ঢাকা, সোমবার, ১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ছাত্রলীগকে গুজবের জবাব দেয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগ তুলে এর জবাব ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘জবাব দেয়া বেশি কিছু না। তারা যেটা লিখবে, সেখানে তারা অতীতে কী করেছে, সেটা লিখে দিলেই হয়। এরপর আর তারা অপপ্রচার করবে না। এটা ছাত্রলীগ ভালোভাবেই করতে পারবে।’

আজ মঙ্গলবার (০৬ ডিসেম্বর)রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। আজকে সকালেও একটার উদ্বোধন করলাম। জাপান, চীন, ভারত, সৌদি আরব ও সিঙ্গাপুর বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। যারাই বিনিয়োগ করতে চায়, তাদের জায়গা ও নানা সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘একটা শ্রেণি গুজব ছড়াচ্ছে। তারই ফলশ্রুতিতে (কিছু লোক) ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এটা চোরের সঙ্গে সখ্য কি না জানি না। আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। প্রতিটি ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা আছে। অতএব গুজবে কান দেবেন না।’

এসময় খাদ্য ও বিদুৎ জ্বালানি ব্যবহারে আরও সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। পাশপাশি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া করে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করারও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রত্যেকেই মেধাবী। পড়াশোনা করে বিসিএসসহ সব পরীক্ষায় অংশ নেবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে অংশ নিয়ে মেধার স্বাক্ষর রাখতে হবে। শুধু রাজনীতি নয়, পাশাপাশি সব জায়গায় নিজেদের অবস্থান রাখতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যে কোনো মুহূর্তে অক্কা নিতে পারি। সেভাবে জনমত সৃষ্টি করতে হবে- যেন এদেশে আর কখনো খুনি ও স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় আসতে না পারে।’

‘ওরা মনে হয় ভূতের রূপ নিয়েই আসে’
বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘যারা দেশের স্বাধীনতাই চায়নি। তারা এদেশের উন্নয়ন কখনোই দেখবে না। মানুষ সামনের দিকে এগোয়, বিএনপি ক্ষমতায় এলে পেছনে যায়, ভূতের মত। ওরা মনে হয়- ভূতের রূপ নিয়েই আসে আমাদের দেশে।’

>>>  হুইপ সামশুলের পক্ষে ওসি, ইসিতে অভিযোগ

ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ সব সময় মানুষের পাশে থাকে। তাদের ধন্যবাদ জানাই। কোভিড ১৯; যখন বাবা-মা ভাই-বোন করোনায় মৃত্যুবরণ করলে লাশ ফেলে চলে যায় বা আক্রান্ত হলে ছেড়ে চলে যায়- তখন তাদের পাশে ছিল ছাত্রলীগ। তাদের চিকিৎসা দেয়া, খাদ্যের ব্যবস্থা করার কাজটি করেছে ছাত্রলীগের নেতারা।’

‘সিলেটে বন্যার দুঃসময়েও মানুষের পাশে ছিল এই ছাত্রলীগ। ওই দুর্গম এলাকায়ও তারা ছুটে গেছে, মানুষের পাশে থেকেছে। কৃষকের ধান কাটায়ও অগ্রবর্তী ছিল ছাত্রলীগ। সবার আগে তারা কৃষকের ধান কেটে দিয়েছে। পরে কৃষক লীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অনেকেই মাঠে নেমেছে। তবে ছাত্রলীগই আগে নেমেছে। সব সময় ছাত্রলীগ অগ্রসেনা।’

‘ভোট ‍চুরির কালচার জিয়ার’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষের ভোট চুরি করলে মানুষ ছেড়ে দেয় না, এটা খালেদা জিয়ার মনে থাকা উচিত। আমাদের অপবাদ দেয়া হয়- ভোট চুরির। আমরা ভোট চুরি করতে যাবো কেন? জনগণ স্বতঃফূর্তভাবে আমাদের ভোট দেয়। ভোটচুরি, ভোট কারচুপির এই কালচার কে দিয়েছে? জিয়াউর রহমান। হ্যাঁ, না ভোট দিয়ে জনগণের ভোট ছিনিয়ে নিয়েছে। ‘না’র ব্যালট পাওয়া যায়নি। সব ‘হ্যাঁ’ ভোট ছিল।’

‘তারা বুদ্ধিজীবী না, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীজীবী’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষও জিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে কথা বলেছিল। এখনো অনেকে আছেন; খালেদা জিয়া-তারেক জিয়ার সঙ্গে। মানিলন্ডারিং, অস্ত্রকারবারি ও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার আসামি তারেক। খালেদা এতিমের টাকার আত্মসাতের মামলার আসামি। এই অপরাধীদের সঙ্গে এখন অনেক জ্ঞানী-গুণীও গণতন্ত্রের কথা বলে। তারা বুদ্ধিজীবী না, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীজীবী। এরা খালেদা-তারেকের সঙ্গে গিয়ে মিলেছে।’

১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের স্মৃতিচারণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘১৫ আগস্ট আমরা হারিয়েছি আপনজন। বাংলাদেশের হারিয়েছিল তার উন্নয়নের সব সম্ভাবনা। আর খুনিদের দেয়া হয়েছিল মর্যাদা, বানিয়েছিল দেশের প্রতিনিধি। তাদের যোগ্যতা কী; জাতির পিতার খুনি।’

>>>  টাঙ্গাইল-১আসনে টানা ৫ বার নৌকায় মনেনয়ন পেলেন ড. আব্দুররাজ্জাক

বিএনপির কাজই হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা
বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে খালেদা জিয়ার পেটোয়া বাহিনী সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে দেয়। ঢাবিতে রাতের অন্ধকারে ভিসিকে সরিয়ে নতুন আরেকজনকে বসিয়ে দিয়ে ভিসির পদটাও দখল করে নেয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই শিক্ষকসহ বহু নেতা-কর্মী হত্যা করে। তাদের অত্যাচার-নির্যাতনে সারা দেশ ছিল নির্যাতিত। শুধু ক্ষমতায় থাকাকালেই নয়, ক্ষমতার বাইরে থেকেও তাদের অগ্নিসন্ত্রাসের কথা সবার জানা। ২০১৩-১৪ সালে প্রায় তিন হাজার মানুষকে দগ্ধ করে তারা। বাস-লঞ্চ-রেল কোনো কিছুই তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপির কাজই হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা। খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আওয়ামী লীগকে শিক্ষা দিতে ছাত্রদলই যথেষ্ট। এর প্রতিবাদে আমি ছাত্রলীগের হাতে বই-খাতা-কলম তুলে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম- শিক্ষা শুধু নিজেরাই গ্রহণ করবে না, গ্রামে গিয়ে নিরক্ষর মানুষকে শিক্ষা দেবে। তারা সেটিই করেছি। আমাকে রিপোর্টও দিয়েছে। আমাদের পেটোয়া বাহিনী লাগে না।’

ছাত্রলীগের বিদায়ী কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

অনুষ্ঠানে কাদের জানান, সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে। সেখানে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে আগ্রহীদের নাম প্রস্তাব করতে বলা হয়েছে। আগামী ২৪ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আগেই এই শাখার কমিটি ঘোষণা করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

সর্বশেষ

এই বিভাগের সর্বশেষ

সর্বশেষ :