আঞ্চলিক রাজনীতিতে কেউ কাউকে ছাড় দিয়ে আসেনি। তাদের সম্পর্কের টানাপোড়েনের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র পরমাণু শক্তির দেশ ইসরায়েল। হঠাৎ চীনের মধ্যস্থতায় তাদের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। ফলে বইছে উষ্ণ সম্পর্কের সুবাতাস। এতেই দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে গেছে ইসরায়েল, বিশেষ করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ইসরায়েল এবং দেশটির নেতারা সব সময় ইরানকে হুমকি হিসেবে দাবি মনে করে আসছে।
সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে প্রায় এক বছর ধরেই আলোচনা চলছে। প্রথমে বাগদাদে ও সম্প্রতি চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে দুই দেশের কূটনীতিকদের বৈঠক হয়। আর এখানেই মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি এখন ঘটে। দুই দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি এমন একটা সময়ে হলো যখন ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ব্যাপক অস্থিতিশীলতা চলছে। এ অবস্থায় কিছুটা বেকায়দায় পড়েছে নেতানিয়াহু সরকার।
গত কয়েক বছর ধরে এই অঞ্চলে ইরানের বিরোধী জোট গঠনে ইসরায়েলের ভাবনা ও উদ্যোগের জন্য এই চুক্তিটি ছিলো বিরাট এক ধাক্কা। ইরানের এই কূটনৈতিক জয় ইসরায়েলের জন্য বেশ দুঃসংবাদ।
চুক্তির আওতায় প্রায় সাত বছর পর ইরান ও সৌদি আরব একে অন্যের দেশে আবার দূতাবাস খুলতে এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনস্থাপনে সম্মত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিতে এই ঘটনা নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রভাবশালী দুই দেশের হঠাৎ এই উদ্যোগ ইয়েমেন ও সিরিয়ার মতো দেশের মানুষের মনেও আশা জাগাচ্ছে।
তবে ঠিক উল্টো চিত্র বইছে ইসরায়েলে। দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার এই উদ্যোগ হতাশ করেছে তাদেরকে। নেতানিয়াহু সরকারের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় সাফল্য ২০২০ সালে আরব আমিরাত, বাহরাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যেরে চার দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ককে স্বাভাবিক করা। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সেটা করা সম্ভব হয়েছিল। এসব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আরেকটা বড় উদ্দেশ্য ছিল ইসরায়েলের। আর তা হচ্ছে, ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যে থেকে আরও বেশি বিচ্ছিন্ন করে তোলা।
তেহরানের দ্রুত পরমাণু কর্মসূচি বাস্তবায়ন, লেবাননের হেজবুল্লাহ আর গাজা উপত্যকার হামাসের হুমকি থেকে ইসরালেয়ের একমাত্র রক্ষাকর্তা তিনি—তখন নিজেকে এমনভাবে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছে নেতানিয়াহু। ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের এমনিতে একটা ছায়াযুদ্ধ চলছে। দু দেশই নানা সময়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে হামলা–পাল্টা হামলার অভিযোগ করে থাকে।






