ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খানের বিরুদ্ধে মিথ্যা আশ্বাস, অসদাচরণ ও ধর্ষণের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার প্রযোজক রহমত উল্লাহ। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পী সমিতি ও ক্যামেরাম্যান সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান প্রবাসী এ বাঙালি প্রযোজক।
বুধবার (১৫ মার্চ) বিকেলে প্রযোজক রহমত উল্লাহ সশরীরে এফডিসিতে হাজির হয়ে সংগঠনগুলোর নিকট অভিযোগ করেন।
নির্মিতব্য ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ (২০১৭) সিনেমায় অসদাচরণ, মিথ্যা আশ্বাস, ধর্ষণ (NSW Police reference no: E 62494959) এবং পেশাগত অবহেলার মাধ্যমে চলচ্চিত্রটির ক্ষতি সাধন, চলচ্চিত্রের শুটিং সম্পন্ন করতে অথবা লগ্নিকৃত অর্থ ফিরিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় নিরুপায় হয়ে অভিযোগ করেছেন বলে অভিযোগেপত্রে উল্লেখ করেছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাঙালি এই প্রযোজক।
তিনি অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, ২০১৭ সালে পূর্ব চুক্তি মোতাবেক অভিনেতা শাকিব খান ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ নামক সিনেমার কাজ করতে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন। আমি সেই চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রযোজক ছিলাম। তার মতো একজন বিখ্যাত অভিনেতাকে নিজের চলচ্চিত্রে অভিনয় করাতে পারব জেনে আনন্দিত হয়েছিলাম। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেলে ব্যবসা সফল হবে সেই বিশ্বাসও ছিল। ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ মুক্তি পেলে সেটি অস্ট্রেলিয়ায় অভিনীত প্রথম বাংলাদেশি চলচ্চিত্র হতো। আমার এবং এটার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের আশা ছিল সিনেমাটির হাত ধরে অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্কে নতুন একটি অধ্যায় রচনা করা হবে।
শাকিব খান একজন বিখ্যাত অভিনেতা। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের দর্শক চাহিদা অনেক রয়েছে। তাই আমাদের প্রত্যাশা ছিল তিনি আমাদের সাথে পেশাগত আচরণই করবেন। অথচ, আজ পর্যন্ত এই সিনেমার কাজ তিনি শেষ করেন নাই। ২০১৭ সালে অপারেশন অগ্নিপথের চিত্রায়নের সময় তিনি যে সকল ক্ষতিকর কাজ করেছিলেন তার সংক্ষিপ্ত তালিকা নিম্নে বর্ননা করা হল-
১. আমাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেওয়া সত্ত্বেও কোন রকমের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শুটিং বন্ধ করে দিতেন।
২. তার খাদ্যাভ্যাসজনিত চাহিদা ছিল এমন যে হঠাৎ করে তিনি অদ্ভুত রকমের খাবার খেতে চাইতেন; আর তাতেই পুরো শুটিং ইউনিট নিয়োজিত হতো তার পছন্দের খাবার খুঁজে বের করার। এতে করে শুটিংয়ের কাজে যেমন ব্যাঘাত হতো, তেমনি চলচ্চিত্রের নির্মাণব্যয় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে যাচ্ছিল।
৩. তিনি শুটিং করতে আসতেন নিজের ইচ্ছে মতো সময়ে। অনেক সময় এমন হতো যে অত্যন্ত ব্যয়বহুল সেট বানিয়ে আমরা তার জন্যে অপেক্ষা করতাম। তিনি হয়তো শেষ বেলায় দুই এক ঘণ্টা অভিনয় করার জন্য আসতেন। এভাবে শুটিং না করেও সকলের বেতন দিয়ে আমরা শুধু অপেক্ষা করতাম তিনি কখন আসবেন ।
৪. এখন বর্ণনা দিচ্ছি তার ব্যয়বহুল যৌনাচারের। তাকে নিয়মিত পতিতালয়ে নিয়ে যেতে হতো, আর তা না হলে তার হোটেল কক্ষে অস্ট্রেলিয়ান যৌনকর্মীদের নিয়ে আসতে হতো। এই ব্যাপারটি ছিল তার প্রতিদিনের রুটিন। কখনো কখনো একাধিকবার ও করা লাগতো। এই সকল যৌনকর্মীদের মোটা অংকের পারিশ্রমিক আমাদেরকেই দেয়া লাগতো।
৫. একসময় তিনি আমাদের একজন নারী সহ-প্রযোজককে কৌশলে ধর্ষণ করে বসলেন। ভুক্তভোগী এই নারীকে তিনি অত্যন্ত পৈশাচিকভাবেও নির্যাতন করলেন। গুরুতর জখমসহ রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। নির্যাতিতা তখন এই ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। (এনএসডাব্লিউ পুলিশ রেফারেন্স নং: ই ৬২৪৯৪৯৫৯) নির্যাতিতা নিজেও একজন বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত নারী ছিলেন। আমি সেই ফৌজদারি অভিযোগের সাক্ষী ছিলাম। এই ঘটনার পর তিনি এবং তার পরিবার সামাজিকভাবে যেই গ্লানি এবং কুৎসার স্বীকার হন, তা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে একটা পর্যায়ে তার নিজের এবং তার পরিবারের টিকে থাকাটাই অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। ওইদিন আমরা যখন সহকর্মীকে নিয়ে হাসপাতালে ব্যস্ত, শাকিব খান সেইদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে চুপিসারে চলে আসেন।
এরপর থেকে শাকিব খানের সঙ্গে বিভিন্ন সময় যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি আমরা। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে তিনি আবার অস্ট্রেলিয়া আসলে ধর্ষণের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। কিন্তু সামাজিক চাপে এবং আরও নিগ্রহের ভয়ে নির্যাতিতা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি না হওয়ায় সেই যাত্রায় ছাড়া পেয়ে যান তিনি।
উপরোক্ত ঘটনাগুলোর চাক্ষুষ সাক্ষী বলে এই প্রযোজক অভিযোগে উল্লেখ করেছেন। অভিযোগপত্রের একটি অনুলিপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
আশিকুর রহমান পরিচালিত ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমাটির শুটিং ২০১৭ সালে শুরু হলেও এখনো এর কাজ সম্পন্ন হয়নি। কারণ হিসেবে অভিযোগপত্রে শাকিব খানের অসহযোগিতার কথা উল্লেখ করেছে প্রযোজক।
সিনেমাটিতে জুটি বেঁধে অভিনয় করছিলেন শাকিব ও অভিনেত্রী শিবা আলী খান। এছাড়াও অভিনয় করেছেন মিশা সওদাগর, টাইগার রবি প্রমুখ সহ।






